টিটেনাস সংক্রমণে রংপুর মেডিকেলের আইসিইউ ৩ দিনের জন্য বন্ধ, রোগীদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে

রংপুর মেডিকেলের আইসিইউ-তে এক রোগীর দেহে টিটেনাস শনাক্ত হওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে পুরো ইউনিট বন্ধ ঘোষণা করেছে। সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি রোধে আইসিইউ স্যানিটাইজেশনের কাজ চলবে ৩ দিনব্যাপী।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে টিটেনাস রোগ শনাক্ত হওয়ায় ৩ দিনের জন্য ইউনিটটি সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে রোগীদের নিরাপদে অন্যান্য ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ঘটনার বিস্তারিত
সোমবার (২৩ জুন) দুপুরে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন এক রোগীর দেহে টিটেনাস রোগ শনাক্ত হওয়ার পরপরই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে ব্যবস্থা নেয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ডা. আব্দুল্লাহেল বারী জানান, “একজন রোগীর ডায়ালাইসিস এবং অস্ত্রোপচারের নমুনা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া যায় তিনি টিটেনাসে আক্রান্ত। যেহেতু এটি একটি সংক্রামক রোগ, দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে আইসিইউ ৩ থেকে ৪ দিনের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।”
আক্রান্ত রোগীকে তাৎক্ষণিকভাবে আইসোলেশন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়েছে এবং বাকি রোগীদের মধ্যে যারা গুরুতর অবস্থায় রয়েছেন, তাদের বিকল্প ব্যবস্থায় স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।
পূর্বপটভূমি
টিটেনাস একটি ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রমণ, যা সাধারণত খোলা ক্ষত বা ইনজেকশন মারফত শরীরে প্রবেশ করে থাকে। চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে স্টেরাইল পরিবেশ নিশ্চিত না হলে এই ধরনের সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। আইসিইউ হলো সবচেয়ে সংবেদনশীল ইউনিট, যেখানে রোগীদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে দুর্বল। ফলে টিটেনাসের মতো সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দ্বিগুণ হয়ে যায়।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইতিহাসে এটিই প্রথমবার নয়; এর আগে ২০১৯ সালে অনুরূপ এক সংক্রমণ রোধে অস্থায়ীভাবে একটি ওয়ার্ড বন্ধ করা হয়েছিল।
রোগীদের স্থানান্তর ও ব্যবস্থা
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আইসিইউতে থাকা ৯ জন রোগীর মধ্যে ৫ জনকে ইতোমধ্যে অন্যান্য ওয়ার্ডে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাকি ৩ জন ছিলেন ভেন্টিলেটর সাপোর্টে, যাদের রাতের মধ্যেই নিরাপদ বিকল্প ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়েছে।
রোগীর স্বজনরা জানিয়েছেন, হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তে কিছুটা উদ্বেগ তৈরি হলেও কর্তৃপক্ষ যথাসময়ে ব্যবস্থা নেওয়ায় স্বস্তি পেয়েছেন তারা। আব্দুল মোনায়েম নামের এক রোগীর স্বজন বলেন, “আমার বাবা আইসিইউতে ছিলেন। চিকিৎসক জানালেন টিটেনাস ধরা পড়েছে, তাই তাকে অন্য ওয়ার্ডে নিতে হবে। পরে তাকে তিনতলার ওয়ার্ডে নিয়ে যাই।”
পরিচ্ছন্নতা ও জীবাণুমুক্তকরণ কার্যক্রম
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশিকুর রহমান জানিয়েছেন, “আইসিইউ ইউনিটটি সম্পূর্ণরূপে জীবাণুমুক্ত করতে একটি বিশেষ মেডিকেল টিম কাজ শুরু করেছে। কেমিক্যাল স্প্রে ও হাই-গ্রেড স্যানিটাইজার ব্যবহার করে পুরো ইউনিট পরিষ্কার করা হবে।”
তিনি আরও জানান, আগামী ৩ দিন যাবত এই ইউনিটে কোনো রোগী ভর্তি নেওয়া হবে না এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে চিকিৎসা কার্যক্রম আবার শুরু হবে।
বিশেষজ্ঞ মতামত ও স্বাস্থ্য সতর্কতা
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “আইসিইউ-এর মতো স্থানগুলোতে সংক্রমণ রোধে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। যেহেতু টিটেনাস রোগটি প্রাণঘাতী হতে পারে, তাই রোগী শনাক্ত হতেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।”
তাদের মতে, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে হাসপাতালগুলোর মধ্যে স্টেরাইল প্রোটোকল আরও কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।
“রোগীর দেহে টিটেনাস শনাক্ত হওয়ায় আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে আইসিইউ বন্ধ করি, যাতে সংক্রমণ না ছড়ায়”—ডা. আব্দুল্লাহেল বারী, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
সার-সংক্ষেপ
টিটেনাস সংক্রমণের কারণে ৩ দিনের জন্য রংপুর মেডিকেলের আইসিইউ বন্ধ থাকলেও দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। তবে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্যনীতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর আরও গুরুত্বারোপ করার সময় এসেছে।
এম আর এম – ০০১৮, Signalbd.com