বানিজ্য

নগদে নতুন ব্যবস্থাপনা বোর্ড, যুক্ত হলেন আরও তিনজন 

বাংলাদেশের অন্যতম মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পর্ষদে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় সম্প্রতি এ পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। ছয় সদস্যবিশিষ্ট পুরনো বোর্ডকে সম্প্রসারিত করে আট সদস্যের নতুন বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এতে নতুন করে তিনজন বিশিষ্ট পেশাজীবীকে যুক্ত করা হয়েছে, পাশাপাশি একজন পুরনো সদস্যকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

নতুন এই সিদ্ধান্তটি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গত ২৩ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে জারি করা হয়। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) খাতে নগদের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে পর্ষদ পুনর্গঠনকে অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।

পুনর্গঠিত বোর্ডে নতুন মুখ

নতুনভাবে গঠিত বোর্ডে যারা যুক্ত হয়েছেন, তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে সুপরিচিত এবং পেশাগতভাবে প্রতিষ্ঠিত। নতুন তিন সদস্য হলেন—

  1. ড. এম. নিয়াজ আসাদুল্লাহ – নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির অনারারি প্রফেসরিয়াল ফেলো এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অর্থনীতিবিদ। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শিক্ষানীতি ও উন্নয়ন অর্থনীতি নিয়ে তাঁর কাজ বিশেষভাবে সমাদৃত। নগদের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তাঁর যুক্ত হওয়া বোর্ডের গবেষণা ও পরিকল্পনায় নতুন দিগন্তের সূচনা করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
  2. ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন – বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্র্যাকটিসিং আইনজীবী। এমএফএস সেক্টরে জটিল আইনগত ও বিধিবদ্ধ কাঠামো নিয়ে যিনি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। নগদের পরিচালনায় সুশাসন ও আইনানুগ কার্যক্রমে তাঁর অভিজ্ঞতা তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
  3. অর্থবিভাগের যুগ্মসচিব (ঋণ ব্যবস্থাপনা) – পদাধিকারবলে বোর্ডের সদস্য হিসেবে যুক্ত হয়েছেন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই কর্মকর্তা। সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও ব্যাংকিং খাতের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমে তাঁর অবদান গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

একজন সদস্যকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে

পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে আগের বোর্ডের সদস্য খন্দকার সাখাওয়াত আলীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তিনি ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি)-এর ভিজিটিং রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করছিলেন। তাঁর অপসারণের কারণ সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংক বা নগদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। তবে অভ্যন্তরীণ নীতিগত বিবেচনা ও কর্মদক্ষতা মূল্যায়নের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে ধারনা করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।

চেয়ারম্যান ও প্রশাসকের দায়িত্ব অপরিবর্তিত

যদিও বোর্ড সদস্যদের কিছুটা রদবদল হয়েছে, তবে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও প্রশাসকের দায়িত্বে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।

  • চেয়ারম্যান কায়সার আহমেদ চৌধুরী পূর্বের ন্যায় তাঁর দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখছেন। তিনি মিলেনিয়াম বাংলাদেশ লিমিটেডের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং ব্যাংকিং ও কর্পোরেট সেক্টরে দীর্ঘ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন পেশাজীবী। তাঁর নেতৃত্বেই নগদ বিগত বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।
  • প্রশাসক মো. মোতাছিম বিল্লাহ এখনও নগদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের পরিচালক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। নগদের প্রশাসনিক কাঠামো সুসংগঠিত রাখতে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দিকনির্দেশনা বাস্তবায়নে তাঁর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত।

এমএফএস খাত ও নগদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

বর্তমানে বাংলাদেশে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস বা এমএফএস খাত একটি দ্রুত বর্ধনশীল খাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। নগদ, বিকাশ, রকেটসহ অন্যান্য সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের লাখ লাখ গ্রাহকের কাছে ডিজিটাল আর্থিক লেনদেন সহজ করে তুলেছে।

নগদের বিশেষত্ব হলো, এটি ডাক বিভাগের অংশীদারিত্বে পরিচালিত একটি সরকারি উদ্যোগ হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল এবং বর্তমানে সরকারি বিভিন্ন ভাতা বিতরণসহ নানা ধরনের আর্থিক লেনদেনের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।

বোর্ডে নতুন পেশাদারদের যুক্ত হওয়ায় নগদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আরও সুদূরপ্রসারী ও নীতিনির্ভর হবে বলে আশা করা হচ্ছে। অর্থনীতি, আইন ও সরকারি নীতি—এই তিন ক্ষেত্রের প্রতিনিধিত্ব থাকায় পর্ষদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভারসাম্য ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে বলে মনে করছেন আর্থিক বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ

নগদের বোর্ড পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সক্রিয় ও প্রত্যক্ষ ভূমিকা প্রমাণ করে যে, এমএফএস খাতে সুশাসন ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

গত কয়েক বছর ধরে এমএফএস খাত নিয়ে নানা ধরনের বিতর্ক ও প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে, গ্রাহকের অর্থ নিরাপত্তা, লেনদেনের স্বচ্ছতা ও প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নিয়ে জনমনে উদ্বেগ ছিল। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন পদক্ষেপকে একটি সময়োপযোগী ও ইতিবাচক উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

উপসংহার

নগদের ব্যবস্থাপনা বোর্ডে নতুন সদস্যদের অন্তর্ভুক্তি এবং একজন সদস্যকে অপসারণের মধ্য দিয়ে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। এর মাধ্যমে বোর্ডে একদিকে যেমন পেশাগত বৈচিত্র্য এসেছে, অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় ও প্রশাসনিক দিক থেকেও ভারসাম্য রক্ষা করা হয়েছে।

এই পদক্ষেপ নগদের স্বচ্ছতা, দক্ষতা এবং গ্রাহকসেবার মান উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এক কথায়, দেশের ডিজিটাল আর্থিক খাতের সুদূরপ্রসারী উন্নয়নে এ ধরনের নীতিনির্ধারণী পরিবর্তন অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও সময়োপযোগী।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button