অর্থনীতি

বিএটিবিসি ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে বাড়ছে সিগারেট উৎপাদন

ঢাকা, ২৭ জুন ২০২৫ – প্রায় ছয় দশকের ইতিহাসের পর ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি (বিএটিবিসি) তাদের কারখানা ঢাকা থেকে সরিয়ে সাভারের আশুলিয়ায় নতুন উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করতে যাচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত দেশের সিগারেট উৎপাদন শিল্পে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। বিএটিবিসি মহাখালীর নিউ ডিওএইচএস এলাকা থেকে তাদের কারখানা স্থানান্তর করে আশুলিয়ার ধামসোনার বলিভদ্র বাজারে নিয়ে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি, কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আধুনিকায়নের জন্য কোম্পানি ২৯৭ কোটি টাকার বিনিয়োগ করবে বলে জানিয়েছে।

আশুলিয়ায় নতুন কারখানা: উৎপাদনে নতুন দিগন্ত

আগামী ১ জুলাই থেকে আশুলিয়ার কারখানাটি বিএটিবিসির প্রধান উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে কার্যক্রম শুরু করবে। এর আগে আশুলিয়ার এই কারখানায় সীমিত পরিসরে রপ্তানিমুখী সিগারেট উৎপাদন হতো, কিন্তু এখন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা মেটাতে এখানে সর্বোচ্চ উৎপাদন করা হবে। নতুন বিনিয়োগের ফলে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে দেশীয় বাজারে আরও বেশি সিগারেট সরবরাহ সম্ভব হবে।

৩০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ: কারখানার আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণ

বিএটিবিসি পরিচালনা পর্ষদের এক সভায় ২৯৭ কোটি টাকা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এই অর্থ মূলত কারখানার উৎপাদন লাইন ও আধুনিক প্রযুক্তি আনার জন্য ব্যবহার করা হবে। কোম্পানি নিজস্ব অর্থায়ন এবং ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে এই বিনিয়োগ বাস্তবায়ন করবে। ১৯৬৫ সালে মহাখালীর ডিওএইচএস এলাকায় স্থাপিত এই কারখানা প্রায় ৬০ বছর ধরে দেশের সিগারেট শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

মহাখালী থেকে আশুলিয়া: কারখানা স্থানান্তরের কারণ ও প্রভাব

বিএটিবিসির মহাখালীর কারখানা ইজারায় ছিল এবং আবাসিক এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় পরিবেশবাদী ও স্থানীয় জনগণের চাপে কারখানা সরানোর দাবি দীর্ঘদিন থেকে উঠছিল। কোম্পানি ৩০ বছরের জন্য ইজারা নবায়নের জন্য আবেদন করেছিল, কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা মঞ্জুর করেনি। এরপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২৮ মে বিএটিবিসির আবেদন খারিজ করার পর কোম্পানিটি তাদের কারখানা স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে।

করপোরেট কার্যালয়ও স্থানান্তরিত

শুধুমাত্র উৎপাদন কেন্দ্রই নয়, কোম্পানির করপোরেট অফিসও মহাখালী থেকে আশুলিয়ার ধামসোনায় স্থানান্তর করা হচ্ছে। ১ জুলাই থেকে নতুন ঠিকানায় অফিস কার্যক্রম শুরু হবে। এটি বিএটিবিসির জন্য এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

শেয়ারবাজারে বিএটিবিসির অবস্থান

বিএটিবিসি দেশের শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি। ১৯৭৭ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত এই কোম্পানি দেশের শেয়ারবাজারে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান। ২০২৪ সালে কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের ৩০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ প্রদান করেছিল যা শেয়ারহোল্ডারদের জন্য অত্যন্ত লাভজনক ছিল। এর পাশাপাশি, ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটি ৩১৮ কোটি টাকার নিট মুনাফা করেছে এবং ব্যবসার পরিমাণ ছিল প্রায় ৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

বিএটিবিসির সিগারেট শিল্পে অবদান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

বিএটিবিসি বাংলাদেশের সিগারেট শিল্পে দীর্ঘদিন ধরে একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে কোম্পানিটি। আশুলিয়ায় নতুন কারখানা ও ৩০০ কোটি টাকার বিনিয়োগের মাধ্যমে তারা উৎপাদন বৃদ্ধি ও আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করার পরিকল্পনা করছে। এই উদ্যোগ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়াবে।

পরিবেশ ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা

বিএটিবিসি পরিবেশগত ও সামাজিক দায়বদ্ধতাকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। কারখানা স্থানান্তরের পেছনে মূল কারণ ছিল পরিবেশ ও আবাসিক এলাকার শান্তি বজায় রাখা। কোম্পানিটি আধুনিক ও কম দূষণকারী প্রযুক্তি ব্যবহার করে সিগারেট উৎপাদন নিশ্চিত করার পাশাপাশি, কর্মচারীদের জন্য উন্নত কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করছে।

উপসংহার

বাংলাদেশের সিগারেট উৎপাদন খাতে বিএটিবিসির এই বিনিয়োগ ও কারখানা স্থানান্তর একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। দেশের অর্থনীতিতে নতুন সংযোজন হবে, উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারেও বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী হবে। আগামী দিনগুলোতে আশা করা যায়, বিএটিবিসি তার আধুনিক কারখানা থেকে উচ্চমানের সিগারেট উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button