এনামুল হক টেস্টে শূন্য, ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন

কলম্বো টেস্টে প্রথম দিনে শ্রীলঙ্কার পেসার আসিতা ফার্নান্ডোর বলে মাত্র ১০ বল খেলে বোল্ড হয়ে ফিরে গেলেন এনামুল হক। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে এনামুলের পারফরম্যান্স নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হলো। দীর্ঘদিন ধরেই টেস্ট দলে জায়গা পাকাপোক্ত করতে পারেননি তিনি। আজকের আউট হওয়ার দৃশ্য যেন এক বার্তা দিল টেস্টে এনামুলের অবস্থান সম্পর্কে।
টেস্ট ক্রিকেটে এনামুল হকের যাত্রা
২০১৩ সালে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হলেও এনামুল কখনোই দলে স্থায়িত্ব পায়নি। এক দশক পেরিয়ে গেলেও মাত্র ৮ টেস্ট ম্যাচ খেলার দেখা মিলেছে তাঁর। একই সময়ে ৪৯টি ওয়ানডে এবং ২০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে অংশগ্রহণ করেছে এই ব্যাটসম্যান। এই পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যায়, এনামুল মূলত সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের ক্রিকেটে বেশি পারদর্শী।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে তাঁর অবদান চোখে পড়ার মতো। ১৪ ম্যাচে ৪ সেঞ্চুরি ও ৮৭৪ রান তৈরি করেছেন। যদিও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ৭ ম্যাচে ৭০০ রানের মতো সাফল্য পেয়েছেন, টেস্ট ক্রিকেটে এই সাফল্যের ছাপ দেখা যায়নি।
কলম্বো টেস্টের প্রথম দিন: আউট হওয়ার পেছনের গল্প
শ্রীলঙ্কার পেসার আসিতা ফার্নান্ডোর প্রথম ওভারেই এনামুলের হাত থেকে ক্যাচ ধরা পড়ে নি, যদিও দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওভারে বেশ কয়েকবার ধাক্কা খেয়েছেন তিনি। ১০ বল খেলে শূন্য রানে বোল্ড হওয়ার সময় এনামুল ছিলেন বেশ অস্থির, ব্যাটিংয়ের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব ছিল স্পষ্ট।
টেস্ট ওপেনার হিসেবে যেখানে কৌশলগত নিখুঁততা দরকার, সেখানে এনামুলের ব্যাটিংয়ে দেখা গেছে অস্বস্তি ও আত্মবিশ্বাসের অভাব। আগের গল টেস্টেও তিনি ১০ বল খেলে শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন, একই ধরণের পরাজয় এ বারও মেনে নিতে হয়েছে।
টেস্ট দলে এনামুলের জায়গা: কেন এত কঠিন?
পরিসংখ্যান স্পষ্ট—৮ ম্যাচে ১৪ ইনিংসে মাত্র ১৪৩ রান। গড় ১০.২১। এই রানগুলো বড় বড় স্কোরের বাইরে। টপ অর্ডারে ব্যাটিং করা ক্রিকেটারদের মধ্যে এই গড় সর্বনিম্ন।
বলা হয়, এনামুলের ব্যাটিং প্রকৃতিই সংক্ষিপ্ত সংস্করণের জন্য উপযোগী। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে যেখানে ফাস্ট পেস ও আক্রমণাত্মক ব্যাটিং প্রয়োজন, সেখানে এনামুল সফল। কিন্তু টেস্টের মতো দীর্ঘ ফরম্যাটে যেখানে ধৈর্য, কৌশল ও মানসিক শক্তি দরকার, সেখানে তার পারফরম্যান্স সন্তোষজনক হয়নি।
২০১৩ থেকে আজ পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর অবদান টুকরো টুকরো। বিভিন্ন সময় সুযোগ পেয়েও স্থায়িত্ব বজায় রাখতে পারেননি তিনি।
সমালোচনা ও ভবিষ্যৎ
এনামুলের ব্যাটিং দেখে অনেক ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ বাড়ছে। টেস্ট ক্রিকেটে এমন অস্থির ব্যাটিং কেবল নিজেকেই ক্ষতি করবে না, দলকেও অসুবিধায় ফেলবে। তরুণ ওপেনার হিসেবে অধিক প্রস্তুতি ও মানসিক শক্তি অর্জন না করলে ভবিষ্যতে টেস্ট দলে জায়গা পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে।
বিগত এপ্রিলে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট দলে ডাক পাওয়ার সময়ও অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। কারণ সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে ভালো করেও টেস্টে ভালো করা হয়নি। আজকের কলম্বো ম্যাচের পারফরম্যান্স সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর আরও জোরালো করে দিয়েছে।
বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে ওপেনারের চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে ওপেনারের দায়িত্ব অত্যন্ত জটিল। টেস্টের প্রথম বল থেকে মানসিক ও শারীরিক চাপে থাকা খেলোয়াড়দের উচিত বেশি ধৈর্যশীল ও কৌশলী হওয়া। কিন্তু গত বছর থেকে বাংলাদেশের ওপেনাররা এই দায়িত্বে পুরোপুরি পারদর্শী হতে পারেননি।
এনামুলের মতো খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে প্রয়োজন পরিকল্পিত প্রস্তুতি, দীর্ঘ মেয়াদে ধৈর্য ধরে খেলার অভ্যাস গঠন এবং টেকনিক্যাল উন্নতি। এর অভাবে টেস্ট ওপেনাররা ব্যর্থ হচ্ছেন, যা দলের সামগ্রিক ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
এনামুলের টেস্ট ভবিষ্যৎ কী?
কলম্বো টেস্টের প্রথম দিনে এনামুলের পারফরম্যান্সে স্পষ্ট হয়েছে, বাংলাদেশ টেস্ট দলে স্থায়ী হতে হলে তার আরও পরিবর্তন দরকার। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এনামুলের উচিত হয়তো দীর্ঘ ফরম্যাটের ক্রিকেট থেকে একটু দূরে থেকে সংক্ষিপ্ত সংস্করণের ব্যাটিংয়েই নিজেকে আরও পরিপক্ক করা।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কাছে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হবে নতুন ও স্থায়ী টেস্ট ওপেনার তৈরি করা, যারা চাপ সামলে টেকনিক্যাল দিক থেকে উন্নত এবং মানসিকভাবে দৃঢ়। এনামুলের মত খেলোয়াড়দের জন্য যথার্থ সময় ও সুযোগ দরকার, কিন্তু ফলাফলই সবকিছু বলে।