বাংলাদেশ

আগামী মাস থেকে ভাতা পাবেন জুলাই-যোদ্ধারা: উপদেষ্টা

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে আহত ‘জুলাই-যোদ্ধারা’ দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর পাচ্ছেন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও আর্থিক সহায়তা। তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে দেওয়া হবে মাসিক ভাতা ও পুনর্বাসন সুবিধা। শহীদ পরিবারও পাবে এককালীন অর্থ সহায়তা।

আগামী জুলাই মাস থেকে ১৯৭৩ সালের ২৪ জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে আহত ‘জুলাই-যোদ্ধারা’ মাসিক ভাতা পেতে শুরু করবেন। এ উপলক্ষে তিনটি শ্রেণিতে বিভাজন করে তাদের আর্থিক সহায়তা ও পুনর্বাসনের পরিকল্পনা করেছে সরকার। শহীদ পরিবারগুলোকেও দেওয়া হবে এককালীন অর্থ সহায়তা।

সরকারী ঘোষণা ও বিশদ পরিকল্পনা:

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম জানিয়েছেন, জুলাই-যোদ্ধাদের স্বীকৃতি দিয়ে সরকার ইতোমধ্যে গেজেট প্রকাশ করেছে এবং তালিকাভুক্ত যোদ্ধাদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে তিনটি ভিন্ন ক্যাটাগরি: ‘এ’, ‘বি’, ও ‘সি’।

  • ‘এ’ ক্যাটাগরি: গুরুতর আহত, চলাফেরা অক্ষম, অন্ধ বা অঙ্গহানির শিকার ৪৯৩ জন যোদ্ধা।
      মাসিক ভাতা: ২০,০০০ টাকা
      এককালীন অনুদান: ৫ লাখ টাকা
      চিকিৎসা: আজীবন সরকারি হাসপাতালে ফ্রি চিকিৎসা + বিদেশেও চিকিৎসা সহায়তা
  • ‘বি’ ক্যাটাগরি: আংশিক অক্ষম, এক চোখ বা এক পা হারানোসহ ৯০৮ জন আহত।
      মাসিক ভাতা: ১৫,০০০ টাকা
      এককালীন অনুদান: ৩ লাখ টাকা
      প্রশিক্ষণ ও সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার
  • ‘সি’ ক্যাটাগরি: চিকিৎসার পর স্বাভাবিক জীবন যাপনরত ১০,৬৪২ জন।
      মাসিক ভাতা: ১০,০০০ টাকা
      এককালীন অনুদান: ১ লাখ টাকা
      পুনর্বাসন ও পরিচয়পত্র প্রদান

শহীদ পরিবারগুলোর জন্য আর্থিক সহায়তা:

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ৮৩৪ জন ‘জুলাই শহীদ’-এর তালিকা গেজেটে প্রকাশ করেছে। শহীদ পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্য পাবেন:

এককালীন অনুদান: ৩০ লাখ টাকা (১০ লাখ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে, বাকি ২০ লাখ আগামী অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয়পত্র আকারে)

মাসিক ভাতা: ২০,০০০ টাকা

চাকরিতে অগ্রাধিকার: সক্ষম সদস্যরা পাবেন সরকারি ও আধা-সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার সুবিধা

পুনর্বাসন ও প্রশাসনিক উদ্যোগ

জুলাই-যোদ্ধাদের স্বার্থরক্ষায় পৃথক একটি অধিদফতর গঠন করা হয়েছে। এতে একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে ২০ জন কর্মকর্তা কাজ করছেন। তারা সার্বক্ষণিক আহত যোদ্ধাদের তথ্য সংগ্রহ, যাচাই ও সহায়তায় নিয়োজিত রয়েছেন।

সরকারী অগ্রগতি:

উপদেষ্টা জানান, যেখানে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রস্তুত করতে ৫৪ বছর লেগেছে, সেখানে মাত্র সাত-আট মাসেই ‘জুলাই-যোদ্ধা’ ও ‘শহীদ’দের তালিকা চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। এটি বর্তমান সরকারের দায়িত্বশীলতা ও আন্তরিকতারই প্রতিফলন।

চিকিৎসা ও আন্তর্জাতিক সহায়তা:

গুরুতর আহত ৭ জনকে চিকিৎসার জন্য তুরস্কে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়েছে অনেক আহত যোদ্ধাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য। উপযুক্ত মেডিক্যাল বোর্ডের সুপারিশের ভিত্তিতে দেশের বাইরেও চিকিৎসার সুযোগ থাকবে।

স্মৃতি সংরক্ষণ:

৫ আগস্টকে সরকার ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতি বছর এই দিনটি রাষ্ট্রীয়ভাবে স্মরণ করা হবে। এটি জাতীয় দিবসের মর্যাদা পাবে ভবিষ্যতে।

“জুলাই যোদ্ধারা গণতন্ত্র রক্ষার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন, আজ রাষ্ট্র তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে”—ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা

সার-সংক্ষেপঃ 

চব্বিশের শহীদ ও আহতদের এই দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান এনে সরকার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তা নিঃসন্দেহে এক ইতিবাচক পদক্ষেপ। বাস্তবায়নের গতি ও স্বচ্ছতা ধরে রাখতে পারলেই এই স্বীকৃতি ও সহায়তা হবে সত্যিকারের মূল্যায়ন।
তবে প্রশ্ন থেকেই যায়: এই উদ্যোগের ধারাবাহিকতা কি দীর্ঘমেয়াদে বজায় থাকবে?

এম আর এম – ০০৩৪, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button