যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের পরমাণু কর্মসূচি কয়েক দশক পিছিয়েছে: ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলায় ইরানের পরমাণু সক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর ভাষায়, এই হামলার প্রভাবে ইরান ‘কয়েক দশক পিছিয়ে গেছে’।
সদ্য নেদারল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক সামরিক অভিযানের ফলে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি “মূলত কয়েক দশক” পিছিয়ে পড়েছে। তাঁর মতে, “যদি ইরান পরমাণু অস্ত্র অর্জন করতো, তাহলে তারা নরকের পথ ধরতো।”
তিনি আরও বলেন, “তারা শেষবার পরমাণু সমৃদ্ধকরণের চেষ্টা করছিল। কিন্তু সেই আঘাতই এই যুদ্ধের অবসান ডেকে এনেছে।”
পেন্টাগনের ভিন্নমত: ‘কয়েক মাস’ নয়, ‘কয়েক দশক’?
তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ পেন্টাগনের গোয়েন্দা বিশ্লেষণে এমন দাবি খণ্ডন করা হয়েছে। পেন্টাগনের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলার পর প্রকৃত ক্ষতির মাত্রা “কয়েক মাস পিছিয়ে গেছে”— এমনটিই উঠে এসেছে তাদের পর্যালোচনায়।
এই বিভ্রান্তির মাঝে প্রশ্ন উঠছে, ট্রাম্পের এই ‘কয়েক দশক’ পিছিয়ে পড়ার মন্তব্য রাজনৈতিক কৌশল, না কি এটি বাস্তবতার প্রতিফলন?
ন্যাটো সম্মেলনে ট্রাম্পের উপস্থিতি ও প্রভাব
নেদারল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী ন্যাটো সম্মেলনে ট্রাম্পের বক্তব্য বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, “আমরা গাজার যুদ্ধেও অনেক দূর এগিয়ে গেছি। এক চুক্তির একদম কাছাকাছি চলে এসেছি।”
তিনি ইসরায়েল ও ইরানের দ্বন্দ্বকে রূপকভাবে তুলনা করেছেন, “দুটি বাচ্চা একই স্কুল প্রাঙ্গণে থাকলে যা হয়।”
ন্যাটো থেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণকারীদের অনুপস্থিতি
এই সম্মেলনে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ চার দেশের—জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড—নেতারা অংশ নেননি। এই অনুপস্থিতিকে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ সংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অনুপস্থিতি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সঙ্গে ন্যাটোর ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করছে।
ইউক্রেন ইস্যুতে ট্রাম্পের ভূমিকা ও বৈঠকের সম্ভাবনা
সম্মেলনের ফাঁকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের সম্ভাব্য বৈঠকের আলোচনাও চলছে। ইউক্রেনীয় সূত্রের বরাতে জানা যায়, এই বৈঠকে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা বৃদ্ধি ও কিয়েভকে অস্ত্র সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে।
ট্রাম্পের ‘দীর্ঘমেয়াদি ক্ষয়ক্ষতি’ দাবি কতটা বাস্তবসম্মত?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের মন্তব্য হয়তো প্রাক-নির্বাচনী কৌশলের অংশ হতে পারে। কারণ ২০২৫ সালেই যুক্তরাষ্ট্রে বড় ধরনের নির্বাচনী হাওয়া বইছে, যেখানে জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতি বড় ইস্যু হয়ে উঠতে পারে।
বিশ্লেষক জ্যাক কোরম্যান বলেন, “পেন্টাগনের রিপোর্ট যেখানে বলছে ‘কয়েক মাস’, সেখানে ট্রাম্প বলছেন ‘কয়েক দশক’। এটি হয়তো রাজনৈতিক নাটকীয়তারই অংশ।”
পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতা: ইরান বনাম যুক্তরাষ্ট্র
ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে দীর্ঘদিন ধরে উদ্বেগ বিদ্যমান। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র বহুবার ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা কখনোই ইরানকে পরমাণু শক্তিধর দেশ হিসেবে দেখতে চায় না।
২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থা (IAEA) জানিয়েছিল, ইরান তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজ অতীতের চেয়ে দ্রুত গতিতে চালিয়ে যাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলা একটি দৃশ্যমান বার্তা দেয় যে, তারা কূটনৈতিক পথের পাশাপাশি সামরিক বিকল্পকেও প্রস্তুত রাখছে।
পরবর্তী কী হতে পারে?
বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি ট্রাম্পের দাবি সত্য হয়, তবে মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক মানচিত্রে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটবে। তবে যদি পেন্টাগনের মূল্যায়নই সঠিক হয়, তাহলে ইরান আবারও তার কর্মসূচিকে পূর্ণমাত্রায় সক্রিয় করতে পারে, যা নতুন করে উত্তেজনা বাড়াতে পারে।
সারসংক্ষেপঃ
যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সম্পর্ক আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। ট্রাম্পের বক্তব্য আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে আলোড়ন তুলেছে। তবে বাস্তবতা কী, তা নির্ভর করছে আসন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার ওপর।
বিশ্লেষকদের মতে, “এই পরিস্থিতি পরবর্তী কয়েক সপ্তাহে নতুন এক ভূ-রাজনৈতিক মোড় নিতে পারে, যার প্রভাব পড়বে পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে।”
এম আর এম – ০০৪৩, Signalbd.com