ইরানের আইআরজিসি কুদস ফোর্স প্রধান ইসমাইল কানি জীবিত

ইরানের কুদস ফোর্সের প্রধান ও আইআরজিসি (ইসলামী বিপ্লবী গার্ড কর্পস) কমান্ডার ইসমাইল কানি জীবিত এবং সম্প্রতি তেহরানে এক বড় জনসমাবেশে অংশগ্রহণ করেছেন — এমন খবর প্রকাশ করেছে তুরস্কের আনাদুলু সংবাদ সংস্থা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে কানি দেখা গেছে, যেখানে তিনি কাতারে অবস্থিত মার্কিন সেনা ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সাফল্য উদযাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
কানির মৃত্যু সম্পর্কে ভুল তথ্য
গত ২০ জুন নিউ ইয়র্ক টাইমস এক ইরানি সূত্রের বরাতে দাবি করেছিল যে, সাম্প্রতিক ইসরায়েলি হামলায় ইসমাইল কানি নিহত হয়েছেন। এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই ইরানি এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যে সংশয় সৃষ্টি হয়। তবে, কানির প্রকাশ্য উপস্থিতির ভিডিও প্রকাশের পর পরিষ্কার হয়ে গেছে, এই মৃত্যুর খবর সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
তেহরানে অনুষ্ঠিত জনসমাবেশে কানি জীবিত অবস্থায় উপস্থিত থাকার ভিডিও দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
ইসমাইল কানির পরিচয় ও অবস্থান
ইসমাইল কানি ২০২০ সালে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত কাসেম সোলেইমানির মৃত্যুর পর কুদস ফোর্সের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কানি ইরানের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ও সামরিক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি, যিনি মধ্যপ্রাচ্যের জটিল রাজনৈতিক এবং সামরিক সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন।
২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে, লেবাননের বৈরুত শহরে ইসরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরাল্লাহর সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে পরিচিত হাশেম সাফিয়েদ্দিন নিহত হন। তখন থেকেই কানি ও তার অবস্থান নিয়ে নানা ধরনের জল্পনা এবং গোপন তথ্য ফাঁস হওয়ার অভিযোগ উঠে।
ইরানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও গোয়েন্দা তদন্ত
মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক মিডিয়া ‘মিডল ইস্ট আই’ অনুসারে, ইরানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনী কানি ও তার দলের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। তদন্তের কারণ ছিল ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীতে, বিশেষ করে লেবাননের সাথে সংশ্লিষ্ট দফতরে অনুপ্রবেশের সন্দেহ। তদন্তকারী কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট সবাইকে কঠোর নজরদারিতে রেখেছিলেন।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ‘স্কাই নিউজ’ অক্টোবর মাসে জানায়, তদন্ত চলাকালে কানি হার্ট অ্যাটাকের শিকার হয়েছিলেন। তবে তার পরবর্তী সময়ের ভিডিও প্রমাণ করে, তিনি সুস্থ ও কর্মক্ষম অবস্থায় রয়েছেন।
তেহরানের জনসমাবেশ ও আইআরজিসি’র জয়গাথা
২৪ জুন তেহরানে অনুষ্ঠিত ‘অপারেশন ডিভাইন ভিক্টরি’ নামে এক বিশেষ জনসমাবেশে কানি উপস্থিত ছিলেন। এই সমাবেশের মাধ্যমে ইরান তাদের সাম্প্রতিক মার্কিন সেনা ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সাফল্য উদযাপন করে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম তাসনিম নিউজ এজেন্সি এবং প্রেস টিভি এই ভিডিও এবং সংবাদ প্রকাশ করে।
তাসনিম নিউজ এক প্রতিবেদনেই উল্লেখ করে, “ঐশ্বরিক বিজয়ের অপারেশন শেষে তেহরানের জনসমাবেশে কুদস ফোর্সের কমান্ডার ইসমাইল কানি অংশগ্রহণ করেছেন।”
মার্কিন ও ইরানের মধ্যকার যুদ্ধবিরতি
গত ১২ দিনের বিমান হামলার পর, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন, যা ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সাময়িক শান্তির পথ খুলে দেয়। এই যুদ্ধবিরতি দুই পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে কার্যকর হয়, যদিও মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা এখনো পুরোদমে বিদ্যমান।
বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ পরিপ্রেক্ষিত
ইরানের কুদস ফোর্স প্রধান ইসমাইল কানির জীবিত থাকার খবর আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। মধ্যপ্রাচ্যের জটিল নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে তাঁর উপস্থিতি ও কার্যকলাপ ইরানের শক্তি ও প্রভাব বজায় রাখার একটি দৃষ্টান্ত।
কানি এক সময়ের কাসেম সোলেইমানির মতোই শক্তিশালী ও প্রভাবশালী নেতা, যিনি ইরানের অঞ্চলীয় নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তাঁর জীবন ও কার্যক্রমের ওপর নজরদারি চালানো হচ্ছে পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর।
তবে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো থেকে বোঝা যায়, ইরান তাঁর অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার পাশাপাশি বহিরাগত হুমকির মোকাবিলা করতেও প্রস্তুত। এটি মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ভারসাম্য ও ভবিষ্যৎ যুদ্ধের ধরনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
ইরানের কুদস ফোর্সের প্রধান ইসমাইল কানির মৃত্যুর গুজব সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার গোপন তথ্য ও ভুল খবরের উপর এক নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি হয়েছে। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, সামরিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণে সঠিক তথ্য ও প্রমাণের গুরুত্ব অপরিসীম।
মধ্যপ্রাচ্যের শঙ্কাময় পরিস্থিতি ও ইরান-ইসরায়েলের বিরোধ অব্যাহত থাকবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। এই পরিস্থিতিতে কানির ভূমিকা এবং তাঁর নিরাপদ অবস্থান ইরানের কৌশলগত শক্তি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রতীক।