বিশ্ব

ইমরান খানকে সরাতে ‘মাইনাস ওয়ান ফর্মুলা’

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলটির প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানকে রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য একটি সমন্বিত এবং গোপন ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পিটিআইয়ের নেতৃত্বাধীন বিভিন্ন মহল এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সরব, এবং তারা বলছেন, তারা এই পরিস্থিতি মেনে নেবেন না।

গত বুধবার, পিটিআই-এর পক্ষ থেকে এই অভিযোগটি প্রকাশ করা হয়, যা পাকিস্তানের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ‘মাইনাস ইমরান’ নামে পরিচিত একটি ফর্মুলার পুনরুজ্জীবনের গুঞ্জন সৃষ্টি করেছে। এর অর্থ হল, ইমরান খানের উপস্থিতি বা প্রভাবকে পুরোপুরি কমিয়ে দিয়ে রাজনৈতিকভাবে দল ও দেশের রাজনীতিতে তার অবদানকে অবমূল্যায়ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

রাজনৈতিক উত্তেজনা ও ইমরান খানের ভবিষ্যৎ

পাকিস্তানের রাজনীতিতে ইমরান খানের ভবিষ্যৎ নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে এবং পিটিআই দলের অভ্যন্তরে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, এই ‘মাইনাস ওয়ান ফর্মুলা’ মূলত ইমরানকে সরিয়ে দিয়ে তার রাজনৈতিক প্রভাব কমানোর একটি পরিকল্পিত কৌশল।

খাইবার পাখতুনখাওয়ার মুখ্যমন্ত্রী ও পিটিআই নেতা আলী আমিন গান্দাপুর সরাসরি এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। তিনি প্রদেশে গভর্নর শাসন জোরদার করার মাধ্যমে দলের প্রধান সমর্থক তথা ইমরান খানের বিরুদ্ধে রাজনীতিতে চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা দেখেছেন, যা দল ও দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করার লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে।

পিএমএল-এন নেতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ

পিটিআই’র মুখপাত্র শেখ ওয়াক্কাস আকরাম পিএমএল-এন নেতা আজমা বুখারি ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে দল ভাঙাতে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছেন। তাঁর ভাষায়, এই ষড়যন্ত্র পাকিস্তানের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ক্ষুণ্ন করার একটি পরিকল্পিত দিক।

অন্যদিকে, আজমা বুখারি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ইমরান খান নিজেই তাঁর দলের মধ্যে ও রাজনীতিতে একঘরে হয়ে পড়েছেন। বুখারি উল্লেখ করেন, “যিনি নওয়াজ শরিফকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, তিনি নিজেই এখন রাজনীতিতে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন।”

‘মাইনাস ওয়ান ফর্মুলা’ কি এবং কেন?

‘মাইনাস ওয়ান ফর্মুলা’ মূলত একটি রাজনৈতিক কৌশল, যার লক্ষ্য একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে সরিয়ে দিয়ে তার প্রভাব কমানো। পাকিস্তানে এটি একসময় প্রয়োগ করা হয়েছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক শক্তি সংকুচিত করার জন্য। এখন আবারো এই কৌশলটি ফিরে এসেছে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইমরান খানের রাজনৈতিক শক্তি ও জনপ্রিয়তা যে কারণে বর্তমান শাসকগোষ্ঠী এবং বিরোধী দলগুলো তাকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে, কারণ তিনি এখনও পাকিস্তানের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রভাবশালী এক নেতা।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি

  • গভর্নর শাসন: কিছু প্রদেশে গভর্নর শাসন জোরদার করা হয়েছে, যা মূলত রাজনীতিতে ইমরান খানের প্রভাব কমানোর একটি কৌশল হিসেবে ধরা হচ্ছে।
  • দলীয় দ্বন্দ্ব: পিটিআই’র অভ্যন্তরে ভাঙন এবং মতবিরোধ বেড়েই চলছে, বিশেষ করে কিছু নেতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে।
  • জনমতের ধারা: সাধারণ জনগণের মধ্যে ইমরান খানের প্রতি সমর্থন এখনও শক্তিশালী, যা তাকে সরিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টাকে আরও কঠিন করে তুলেছে।

পিটিআই ও ইমরান খানের রাজনৈতিক যাত্রা

ইমরান খান ২০১৮ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন, এবং তাঁর নেতৃত্বে পিটিআই দল দেশজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। তিনি দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে জনমত অর্জন করেছিলেন, কিন্তু শাসনকালীন সময়ে নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হন। ২০২৩ সালে সেনাবাহিনী ও রাজনৈতিক বিরোধীদের সমন্বয়ে তাঁর সরকার পতনের পর থেকে ইমরানকে রাজনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা চলছে।

ইমরান খানের সাফল্য ও চ্যালেঞ্জ

  • সাফল্য: দুর্নীতি নির্মূল, শিক্ষার উন্নয়ন, স্বাস্থ্যখাতের উন্নতি এবং বৈদেশিক নীতিতে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি।
  • চ্যালেঞ্জ: রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের চাপ, সেনাবাহিনী ও আইনের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন, অর্থনৈতিক সংকট এবং দলীয় অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ।

ভবিষ্যৎ কৌশল ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণ

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইমরান খান যদি ‘মাইনাস ওয়ান ফর্মুলা’ মোকাবেলা করতে পারেন, তাহলে তিনি আবার পাকিস্তানের রাজনীতিতে শক্তিশালী অবস্থান নিতে পারবেন। পিটিআই দলের ঐক্য ও সাধারণ মানুষের সমর্থন তার জন্য বড় শক্তি হবে।

পাকিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ইমরান খানকে সরানোর জন্য ‘মাইনাস ওয়ান ফর্মুলা’ প্রয়োগ হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এটি কেবল একটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র নয়, বরং দেশের গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় পরীক্ষা। পিটিআই নেতারা ও সমর্থকরা দৃঢ়ভাবে এ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ রাজনীতি কী রূপ নেয়, তা আগামী সময়ের বড় চ্যালেঞ্জ।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button