যুক্তরাষ্ট্র না জরালে ইসরায়েলকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়া হত: খামেনি

ইরান-ইসরায়েল ১২ দিনের যুদ্ধ শেষে জাতির উদ্দেশে প্রথমবারের মতো মুখ খুললেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র শেষ মুহূর্তে না আসলে দখলদার ইসরায়েল এখন ধ্বংস হয়ে যেত। যুদ্ধের প্রকৃত বিজয়ী হচ্ছে ইরান।
ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে ১২ দিনের তীব্র লড়াইয়ের পর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও, এই লড়াইয়ে চূড়ান্ত বিজয় কার—সে নিয়ে বিতর্ক চলছে। আজ জাতির উদ্দেশে ভাষণে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ না করলে ইসরায়েল এখন আর টিকে থাকত না।”
যুদ্ধের পর খামেনির প্রথম বক্তব্য
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেন, “দখলদার ইহুদিবাদী সরকার ইরানের প্রতিরোধে সম্পূর্ণ ধসে পড়েছিল। আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর আঘাতে তারা পতনের দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছিল।”
তিনি আরও বলেন, “যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িত ছিল, কারণ তারা বুঝে গিয়েছিল—যদি হস্তক্ষেপ না করে, তাহলে ইহুদিবাদীদের আর রক্ষা করার উপায় থাকবে না। ইরান এখন শুধু ইসরায়েল নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রকেও কৌশলগতভাবে পরাজিত করেছে।”
সংঘাতের পেছনের প্রেক্ষাপট
গত ১২ দিন ধরে চলা ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে উভয় পক্ষই ব্যাপক সামরিক শক্তি ব্যবহার করে। ইরানের দাবি, তারা ইসরায়েলের বিভিন্ন প্রতিরক্ষা ঘাঁটি, বন্দর ও সামরিক কার্যালয়ে লক্ষ্য করে নিখুঁত হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলও পাল্টা আঘাত করে ইরানের একাধিক সামরিক ঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত করে।
এই সংঘাতের সূত্রপাত হয় গাজা উপত্যকায় একাধিক ইসরায়েলি হামলার প্রতিক্রিয়ায়। ইরান তখন সরাসরি হস্তক্ষেপের ঘোষণা দেয় এবং একপ্রকার যুদ্ধাবস্থা শুরু হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ও ইরানের প্রতিক্রিয়া
খামেনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিল ইরানকে পেছনে ঠেলে দিতে। কিন্তু তাদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করেছে। আমরা কেবল আত্মরক্ষাই করিনি, বরং আগ্রাসীর মুখে চপেটাঘাত করেছি।”
তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিগুলোকেও আমরা লক্ষ্য করেছি। কাতারের আল উদেইদ ঘাঁটিতে যে হামলা চালানো হয়েছিল, সেটি ছিল একটি সতর্কবার্তা। প্রয়োজন হলে আমরা আরও এগিয়ে যেতে প্রস্তুত।”
ইরানি জনগণের ঐক্য ও প্রতিরোধ শক্তি
খামেনি ভাষণে বারবার ইরানি জনগণের ঐক্য এবং প্রতিরোধ শক্তির প্রশংসা করেন। “৯ কোটিরও বেশি মানুষের দেশ ইরান। এই বিপুল জনগোষ্ঠী আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর পাশে থেকে প্রমাণ করেছে—ইরানকে কখনও দমন করা যাবে না।”
তিনি বলেন, “ইরানি জাতি আত্মসমর্পণ শব্দটি চেনে না। তারা স্বাধীনতা, সম্মান এবং আত্মমর্যাদার প্রতীক।”
পরবর্তী হুঁশিয়ারি ও ভবিষ্যৎ বার্তা
ভবিষ্যতে আগ্রাসনের চেষ্টার ক্ষেত্রে ইরান কঠোর জবাব দেবে বলে হুঁশিয়ার করেন খামেনি। তিনি বলেন, “যদি কেউ আবার ইরানের দিকে হাত বাড়ায়, তাহলে তার মূল্য চরমভাবে দিতে হবে। আমাদের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী।”
তিনি আরও যোগ করেন, “ইহুদিবাদীরা কখনো কল্পনাও করেনি যে ইরান এমন সামরিক পরাক্রম দেখাতে পারে। কিন্তু আমরা দেখিয়ে দিয়েছি—ইরান কোনো কমজোরি জাতি নয়।”
সারসংক্ষেপঃ
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত আপাতত বন্ধ হলেও, উত্তেজনা এখনো বিরাজমান। যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে যুদ্ধ থামলেও আঞ্চলিক রাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সমীকরণ তৈরি হচ্ছে—যার কেন্দ্রে থাকবে ইরান এবং তার বিরোধিতাকারীরা।
তবে প্রশ্ন থেকে যায়—যুক্তরাষ্ট্রের অনুপস্থিতিতে ইসরায়েল কি সত্যিই টিকে থাকতে পারত?
এম আর এম – ০০৬১, Signalbd.com