বানিজ্য

চাঁদপুরে আড়াই কেজির বিশাল ইলিশ বিক্রি ১৩ হাজার টাকায়

বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশের প্রতি মানুষের আগ্রহ ও ভালোবাসা আগের মতোই অটুট রয়েছে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে ইলিশের সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারে এর দাম আকাশছোঁয়া পর্যায়ে পৌঁছেছে, তবুও বড় আকৃতির ইলিশ পাওয়া গেলে সেটি নিলামে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঠিক এমন একটি ঘটনা ঘটল চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন মাছঘাটে, যেখানে আড়াই কেজি ওজনের একটি ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১৩ হাজার টাকায়।

মেঘনা নদীর ধন: আড়াই কেজির ইলিশের দাম

২৩ জুন সোমবার সকালেই চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাটে জেলেদের জালে ধরা পড়ে বিশাল আকৃতির এক ইলিশ। এই মাছটির ওজন ছিল আড়াই কেজি, যা স্থানীয় মানদণ্ডে বিরল একটি ঘটনা। মেঘনা নদীর এই দানবাকার মাছটি মাছ ব্যবসায়ী উত্তম দাসের আড়তে নিয়ে আসা হয় এবং তারপর নিলামে রাখা হয়। নিলামে প্রায় ১৫ জন ব্যবসায়ী অংশ নেন এবং শেষ পর্যন্ত নবীর হোসেন নামের একজন ব্যবসায়ী ১৩ হাজার টাকায় মাছটি ক্রয় করেন।

নবীর হোসেন জানান, চলতি জুন মাস থেকে জেলেরা মাঝেমধ্যে বড় আকৃতির ইলিশ ধরতে শুরু করেছে, যা আগের বছরগুলোর তুলনায় বেশি উৎসাহব্যঞ্জক। এর আগেও তিনি নিলামে ২ কেজি ৪৮০ গ্রামের ইলিশ ১৩ হাজার ৩৯০ টাকায় কিনেছেন। এতে বোঝা যায় বড় মাছের মূল্য বাজারে কতটা বেড়েছে।

ইলিশের সরবরাহ সংকট ও দাম বৃদ্ধির কারণ

বাংলাদেশে ইলিশ মাছের প্রধান উৎপাদন এলাকা পদ্মা-মেঘনা ও যমুনা নদীর জল, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এসব নদীতে ইলিশের সরবরাহ অনেক কমে গেছে। বিশেষ করে পদ্মা-মেঘনা নদীর ইলিশ প্রায় নেই বললেই চলে। চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবে বরাত সরকার জানিয়েছেন, দক্ষিণাঞ্চল থেকেও এই বছর ইলিশের সরবরাহ অত্যন্ত কম।

সরবরাহ কম হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো নদীর দূষণ, জলবায়ুর পরিবর্তন এবং অবৈধ ও অতিরিক্ত জেলেরা। এছাড়াও নদীর বাঁধ ও জলাধার নির্মাণের কারণে ইলিশের প্রজনন এবং চলাচলে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। এ জন্য ইলিশের উৎপাদন কমে আসছে, যার প্রভাব বাজার মূল্যে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।

বড় ইলিশ পাওয়ার স্বপ্ন এখনো বেঁচে আছে

যদিও সারাদেশে ইলিশের সরবরাহ সংকটের কারণে জেলেরা হতাশ, তবুও জুন মাস থেকে কিছু কিছু বড় আকৃতির ইলিশ ধরা পড়ছে। বিশেষ করে মেঘনা নদীতে এই ধরনের বড় ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে বলে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও জেলেরা জানান। বড় ইলিশ ধরা পড়লে তা বাজারে দ্রুত নিলামে ওঠে এবং দাম তুঙ্গে থাকে।

স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীরা বলেন, বর্তমানে ইলিশের সরবরাহ কম থাকায় দাম স্বাভাবিকের থেকে দ্বিগুণ বা তারও বেশি। তবে বড় ইলিশ বাজারে আসলে তা এক ধরনের স্বস্তি এনে দেয়। ইলিশের দাম বৃদ্ধির পরও এই মাছের চাহিদা কমে না, কারণ দেশের মানুষের মধ্যে ইলিশের জনপ্রিয়তা অপরিসীম।

ইলিশের বাজার পরিস্থিতি ও অনলাইন বিক্রির প্রবণতা

চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন মাছঘাটে বড় ইলিশ নিলামে বিক্রি হলেও সাধারণ মানুষের নাগালে ইলিশের দাম বেশ উচ্চ হয়ে গেছে। তাই অনেকে ইলিশ কিনতে অনলাইন বাজারের দিকে ঝুঁকছেন। অনলাইনে মাছ কেনাবেচার ক্ষেত্রে ক্রেতারা সুবিধা পাচ্ছেন বাসা থেকে সরাসরি ইলিশ কিনতে পারার।

বিশেষ করে বড় ইলিশগুলো অনলাইনে বেশি বিক্রি হচ্ছে, কারণ এসব মাছ সাধারণত বেশি দামি এবং সাধারণ বাজারে পাওয়া কঠিন। অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে একটি সেতুবন্ধনের কাজ করছে, যার মাধ্যমে উভয়ের সুবিধা হচ্ছে।

ইলিশ রক্ষা ও সুরক্ষায় সরকারের উদ্যোগ

সরকার নানা উদ্যোগ নিয়ে ইলিশ সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছে। নদীতে ইলিশের প্রজনন মৌসুমে জেলেদের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা, জলাধার নির্মাণে মনিটরিং বৃদ্ধি, দূষণ কমানোর জন্য পরিবেশ সচেতনতা বাড়ানো ইত্যাদি কাজ চলছে। এছাড়া বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইলিশের প্রজনন ও বৃদ্ধি নিয়ে গবেষণাও চলছে।

জেলেদের জীবনমান উন্নয়নে প্রশিক্ষণ, আধুনিক জাল সরবরাহ, এবং বিকল্প জীবিকা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েও সরকার কাজ করছে যাতে অবৈধ ও অতিরিক্ত মাছ ধরা কমানো যায়।

চাঁদপুরের বড় স্টেশন মাছঘাটে আড়াই কেজি ওজনের ইলিশ ১৩ হাজার টাকায় বিক্রি হওয়া কেবল একটি সংবাদ নয়, এটি ইলিশের বর্তমান সংকট এবং বাজারের অবস্থা তুলে ধরে। যদিও সরবরাহ সংকট রয়েছে, কিন্তু বড় ইলিশ ধরা পড়ার খবর মানুষের আশা বাঁচিয়ে রেখেছে।

দেশে ইলিশের সুষ্ঠু সংরক্ষণ ও বিকাশের জন্য সরকার, জেলেরা, ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণের সমন্বিত প্রচেষ্টা দরকার। ইলিশ না থাকলে আমাদের জাতীয় মাছের ঐতিহ্য হারাবে এবং মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়বে।

তাই ইলিশ সংরক্ষণের জন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে, নদী ও পরিবেশের যত্ন নিতে হবে এবং অবৈধ মাছ ধরাকে রুখতে হবে। আশা করা যায় আগামীদিনে আমাদের নদী থেকে বড় আকৃতির ইলিশ আরও বেশি আসবে এবং দেশের মানুষের ইলিশ ভোগের স্বপ্ন পূরণ হবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button