যুদ্ধবিরতিতে এখনও স্বীকৃতি দেননি খামেনি

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এলেও দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি এ বিষয়ে এখনও কোনও বক্তব্য দেননি। ফলে তাঁর নীরবতা ঘিরে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গনে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার পর ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি এখনও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেননি। এই নীরবতা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে।
ঘটনার বিস্তারিত
মঙ্গলবার ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। একইসঙ্গে ইসরায়েলের পক্ষ থেকেও বলা হয়, তারা এখন সামরিক অভিযান স্থগিত রাখছে। তবে উভয় পক্ষই একে অপরের ওপর যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগও তুলেছে।
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে বলেন, “যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে, কেউ যেন এটি ভঙ্গ না করে।” তিনি আরও দাবি করেন, “আমাদের কাছে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করা সম্মানের বিষয়।”
কিন্তু এতকিছুর পরও ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতা, আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির পক্ষ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া আসেনি। দেশটির নীতিনির্ধারণে তাঁর বক্তব্যই চূড়ান্ত বিবেচিত হয়। ফলে তাঁর এই নীরবতা ঘিরে চলছে নানা গুঞ্জন।
পূর্বপটভূমি
গত দুই সপ্তাহ ধরে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষ চলছিল। ইসরায়েল ইরানের একটি পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করলে প্রতিশোধে ইরানও ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামলা চালায়। পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় উভয়পক্ষেই প্রাণহানি ঘটে।
পরিস্থিতি যখন তুঙ্গে, তখন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি হস্তক্ষেপ করে এবং এক পর্যায়ে উভয় দেশকে যুদ্ধবিরতির দিকে ঠেলে দেয়। এরপর শান্তি আলোচনায় উভয়পক্ষ সম্মত হলেও ইরানের সর্বোচ্চ নেতার পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য আসেনি।
খামেনির নীরবতা নিয়ে উদ্বেগ
ইরানে আয়াতুল্লাহ খামেনির মতামত ও নির্দেশ ছাড়া কোনো রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত কার্যকর হয় না। অতীতে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যেখানে প্রেসিডেন্ট বা সেনাবাহিনীর বক্তব্য এলেও পরে খামেনি তার উল্টো দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি পূর্ব-রেকর্ডকৃত ভিডিও বার্তায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’ দাবি প্রত্যাখ্যান করেন। কিন্তু যুদ্ধবিরতির প্রশ্নে এখনও তাঁর মুখ থেকে একটি শব্দও বের হয়নি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, হয় তিনি কৌশলগতভাবে সময় নিচ্ছেন, অথবা এখনও যুদ্ধবিরতির শর্তে সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট নন।
গুজব ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি
খামেনি বর্তমানে তার তেহরানের সরকারি বাসভবনে না থেকে একটি সুরক্ষিত বাঙ্কারে অবস্থান করছেন বলে শোনা যাচ্ছে। যদিও ইরান সরকার এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেনি। তাঁর এই অদৃশ্য অবস্থান আরও প্রশ্ন তুলছে—তিনি কী সত্যিই যুদ্ধবিরতির পক্ষে, নাকি নতুন কোনো নির্দেশের অপেক্ষায় আছেন?
রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ইরান অভ্যন্তরে সাধারণ মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, খামেনির নীরবতা একটি কৌশল। অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সতর্ক করে বলেছে, “যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু আমরা ইরানের বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস ভুলে যাইনি।”
মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোর প্রতিক্রিয়াও মিশ্র। কাতার, ওমান ও জর্ডান শান্তি প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানালেও সৌদি আরব এই যুদ্ধবিরতিকে “অস্থায়ী ও অবিশ্বস্ত” বলে মন্তব্য করেছে।
বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষণ
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক হাসান আল মোমেনি বলেন, “খামেনি যদি এই যুদ্ধবিরতিকে সমর্থন না করেন, তাহলে সেটি বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে। ইরানের রাজনীতিতে তাঁর অবস্থান প্রায় সর্বশক্তিমান।”
অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক গবেষক সারা রহমান বলেন, “এই মুহূর্তে খামেনির নীরবতাই আসল বার্তা। তিনি সম্ভবত পরিস্থিতির আরও অগ্রগতি দেখেই প্রতিক্রিয়া জানাবেন।”
সারসংক্ষেপঃ
যুদ্ধবিরতির ঘোষণায় কিছুটা স্বস্তি ফিরে এলেও খামেনির অবস্থান স্পষ্ট না হওয়ায় অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তি কতটা স্থায়ী হবে তা অনেকটাই নির্ভর করছে খামেনির আসন্ন বক্তব্যের ওপর।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, খামেনির বক্তব্য প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত এই যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে।
এম আর এম – ০০৪১, Signalbd.com