বাংলাদেশ

ফরিদপুর রেলওয়ে বস্তিতে মাদক কারবার ও সন্ত্রাসী চক্রে বড় ধাক্কা

ফরিদপুর সদর উপজেলার গুহ লক্ষ্মীপুর এলাকার রেলওয়ে বস্তিতে দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলছিল। এই মাদক সন্ত্রাসী চক্রের মূল কেন্দ্রে ছিলেন এক নারী, যিনি এলাকার মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণে ছিলেন। তাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই মাদক সাম্রাজ্ঞী শিলপির দাপটে এলাকায় মাদক বিক্রি, অস্ত্র পাচার ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছিল।

তবে সম্প্রতি সেনাবাহিনী ও ফরিদপুর জেলা পুলিশের যৌথ বিশেষ অভিযানে এই মাদক চক্রের শক্তিশালী কাণ্ডারী শিলপি ও তার সহযোগীসহ মোট ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবসে বিশেষ অভিযান

ফরিদপুর রেলওয়ে বস্তিতে মাদক সম্রাজ্ঞী শিলপির চক্র ধ্বংস,

ফরিদপুর রেলওয়ে বস্তিতে মাদক সম্রাজ্ঞী শিলপির চক্র ধ্বংস,

২৬ জুন রাত ৮টার দিকে আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবস উপলক্ষে ফরিদপুর আর্মি ক্যাম্পের ১৫ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন ও জেলা পুলিশের যৌথ উদ্যোগে গুহ লক্ষ্মীপুর রেলওয়ে বস্তি এলাকায় এই অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে প্রথমে মাদক বিক্রির সময় ৭ জনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়। এরপর এলাকার বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালিয়ে শিলপির বাড়িতে অভিযান চালানো হয় এবং তাকে ও আরও আটজনকে আটক করা হয়।

বিপুল পরিমাণ মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার

অভিযানে উদ্ধারকৃত মাদক ও অস্ত্রের পরিমাণ চরম উদ্বেগজনক। সেনাবাহিনীর সূত্রে জানা গেছে,

  • ৪৫.৫ কেজি গাঁজা
  • ৩৩৭ টি ইয়াবা ট্যাবলেট
  • ২১১ টি হেরোইনের প্যাকেট
  • ৬১ টি দেশীয় অস্ত্র
  • ২ বোতল বিদেশি মদ
  • ৯ টি ফিচার ফোন ও ১০ টি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।

এই বিপুল পরিমাণ মাদক ও অস্ত্রের মাধ্যমে ওই চক্র দীর্ঘদিন ধরে ফরিদপুর শহর ও আশপাশের গ্রামাঞ্চলে মাদক ব্যবসার রাজত্ব চালাচ্ছিল।

মাদক ও সন্ত্রাস বিরোধী জিরো টলারেন্স নীতি

সেনাবাহিনী ও পুলিশের সূত্র জানায়, অবৈধ অস্ত্র, মাদক, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির আওতায় এই অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এর মাধ্যমে ফরিদপুরের শান্তি ও নিরাপত্তা পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে।

আটককৃত ১৫ জনকে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় হস্তান্তর করে মাদক ও সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

ফরিদপুরে মাদক ও সন্ত্রাস: একটি দীর্ঘদিনের সমস্যা

ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় মাদক বিক্রি, সন্ত্রাসী গ্যাং, চাঁদাবাজি ও জোরপূর্বক দখলদারিত্ব বেশ কয়েক বছর ধরেই সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ করে তুলেছে। বিশেষ করে রেলওয়ে বস্তি এলাকাটি মাদক ব্যবসায়ীদের জন্য এক জায়গায় পরিণত হয়েছিল।

অতিরিক্ত কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, মাদক চক্রগুলো প্রায়শই সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও স্থানীয় অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকে, যা এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে। তাই এই ধরনের অভিযান চালানো রাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মাদক নির্মূলে সাম্প্রতিক অন্যান্য উদ্যোগ

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ সরকার এবং সশস্ত্র বাহিনী মাদক নির্মূলের জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। ফরিদপুরে চলমান মাদক চক্র ধ্বংসের এই উদ্যোগ তারই অংশ।

সরকারের তথ্য অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন জেলায় সাম্প্রতিক সময়ে অনেক বড় মাদক চক্র ধ্বংস হয়েছে, যার মধ্যে ফরিদপুরের এই অভিযান বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে।

ফরিদপুরবাসীর প্রতিক্রিয়া

স্থানীয় বাসিন্দারা এই অভিযানের ব্যাপারে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা আশা প্রকাশ করেছেন, এ ধরনের অভিযান চালিয়ে এলাকার মাদক ও সন্ত্রাস মুক্ত করা হবে এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে

ফরিদপুর রেলওয়ে বস্তিতে মাদক সম্রাজ্ঞী শিলপির চক্রের এই ধ্বংস দেশব্যাপী মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর এক সফল অভিযান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আশা করা যায়, এই ধরনের অভিযান আরও জোরদার হয়ে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

কীভাবে মাদক ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে জনগণের অংশগ্রহণ জরুরি

এই ধরনের অপরাধ নির্মূলের জন্য শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নয়, স্থানীয় জনগণকেও জড়িত থাকতে হবে। সচেতনতা বৃদ্ধি, অভিযোগ জানানো ও সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া মাদক চক্রের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ কঠিন।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button