বিশ্ব

এবার গাজাতেও যুদ্ধবিরতির দাবি ইসরায়েলি বিরোধী দলগুলোর

যুদ্ধবিরতি হলো ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষে, গাজা থেকে মুক্তির দাবি নতুন সুরে

সম্প্রতি ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ১২ দিনের তীব্র যুদ্ধ শেষে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগ ও কাতারের মধ্যস্থতায় এই যুদ্ধবিরতির চুক্তি হয়। তবে গাজা সেক্টর, যেখানে প্রায় ২০ মাস ধরে ইসরায়েলি বাহিনীর বিরাট আক্রমণ ও হামলা চলছে, সে অংশটি এই যুদ্ধবিরতিতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এই পরিস্থিতিতে গাজার ওপরও যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার ও সেখানে বন্দি ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি নাগরিকদের মুক্তির দাবি জোরালো হচ্ছে। বিশেষ করে ইসরায়েলের বিরোধী দলগুলো সরকারের প্রতি একই সুরে আহ্বান জানাচ্ছে।

ইসরায়েলি বিরোধী দলগুলো সরকারের কাছে গাজাতেও যুদ্ধবিরতি দাবি

ইসরায়েলের মধ্যবামপন্থী রাজনৈতিক দল ডেমোক্র্যাটস পার্টির নেতা ইয়াইর গোলান সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (পূর্বের টুইটার) পোস্ট করে বলেছেন, “ইরানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির পর গাজাতেও অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে হবে। বন্দিদের ফিরিয়ে আনা জরুরি এবং গাজার অবস্থা স্থিতিশীল করতে হবে, যাতে ইসরায়েল দুর্বল না হয়।”

তাঁর এই বক্তব্যের পাশাপাশি, বিরোধীদলীয় নেতা ও ইয়েশ আতিদ পার্টির প্রধান ইয়াইর লাপিদও একই রকম দাবি জানিয়েছেন। ইসরায়েলের এক শীর্ষ সংবাদ মাধ্যম, ‘টাইমস অব ইসরায়েল’কে তিনি বলেন, “এখন গাজার পালা। সেখানে যুদ্ধবিরতি আনতে হবে এবং বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। যুদ্ধ শেষ করে ইসরায়েলের পুনর্গঠন শুরু করতে হবে।”

গাজায় আটক বন্দিদের মুক্তি চেয়ে পরিবারের করুণ আহ্বান

গাজায় হামাসের হাতে আটক ইসরায়েলি নাগরিকদের স্বজনরা তাদের সরকারের প্রতি গাজায় যুদ্ধ বন্ধের আবেদন জানিয়ে বলেছেন, তারা যেন অবিলম্বে বন্দিদের মুক্তির জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেয়। ‘হস্টেজেস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন এক বিবৃতিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে, “যুদ্ধবিরতির আলোচনায় গাজার বিষয়টি অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এই উদ্যোগ না নিলে এটি এক বিশাল কূটনৈতিক ব্যর্থতা হবে।”

সংগঠনটি আরও বলেছে, “যদি ইসরায়েল ইরানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে সফল হয়, তাহলে গাজার যুদ্ধও অবশ্যই থামাতে হবে। গাজার কর্দমাক্ত পরিস্থিতিতে ফের উত্তেজনা বাড়ানো ইসরায়েলের স্বার্থের পরিপন্থী।”

গাজার যুদ্ধের পটভূমি: দীর্ঘদিনের সংঘাত ও হত্যা-নিপীড়ন

২০১৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজার হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের সীমান্ত পেরিয়ে তীব্র যুদ্ধ শুরু হয়। সেই হামলায় প্রায় ১২০০ ইসরায়েলি নাগরিক নিহত হন। সেই সময় হামাস ২৫১ জনকে জিম্মি করে। ইতোমধ্যে কিছু বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, কিছু মারা গিয়েছে। তবে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বলছে, এখনও গাজায় হামাসের হাতে প্রায় ৫০ জন বন্দি রয়েছে, যার মধ্যে ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যুদ্ধবিরতির প্রভাব ও ভবিষ্যৎ: ইসরায়েল ও গাজার জন্য এক নতুন সুযোগ

ইসরায়েলের রাজনৈতিক দলগুলো এবং বন্দি পরিবারগুলো মনে করছেন, এই যুদ্ধবিরতি নতুন এক দিকনির্দেশনা দিতে পারে। দীর্ঘ সময়ের সন্ত্রাস ও প্রতিহিংসার মাঝে, শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য গাজাতে যুদ্ধবিরতি জরুরি। ইসরায়েলের জন্যও এটি সময় এসেছে নতুন করে দেশকে গড়ে তোলার, বিভক্তি কমানোর এবং জনগণের জীবন পুনরুদ্ধার করার।

যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তা ও কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি স্বাভাবিকভাবেই একটি বড় কূটনৈতিক সাফল্য। কিন্তু গাজায় সংঘাত না থামালে, এটি শুধুমাত্র আংশিক সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হবে। গাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসলে ইসরায়েলের নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এই কারণেই ইসরায়েলের বিরোধী দলগুলো যুদ্ধবিরতির ব্যাপক বর্ধিত কাভারেজ ও গাজায় বন্দিদের মুক্তির কথা বলছে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভঙ্গি ও মধ্যপ্রাচ্যের শান্তিপথ

যুক্তরাষ্ট্র ও কাতার যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। তবে তারা এখনও গাজার ব্যাপারে চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও এখন গাজার সংঘাত বন্ধ এবং মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর ওপর গুরুত্বারোপ করছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা বারবার আহ্বান জানাচ্ছে, গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে হবে এবং সাধারণ মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

গাজার শান্তির জন্য এখনই সময়

গাজার দীর্ঘ সংঘাতের শেষ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা আজ আর অবমূল্যায়ন করা যায় না। ইসরায়েলি বিরোধীদল ও বন্দি পরিবারের আহ্বান থেকে স্পষ্ট যে, রাজনৈতিক বিভাজন পেরিয়ে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটি কেবল বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করবে না, বরং মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার জন্যও নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করবে। গাজার শান্তি ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি জনগণের জীবনমান উন্নয়নে এক অপরিহার্য পদক্ষেপ।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button