বিশ্ব

ইরানের সঙ্গে কূটনীতি চালাতে ট্রাম্প এখনও আগ্রহী: হোয়াইট হাউজ

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় অস্বীকৃতি জানালে জনগণের উচিত সরকারকে সরিয়ে দেওয়া — এমন মন্তব্য করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, তিনি এখনো কূটনৈতিক আলোচনায় আগ্রহী।

ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক ইস্যুতে চলমান উত্তেজনার মাঝেও কূটনৈতিক আলোচনার পথ খোলা রাখতে চান সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে জানান, ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে অবস্থান শক্ত করলেও কূটনীতির পথ একেবারে বন্ধ করতে চান না।

ট্রাম্পের বক্তব্য ও হোয়াইট হাউজের ব্যাখ্যা

হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখনো বিশ্বাস করেন, ইরানের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সমঝোতার সুযোগ রয়েছে। তবে যদি ইরান সরকার আলোচনায় বসতে রাজি না হয়, তাহলে সেই সহিংস সরকার থেকে ইরানিদের মুক্ত হওয়ার অধিকার থাকা উচিত।”

এ সময় তিনি আরও জানান, ইরানের বর্তমান সরকার জনগণকে বছরের পর বছর ধরে দমন করে রেখেছে এবং পারমাণবিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বৈশ্বিক নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

ইরান-যুক্তরাষ্ট্র টানাপোড়েনের ইতিহাস

ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার কূটনৈতিক টানাপোড়েন নতুন কিছু নয়। ২০১৫ সালের ঐতিহাসিক পারমাণবিক চুক্তি থেকে ২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসনের সরে আসার পর দুই দেশের সম্পর্ক আরও খারাপের দিকে গিয়েছিল। এরপর থেকে ইরান আবারো তার পারমাণবিক কার্যক্রম জোরদার করে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে, ইরান তাদের পারমাণবিক কার্যক্রম আবারো গোপনে বাড়াচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি লঙ্ঘন করছে।

সাম্প্রতিক হামলা ও তার প্রতিক্রিয়া

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর জানিয়েছে, গত শনিবার রাতে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় সুনির্দিষ্ট হামলা চালানো হয়। এই হামলার লক্ষ্য ছিল শুধুমাত্র স্থাপনাগুলো নিরস্ত করা, সরকারের পতন নয়। তবে ইরান দাবি করেছে, হামলার আগেই তারা গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি স্থানান্তর করেছিল।

হোয়াইট হাউজ সূত্র জানিয়েছে, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল ইরানকে আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে আনা।

বিরোধী প্রতিক্রিয়া ও জনমত

ট্রাম্পের বক্তব্য নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ বলছেন, কূটনৈতিক পথ খোলা রাখা একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত, আবার কেউ মনে করেন ট্রাম্পের “সরকার পরিবর্তন” সম্পর্কিত মন্তব্য ইরানকে আরও উসকে দিতে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক ইস্যুতে শক্ত অবস্থান দেখাতে চান, তবে একই সঙ্গে আলোচনার ছাপ রেখেও যেতে চান, যাতে মধ্যপন্থী ভোটারদের কাছেও গ্রহণযোগ্য থাকেন।

সামনে কী ঘটতে পারে?

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্প পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ইরান নীতিতে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। তবে বর্তমান রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। ট্রাম্প যেহেতু কূটনীতির দরজা খোলা রাখতে চাইছেন, তাই আগামী সপ্তাহগুলোতে আলোচনার কোনো উদ্যোগ দেখা যেতে পারে।

এদিকে ইরান সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি যে তারা আলোচনায় বসবে কিনা।

“ইরান নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখনও কূটনীতিতে আগ্রহী এবং সম্পৃক্ত রয়েছেন।” — ক্যারোলাইন লেভিট, প্রেস সেক্রেটারি, হোয়াইট হাউজ

সার-সংক্ষেপ 

ট্রাম্পের কূটনৈতিক আগ্রহ ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্র এখনো সরাসরি সংঘাত নয় বরং আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজার পক্ষপাতী। তবে সরকারের পতনের আহ্বান ও সামরিক হামলা — এই দুই মিশ্র বার্তা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বিভ্রান্তি তৈরি করছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ইরান যদি আলোচনায় বসে, তবে উত্তেজনা প্রশমিত হতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়— ইরান কী কূটনীতির পথ বেছে নেবে?

এম আর এম – ০০১৯, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button