খেলা

পাওয়ারম্যান মালয়েশিয়ায় অংশ নিলেন ৩১ বাংলাদেশি, কে সবচেয়ে ভালো করলেন

মাইলের পর মাইল দৌড়ানো, চড়ন্ত সাইকেলে হাওয়া কাটা — এমন রোমাঞ্চকর ও শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষা সঙ্গেই পরিচিত মালয়েশিয়ার ‘পাওয়ারম্যান’ ডুয়াথলন প্রতিযোগিতা। ২০ থেকে ২২ জুন আয়োজিত এই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন মোট ৩১ জন বাংলাদেশি অ্যাথলেট, যারা নিজেদের দক্ষতা ও ধৈর্যের নতুন মাত্রা প্রমাণ করেছেন।

মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রাজায়ায় অনুষ্ঠিত এই ২০তম আসরে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল আলাদা পরিচয় গড়েছে। দেশের এই খেলোয়াড়রা কেবল অংশগ্রহণই করেনি, তারা নিজেদের মধ্যে সেরাদের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন।

পাওয়ারম্যান ডুয়াথলন: শাখা ও নিয়মাবলী

পাওয়ারম্যান মূলত দুই ভাগে বিভক্ত: ক্ল্যাসিক ও শর্ট শাখা।

  • ক্ল্যাসিক শাখায় প্রতিযোগীরা প্রথমে ১০ কিলোমিটার দৌড়ায়, তারপর ৬০ কিলোমিটার সাইক্লিং করে আবার ১০ কিলোমিটার দৌড় দিয়ে ফিনিশলাইন স্পর্শ করে। নির্ধারিত সময় এই শাখা সম্পন্ন করার জন্য ৫ ঘণ্টা ৩০ মিনিট।
  • শর্ট শাখায় অংশগ্রহণকারীদের দৌড়াতে হয় ৫ কিলোমিটার, সাইক্লিং করতে হয় ৩০ কিলোমিটার, এবং শেষের দৌড়টিও ৫ কিলোমিটার। এই শাখার জন্য সময়সীমা নির্ধারিত ৪ ঘণ্টা ৩০ মিনিট।

বাংলাদেশের সেরা পারফরমার: প্রভাত চৌধুরী ও তাবাসসুম ফেরদৌস

বাংলাদেশিদের মধ্যে প্রভাত চৌধুরী (সাব্বিউল হক চৌধুরী) ছিলেন সেরা। ক্ল্যাসিক শাখায় মাত্র ৩ ঘণ্টা ২০ মিনিটে দুর্দান্ত সময় করে সকলের প্রশংসা কুড়ান তিনি। প্রভাত বলেন, “আমার প্রথম আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ছিল এটি। দেশকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরতে পেরে আমি গর্বিত।”

নারীদের মধ্যে সেরাদের তালিকায় ছিলেন তাবাসসুম ফেরদৌস, যিনি ক্ল্যাসিক শাখায় ৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিটে দৌড় শেষ করেন। সিলেটের এই তরুণী ম্যারাথন ও বিভিন্ন কঠিন প্রতিযোগিতায় অংশ নেন এবং এই প্রতিযোগিতা তার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। তিনি জানান, “প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে ডুয়াথলনে অংশ নেওয়া আমার কাছে কঠিন ছিল, তবে থেমে যাইনি।”

শর্ট শাখায় বাংলাদেশি অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সেরা ছিলেন মাসুম বিল্লাহ, যিনি ২ ঘণ্টা ৫ মিনিট ৮ সেকেন্ডে প্রতিযোগিতা সম্পন্ন করেন।

আন্তর্জাতিক সাফল্যের চিত্র: ক্ল্যাসিক ও শর্ট শাখায় চ্যাম্পিয়ন

এই বছর ক্ল্যাসিক শাখার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন ফিলিপাইনের রেমন্ড তরিও, যিনি ২ ঘণ্টা ৫০ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডে ফিনিশ করেন। নারীদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন মালয়েশিয়ার নিজ দেশের প্রতিযোগী এস্থার জয় চেন, যিনি ক্ল্যাসিক শাখায় ৩ ঘণ্টা ১১ মিনিট ৩৮ সেকেন্ড সময় নিয়ে জয়ী হন।

দেশের নারীদের দৃঢ় অবস্থান: ফেরদৌসী আক্তার মারিয়া

গত বছর আয়রনম্যান ৭০.৩ ট্রায়াথলনে সফলতা পাওয়া ফেরদৌসী আক্তার মারিয়া এবারের পাওয়ারম্যানেও অংশ নিয়েছেন। ক্ল্যাসিক শাখায় তার সময় ছিল ৪ ঘণ্টা ১৮ মিনিট ৫৩ সেকেন্ড। তিনি স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্র্যান্ড ‘সেনোরা’র সহযোগিতায় এই যাত্রায় অংশগ্রহণ করেন।

অংশগ্রহণকারীদের অভিজ্ঞতা ও দেশের পরিচিতি

বাংলাদেশি অংশগ্রহণকারী সাইফুল্লাহ সাদেক জানান, “দেশ থেকে অংশ নেওয়া সবাই প্রায় একে অপরের পরিচিত। আমি অন্তত ২৫ জনের সাথে দেখা করেছি এবং সবাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিযোগিতা সম্পন্ন করেছেন।”

পাওয়ারম্যান প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশি অ্যাথলেটদের এই অর্জন দেশের ক্রীড়াঙ্গনে একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেদের দক্ষতা ও ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে তারা প্রমাণ করেছেন, বাংলাদেশি অ্যাথলেটরা বিশ্বের শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় নিজেদের জায়গা করে নিতে পারে।

পাওয়ারম্যান মালয়েশিয়া: ডুয়াথলনের ইতিহাস ও গুরুত্ব

পাওয়ারম্যান হল মালয়েশিয়ার অন্যতম প্রধান ডুয়াথলন ইভেন্ট, যা প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার অ্যাথলেটকে আকৃষ্ট করে। ডুয়াথলন হচ্ছে দৌড় এবং সাইক্লিংয়ের একটি সংমিশ্রণ, যেখানে অ্যাথলেটদের ধৈর্য, গতি ও কৌশল একসঙ্গে পরীক্ষিত হয়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের এই ইভেন্টে অংশ নেওয়া মানেই নিজেদের শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতার উচ্চতা স্পর্শ করা।

বাংলাদেশ থেকে এই পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ ও সফলতা দেশের খেলাধুলার মানোন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে, যা তরুণ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সম্ভাবনা

বাংলাদেশের পাওয়ারম্যান দল আগামী বছর আরও বৃহত্তর অংশগ্রহণের পরিকল্পনা করছে। প্রভাত চৌধুরী ও তাবাসসুম ফেরদৌসের মত সাফল্যপ্রাপ্ত অ্যাথলেটরা দেশ থেকে নতুন নতুন প্রতিভাকে উৎসাহিত করতে কাজ করছেন। তারা দেশের ক্রীড়াঙ্গনে এই ধরনের আন্তর্জাতিক ইভেন্টে নিয়মিত অংশগ্রহণের জন্য প্রশিক্ষণ ও সাপোর্ট ব্যবস্থা গড়ে তুলতে উদ্যোগী।

পাওয়ারম্যান মালয়েশিয়া ২০২৫-এ বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ছিল অত্যন্ত গর্বের। ৩১ জন বাংলাদেশি অ্যাথলেটের মধ্যে যারা অংশ নিয়েছেন, তারা নিজেদের সেরাটা দিয়ে দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন। প্রভাত চৌধুরী, তাবাসসুম ফেরদৌস, মাসুম বিল্লাহ এবং ফেরদৌসী আক্তার মারিয়ার মত ক্রীড়াবিদরা এই যাত্রাকে সফল করে তুলেছেন।

বাংলাদেশের ক্রীড়াক্ষেত্রে এই নতুন অধ্যায় দেশের ক্রীড়াপ্রেমীদের জন্য বড় আশা বয়ে আনছে। আন্তর্জাতিক ইভেন্টে এই ধরনের সাফল্য তরুণদের জন্য দারুণ অনুপ্রেরণা, যা ভবিষ্যতে আরও বড় অর্জনের পথ খুলে দেবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button