চব্বিশ ঘণ্টায় দেশে ২১ জনের করোনা শনাক্ত, ৫ জনের মৃত্যু

দেশজুড়ে আবারও করোনার উপস্থিতি বাড়ছে ধীরে ধীরে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২১ জন নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন, একই সময়ে পাঁচজন প্রাণ হারিয়েছেন—যার মধ্যে চারজনই পুরুষ। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ মুহূর্তে সচেতনতা ছাড়া বিকল্প নেই।
দেশে আবারও করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২১ জনের দেহে নতুন করে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে। একই সময়ে মৃত্যুবরণ করেছেন পাঁচজন।
ঘটনার বিস্তারিত
মঙ্গলবার (২৪ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রকাশিত করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গতকাল সোমবার সকাল ৮টা থেকে আজ মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত মোট ৪৪১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ২১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়, যা মোট পরীক্ষার ৪.৭৬ শতাংশ।
এর পাশাপাশি, ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচজন। তাদের মধ্যে চারজন পুরুষ এবং একজন নারী। মৃত্যুর সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে। গতকাল সোমবার করোনায় মৃত্যু হয়েছিল তিনজনের।
মৃতদের বয়স ও অঞ্চলভিত্তিক তথ্য
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মৃত্যুবরণকারী পাঁচজনের মধ্যে বয়সভিত্তিক বণ্টন ছিল নিম্নরূপ:
- একজনের বয়স ১১–২০ বছরের মধ্যে
- একজনের ৪১–৫০ বছর
- একজনের ৬১–৭০ বছর
- একজনের ৭১–৮০ বছর
- একজনের বয়স ৯১–১০০ বছরের মধ্যে
এদের মধ্যে একজন রাজধানী ঢাকার, তিনজন চট্টগ্রাম বিভাগের এবং একজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া পাঁচজনের মধ্যে চারজন বেসরকারি হাসপাতালে ও একজন সরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
চলতি বছরের পরিসংখ্যান
২০২৫ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে মোট ৪৭৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন এবং মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের। বর্তমানে আক্রান্তদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। মৃত্যুর হার অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরে মৃতদের মধ্যে নারীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি।
মোট শনাক্তের দিক থেকে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৯৭৮ জন। মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫১৫ জনের।
পূর্বপটভূমি ও আগের প্রবণতা
২০২০ সালের মার্চ মাসে প্রথম করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ধরা পড়ে বাংলাদেশে। এরপর নানা ধাপে ভয়াবহ রূপ ধারণ করে মহামারি। টিকাদান কর্মসূচি ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কারণে সংক্রমণ অনেকটা কমে আসে। তবে ২০২৫ সালে আবারও সংক্রমণ কিছুটা বাড়তে শুরু করেছে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে।
বর্তমানে দেশে সংক্রমণের হার ৪ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, বর্ষা মৌসুমে ইনফ্লুয়েঞ্জার পাশাপাশি করোনার প্রকোপও বাড়তে পারে।
বিশেষজ্ঞ মতামত
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের সাধারণ মানুষ এখন অনেকটাই অসচেতন হয়ে পড়েছেন। মাস্ক ব্যবহার, হাত ধোয়া ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার প্রবণতা কমে গেছে। এসব কারণেই ভাইরাসটি ফের সক্রিয় হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আফরোজা সুলতানা বলেন,
“শুধুমাত্র হাসপাতালভিত্তিক পর্যবেক্ষণ নয়, ঘরে ঘরে স্বাস্থ্যবিধি মানা নিশ্চিত না হলে করোনা আবারও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।”
কীভাবে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব?
করোনার সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কিছু দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে:
- মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা
- জনসমাগমস্থলে না যাওয়া
- হাত সাবান দিয়ে ধোয়া বা স্যানিটাইজার ব্যবহার
- উপসর্গ দেখা দিলে পরীক্ষা করানো ও আইসোলেশনে থাকা
- টিকার বুস্টার ডোজ গ্রহণ
উপসংহার
বর্তমান তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, করোনাভাইরাস এখনো একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। বরং সময়ে সময়ে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। বিশেষ করে যাঁরা দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতার অধিকারী, তাঁদের জন্য এই ভাইরাস আবারও প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই এখন সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ ব্যবস্থা।
তবে পরিস্থিতি কীভাবে মোড় নেবে, তা নির্ভর করছে দেশের নাগরিকদের সচেতনতার ওপর।
এম আর এম – ০০২৯ , Signalbd.com