গাজায় ত্রাণ সরবরাহ স্থগিত করল ইসরাইল

গাজায় যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনার মাঝেই ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ ঘোষণা করল ইসরাইল। হামাসের হাতে ত্রাণ চলে যাওয়ার আশঙ্কায় প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সেনাবাহিনীকে দিয়েছে কঠোর নির্দেশনা। মানবিক সংকটে আরও গভীর অন্ধকারে ডুবছে গাজা।
গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনার মাঝে ত্রাণ সরবরাহ হঠাৎ স্থগিত করল ইসরাইল। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর নির্দেশে সেনাবাহিনীকে দুই দিনের মধ্যে একটি কৌশলগত পরিকল্পনা দিতে বলা হয়েছে, যাতে হামাসকে ত্রাণের নিয়ন্ত্রণ নেয়া থেকে রোধ করা যায়। এতে গাজার সাধারণ মানুষ পড়েছে চরম মানবিক সংকটে।
ইসরাইলের ঘোষণা ও পদক্ষেপ:
বুধবার রাতে এক যৌথ বিবৃতিতে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটর্জ জানান, গাজায় ত্রাণ সরবরাহ আপাতত বন্ধ রাখা হচ্ছে। এই সিদ্ধান্তের পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে—উত্তর গাজায় ত্রাণের কনভয়ে মুখোশধারী ব্যক্তিদের দেখা গেছে, যাদের মধ্যে কিছু ছিল অস্ত্রসজ্জিত।
নেতানিয়াহু বলেন, “হামাস যাতে কোনোভাবেই ত্রাণের নিয়ন্ত্রণ নিতে না পারে, সে জন্য আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি। দুই দিনের মধ্যে সেনাবাহিনীকে একটি কার্যকর পরিকল্পনা উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে।”
হামাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ:
গত এক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল সমর্থিত সংস্থা জিএফএইচ গাজায় ত্রাণ সরবরাহ কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। তবে, ইসরাইলের দাবি অনুযায়ী, সেই ত্রাণ বারবার হামাসের হাতে চলে যাচ্ছে। কিছু ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, মুখোশধারী সশস্ত্র ব্যক্তিরা ত্রাণের ট্রাকে উঠছে ও তা নিজেদের দখলে নিচ্ছে।
ইসরাইলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ এর আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, হামাসের হাতে ত্রাণ গেলে তিনি জোট সরকার ত্যাগ করবেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই চাপের কারণেই নেতানিয়াহুর এমন সিদ্ধান্ত।
মানবিক সংকট ও প্রাণহানি:
গাজায় চলমান সংঘর্ষে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। গতকাল বুধবারের আইডিএফ হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৯০ জন ফিলিস্তিনি। বৃহস্পতিবারও বেশ কিছু মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অনেকে আবার ত্রাণ সংগ্রহের সময় আহত বা নিহত হয়েছেন।
একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, গত এক মাসে ত্রাণের জন্য ভিড় জমানোর সময় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫০০ ফিলিস্তিনি। শিশু ও বৃদ্ধরাও রক্ষা পাচ্ছে না এই নিষ্ঠুর পরিস্থিতি থেকে।
যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:
যদিও গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনার গতি বেড়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এই আলোচনায় নিয়োজিত রয়েছেন এবং দাবি করা হচ্ছে, উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “আমরা যুদ্ধবিরতির দ্বারপ্রান্তে। ইতিবাচক কিছু খুব শিগগিরই আসছে।”
তবে যুদ্ধ থামার সম্ভাবনার মাঝে ত্রাণ বন্ধ হওয়ায় আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বেড়েছে। আরব লীগের মহাসচিব জামাল রুশদি বলেন, “গাজায় সংঘাতের অবসান না ঘটলে মানবিক বিপর্যয় আরও ভয়াবহ হবে। ইরান-ইসরাইল সংঘাতের অবসান এই সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারে।”
পশ্চিম তীরেও উত্তেজনা:
গাজার মতোই পশ্চিম তীরেও অব্যাহত রয়েছে সংঘর্ষ। রামাল্লায় অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের হামলায় নিহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি। একইসঙ্গে আইডিএফ অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করেছে ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত ও বিশ্লেষণ:
বিশ্লেষকদের মতে, ত্রাণ বন্ধের এই সিদ্ধান্ত গাজায় মানবিক পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলবে। এক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ বলেন, “এই সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষকে আরও দুর্ভোগে ফেলবে, এবং এটি হামাসকে দুর্বল করার পরিবর্তে জনগণের ক্ষোভকে উস্কে দিতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনার মাঝে এমন পদক্ষেপ আলোচনা প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।”
সারসংক্ষেপঃ
গাজায় ত্রাণ সরবরাহ স্থগিত হওয়ার ফলে সেখানে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা আরও গভীর হয়েছে। ইসরাইলি সরকার বলছে এটি একটি কৌশলগত পদক্ষেপ, তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন এতে সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এখন দেখার বিষয়, দুই দিনের মধ্যে সেনাবাহিনী কী পরিকল্পনা নিয়ে আসে এবং যুদ্ধবিরতির আলোচনায় কী ধরনের অগ্রগতি হয়।
এম আর এম – ০০৫৮, Signalbd.com