বিশ্ব

নতুন যুদ্ধবিরতি সম্ভব এক সপ্তাহের মধ্যে: ট্রাম্পের আশাবাদী বক্তব্য

ট্রাম্প বলেন, “আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, গাজায় এখন একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি খুবই কাছাকাছি।” তিনি আরও বলেন, “যাঁরা এই সংঘাত বন্ধে কাজ করছেন, তাদের সঙ্গে আমার সাম্প্রতিক সময়ের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ হয়েছে।”

যুদ্ধবিরতি ও বন্দি মুক্তির বিষয়ে হামাসের বক্তব্য

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস জানিয়েছে, যেকোনো চুক্তির অধীনে গাজায় বন্দি থাকা অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দিতে তারা প্রস্তুত। তবে একই সঙ্গে তারা অস্ত্রসমর্পণের জন্য এখনও অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে।

ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যুদ্ধ তখনই শেষ হবে যখন হামাস সম্পূর্ণ নিরস্ত্র ও বিলুপ্ত হবে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া গাজা যুদ্ধ

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলে সশস্ত্র হামলা চালায়। ইসরায়েলের সরকারি তথ্যে বলা হয়, হামলায় প্রায় ১২০০ মানুষ নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে বন্দি করে গাজার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকে শুরু হয় দীর্ঘস্থায়ী গাজা যুদ্ধ।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের বায়ুসেনা ও স্থল বাহিনীর আক্রমণে গাজায় ৫৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই হামলা গাজায় ভয়াবহ খাদ্য ও ওষুধের সংকট সৃষ্টি করেছে এবং লাখ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে।

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত ও যুদ্ধবিরতির প্রভাব

গত কয়েক মাসে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে টানা ১২ দিনের সশস্ত্র সংঘর্ষ চলার পর চলতি সপ্তাহের শুরুতে তাদের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়েছে। এই পরিস্থিতি গাজা সংঘাতের সমাধানে নতুন আগ্রহ তৈরি করেছে।

ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমাবর্ষণের পর থেকে গাজা ও মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রতিষ্ঠায় কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করেছে।

আন্তর্জাতিক আদালতে অভিযোগ ও কূটনৈতিক চাপ

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তোলা হয়েছে। যদিও ইসরায়েল এসব অভিযোগ কঠোরভাবে অস্বীকার করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও গাজার সাম্প্রতিক পরিস্থিতিকে গভীর উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে।

ট্রাম্পের কথায় রাজনৈতিক দোলাচল

ট্রাম্প এমন এক সময়ে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করলেন, যখন সংঘাতে জড়িত কোনো পক্ষের মধ্যে তাৎক্ষণিক আলোচনা বা কোনও শান্তিচুক্তির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

গত জানুয়ারি মাসে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উদ্যোগে গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি মুক্তির একটি চুক্তি হয়েছিল। ১৯ জানুয়ারি সেই চুক্তি কার্যকর হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি এবং দ্রুত ভেঙে পড়েছে। ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের ঠিক আগের দিন ওই চুক্তি কার্যকর হয়েছিল।

ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইসরায়েল-ইরান সংঘাত চলাকালীন তিনি প্রায় প্রতিদিনই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন।

নেতানিয়াহুর শান্তি প্রতিশ্রুতি

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বৃহস্পতিবার বলেন, “ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে সৃষ্ট পরিস্থিতি থেকে শান্তি প্রতিষ্ঠার যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, আমরা সেগুলো একেবারেই নষ্ট করব না।” তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।

সাম্প্রতিক কূটনৈতিক অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

গাজার বিষয় নিয়ে ইসরায়েলের কৌশলগত পরিকল্পনাবিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমার আগামী সোমবার থেকে ওয়াশিংটন সফরে যাচ্ছেন। সেখানে তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং গাজা, ইরান ও নেতানিয়াহুর হোয়াইট হাউস সফর নিয়ে আলোচনা করবেন।

গাজা সংকট: মানবিক দিক

গাজায় সংঘাতের কারণে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার পাশাপাশি বিস্তৃত মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। খাদ্য ও ওষুধের অভাবে সাধারণ মানুষের জীবন কঠিন হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো অবিলম্বে সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে।

বিশ্বজুড়ে সমর্থন ও ভবিষ্যতের পথ

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সংঘাত বন্ধ করে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ এবং মধ্যস্থতাকারীদের ভূমিকা এখন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন শক্তি সংঘাত মিটিয়ে শান্তি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

সারসংক্ষেপ

  • ডোনাল্ড ট্রাম্প এক সপ্তাহের মধ্যে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি সম্ভব বলে আশাবাদী।
  • হামাস বন্দিদের মুক্তির প্রস্তুতি জানালেও অস্ত্রসমর্পণ অস্বীকার করেছে।
  • ইসরায়েল হামাসকে সম্পূর্ণ নিরস্ত্র ও বিলুপ্ত না করলে যুদ্ধ বন্ধ হবে না বলে বলেছে।
  • গাজায় ৫৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত, ভয়াবহ মানবিক সংকট চলছে।
  • ইরান-ইসরায়েল টানা ১২ দিনের সংঘর্ষ শেষে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়েছে।
  • আন্তর্জাতিক আদালতে যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ চলছে।
  • নেতানিয়াহু ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের পর শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা নষ্ট করবে না।
  • কৌশলগত আলোচনা ও বৈঠকের মাধ্যমে গাজা সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল।

সংবাদটির আরও বিস্তারিত ও আপডেটের জন্য সিঙ্গলবিডি.কম নিয়মিত ভিজিট করুন।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button