অর্থনীতি

মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি শুরু, দেশের শুল্ক কর্মকর্তারা ঢাকায় সমবেত

২০২৫ সালের ২৮ জুন, ঢাকা থেকে বিশেষ প্রতিবেদনে জানা যায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও রাজস্ব খাতের সংস্কারের দাবিতে আজ ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি শুরু করেছে আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শুল্ক ও কর বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাজধানীর এনবিআর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন।

এই কর্মসূচির মাধ্যমে তারা এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ এবং সরকারের রাজস্ব সংস্কার নীতিতে সংস্কারমূলক পরিবর্তন দাবি করছেন। কর্মসূচির ফলে এনবিআর ও দেশের শুল্ক ও কর কার্যালয়গুলিতে ব্যাপক শাটডাউন চলছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এনবিআর ভবন ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা

এনবিআর ভবনের প্রধান ফটক বন্ধ করে সেখানে বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব এবং কোস্টগার্ডের সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে যেন কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা বা অস্থিতিশীলতা না সৃষ্টি হয়।

আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, এনবিআর চেয়ারম্যান সংস্কারের দাবি উপেক্ষা করছেন এবং তাদের বিরুদ্ধ মিথ্যাচার চালাচ্ছেন। এজন্যই শুল্ক ও কর অফিসগুলোতে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি চলছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আলোচনায় তিন পক্ষের সমঝোতার চেষ্টা

গত বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয় আয়োজিত একটি বৈঠকে এনবিআর সংস্কার নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট পক্ষের মধ্যে চলমান অচলাবস্থা নিরসনের জন্য আলোচনা হয়। বৈঠকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়:

১. এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ঘোষিত কর্মসূচি প্রত্যাহার করার নির্দেশনা দেওয়া হবে।

২. কর্মকর্তাদের বদলি আদেশ পুনর্বিবেচনা করা হবে।

৩. আগামী মঙ্গলবার তিন পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান খোঁজা হবে।

সরকারের পক্ষ থেকে শুল্ক ও কর বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ দপ্তরে ফিরে কাজ করার আহ্বান জানানো হলেও তা মেনে নেয়া হয়নি।

কর্মসূচির পেছনের কারণ ও দাবি

এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বর্তমান এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ ছাড়া কোনো সংস্কার সম্ভব নয়। আমরা সার্বিক সংস্কারের পক্ষে আছি, তবে তা হবে সব পক্ষের মতামতের সম্মিলিত ভিত্তিতে। নিপীড়নমূলক বদলি আদেশ বাতিল করতে হবে।’

২০১৫ সালের ১২ মে এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ নামে দুটি নতুন বিভাগ গঠন করা হয়। এর ফলে শুল্ক ও কর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তারা এনবিআর সংস্কারের নামে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন, যা সাম্প্রতিক ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচির মাধ্যমে পুনরায় জোরদার হয়েছে।

দেশের অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক কার্যক্রমে প্রভাব

শুল্ক ও কর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এই আন্দোলন দেশের আমদানি-রপ্তানি, ব্যবসা-বাণিজ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অনেক ব্যবসায়ী, আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটার শঙ্কায় পড়েছেন।

অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সকল পক্ষের মধ্যে সমঝোতা সৃষ্টি করার মাধ্যমে দ্রুত এই সংকট উত্তরণের চেষ্টা চলছে।

কর্মকর্তাদের অবস্থান এবং কর্মসূচির বিস্তার

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার শুল্ক-কর কার্যালয়গুলোতে লাগাতার শাটডাউন কর্মসূচি চলছে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সকালে রাজধানীতে অবস্থান নিয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

তারা প্ল্যাকার্ড হাতে দাবি জানাচ্ছেন, যেখানে এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ, বদলি আদেশ বাতিল, এবং সকল পক্ষের অংশগ্রহণে সংস্কার বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এনবিআর ভবনের সাম্প্রতিক অবস্থা

বর্তমানে এনবিআর ভবনের আশপাশে অতি-সতর্ক অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কেউ বাইরে যেতে বা ভিতরে প্রবেশ করতে পারছেন না বলে জানা গেছে। নিরাপত্তার কারণে ভবনের প্রধান ফটক বন্ধ রাখা হয়েছে।

পরবর্তী পরিকল্পনা ও সম্ভাব্য সমাধান

অর্থ মন্ত্রণালয় আগামী মঙ্গলবার তিন পক্ষের মধ্যে আলোচনা আয়োজন করেছে। এতে এনবিআর কর্তৃপক্ষ, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ এবং সরকারের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করবেন। আলোচনা থেকে সমস্যার সমাধান ও কর্মসূচি প্রত্যাহারের সম্ভাবনা রয়েছে।

বর্তমান রাজস্ব খাতের সংকট ও এনবিআর সংস্কারের দাবি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সরকারের রাজস্ব সংগ্রহের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সকল পক্ষের মধ্যে ইতিবাচক সমঝোতা ও দ্রুত সমাধান না হলে দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।

মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি ও এনবিআরের সংস্কার আন্দোলন ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও প্রশাসনিক দক্ষতার উপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। তাই সবাই আশা করছে দ্রুত শান্তিপূর্ণ ও কার্যকর সমাধান গড়ে ওঠবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button