বাংলাদেশ

সংকেত অমান্য করা বাইক ধরতে গিয়ে ট্রাকচাপায় পা হারালেন পুলিশ সদস্য

চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় এক মোটরসাইকেলচালককে আটকানোর সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হলেন পুলিশ কনস্টেবল মোহাম্মদ আলাউদ্দিন। সংকেত অমান্য করে পালাতে যাওয়া বাইককে থামাতে গিয়ে ট্রাকচাপায় তার একটি পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়ায় চেকপোস্টে দায়িত্ব পালনকালে এক মর্মান্তিক ঘটনার শিকার হন পুলিশ কনস্টেবল মোহাম্মদ আলাউদ্দিন। সংকেত অমান্য করে পালাতে যাওয়া মোটরসাইকেল আরোহীকে আটকাতে গিয়ে তিনি ট্রাকচাপায় পড়েন এবং তার ডান পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ 

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি এলাকার হাজী রাস্তার মাথায় রোববার সন্ধ্যায় ঘটে এই দুর্ঘটনা। লোহাগাড়া থানার পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে মোটরসাইকেল তল্লাশি চালাচ্ছিলো, যেখানে একটি বাইক পুলিশের সংকেত অমান্য করে দ্রুত চলে যায়।

এরপর, দ্বিতীয় একটি মোটরসাইকেলও একইভাবে পালানোর চেষ্টা করলে পুলিশ কনস্টেবল আলাউদ্দিন সেটিকে আটকাতে দৌড়ে যান। তখন পাশের একটি ট্রাকের নিচে পড়ে যান তিনি। তৎক্ষণাৎ সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।

হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, তার ডান পা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় তাকে তিন ইউনিট রক্ত দিতে হয়েছে।

পুলিশের তৎপরতা 

প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, পুলিশের কাছে তথ্য ছিল, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারমুখী একটি মোটরসাইকেল ইয়াবা পাচার করছে। এই কারণেই মহাসড়কে তল্লাশির অংশ হিসেবে চেকপোস্ট বসানো হয়। সন্দেহজনক একটি বাইককে থামতে সংকেত দেওয়া হলে সেটি পালিয়ে যায়। তার ঠিক পেছনে থাকা আরেকটি বাইকও থামেনি।

পুলিশ সূত্র জানায়, দ্বিতীয় বাইকটিকে থামাতে গিয়েই এই ভয়াবহ ঘটনা ঘটে।

সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও 

ঘটনার ৫৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশের কয়েকজন সদস্য মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। ধীরগতির একটি ট্রাকের পেছনে থাকা মোটরসাইকেলকে সংকেত দেওয়া হয় থামার জন্য।

তবে ওই সময় এক পুলিশ সদস্য দৌড়ে গিয়ে বাইকের পেছনের যাত্রীকে থামানোর চেষ্টা করেন। বাইকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে গেলে, আলাউদ্দিন বিপরীত দিক থেকে এসে আটকাতে যান। ঠিক তখনই তিনি ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে যান।

ভিডিওটি জনমনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

চিকিৎসা অবস্থা 

চট্টগ্রাম মেডিক্যালে অর্থোপেডিক বিভাগে ভর্তি থাকা কনস্টেবল আলাউদ্দিনের পায়ে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। চিকিৎসক ডা. কাউছারুল মতিন জানিয়েছেন, “তার পা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। রক্তশূন্যতার কারণে তাকে অতিরিক্ত রক্ত দিতে হয়েছে এবং তাকে পঙ্গু অবস্থায় থাকতে হবে। তবে তিনি বর্তমানে শঙ্কামুক্ত।”

চিকিৎসকদের মতে, ভবিষ্যতে কৃত্রিম পা সংযোজনের মাধ্যমে কিছুটা স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব হতে পারে। তবে পুরোপুরি সুস্থ হতে সময় লাগবে।

প্রতিক্রিয়া ও নিরাপত্তা প্রশ্ন

এই ঘটনার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে — এমন হাই রিস্ক অপারেশন বা চেকপোস্ট ডিউটিতে পুলিশ সদস্যদের নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত করা হচ্ছে?

লোহাগাড়া থানার এক কর্মকর্তা জানান, “আমরা নিয়মিত চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালাই। কিন্তু অনেক বাইক আরোহী সংকেত অমান্য করে পালানোর চেষ্টা করেন, যা বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করে।”

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে এমন তল্লাশিতে পুলিশের নিরাপত্তা উপকরণ ও প্রশিক্ষণের মানোন্নয়ন করা জরুরি।

“তার পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং তিনি পঙ্গু হয়ে গেছেন, তবে আপাতত শঙ্কামুক্ত”—ডা. কাউছারুল মতিন, অর্থোপেডিক বিভাগ, চমেক হাসপাতাল।

সার-সংক্ষেপ 

চেকপোস্টে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজের পা হারালেন এক দায়িত্বশীল পুলিশ সদস্য। একটি সংকেত অমান্য করার ঘটনা যে কত বড় পরিণতি বয়ে আনতে পারে — এই ঘটনাই যেন তার বাস্তব প্রমাণ।

তবে প্রশ্ন থেকেই যায় — চেকপোস্টে দায়িত্ব পালনকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কি আদৌ নিরাপদ? ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া কতটা জরুরি?

এম আর এম – ০০১৬, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button