বিশ্ব

প্রথমবারের মতো ৪র্থ প্রজন্মের খাইবার মিসাইল ব্যবহার করলো ইরান

বিশ্ববাসী এখন তাকিয়ে আছে মধ্যপ্রাচ্যের নতুন এক সামরিক উত্তেজনার দিকে। প্রথমবারের মতো ইরান তাদের সর্বাধুনিক ৪র্থ প্রজন্মের “খাইবার শেকান” হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক মিসাইল ব্যবহার করেছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে। এই অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রটির সফল ব্যবহার ইরানের সামরিক সক্ষমতার একটি বিশাল দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা শুরু করেছেন।

খাইবার শেকান মিসাইল: প্রযুক্তিগত দিক থেকে এক নজর

ইরানের আইআরজিসি বা ইসলামিক রেভোলিউশন গার্ড কর্পস কর্তৃক চালিত এই ক্ষেপণাস্ত্রটির পোশাকি নাম “খোররামশার-ফোর”। এর নাম এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের ঐতিহাসিক খাইবার মরুভূমি থেকে, যা মুসলিম ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। প্রথম প্রকাশিত হয় ২০২২ সালে, এ মিসাইলটি প্রযুক্তিগত দিক থেকে অত্যন্ত উন্নত এবং ঝুঁকি নিরোধী।

বৈশিষ্ট্য:

  • মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল: ২০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্ব পাড়ি দিতে সক্ষম।
  • ওয়ারহেড ক্ষমতা: আনুমানিক ১৫০০ কেজি পর্যন্ত বিস্ফোরক বহন করতে পারে, যা ইরানের সবচেয়ে ভারী মিসাইলগুলোর মধ্যে অন্যতম।
  • হাইপারসনিক গতি: শব্দের গতির চেয়ে প্রায় ১৫ গুণ দ্রুত গতিতে লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম।
  • নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা: উড়ন্ত অবস্থাতেই মিসাইলটির পথ পরিবর্তন ও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব, যা এটিকে অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত কঠিন করে তোলে।

ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ফাঁকি দিতে সক্ষম

ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সর্বাধুনিক করার জন্য বিনিয়োগ করে আসছে। ‘আয়রন ডোম’ এবং ‘ডেভিড’স স্লিং’ এর মতো সিস্টেমগুলো ইসরায়েলের আকাশ সীমান্তকে বহুমাত্রিক সুরক্ষা দিয়ে থাকে। তবে খাইবার মিসাইলের হাইপারসনিক গতি এবং উন্নত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলোকে ফাঁকি দিতে সক্ষম বলে তেহরান দাবি করেছে।

সাম্প্রতিক হামলায় এই মিসাইলগুলো ইসরায়েলের বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বুকে ভাঙন ধরিয়েছে, যা মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক ভারসাম্যের ওপর নতুন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছে।

ইরানের সামরিক উৎকর্ষের পেছনে প্রযুক্তিগত চমক

ইরান প্রায় চার দশক ধরে পশ্চিমা বিশ্বের কঠোর অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ে আছে। তবুও, দেশটি তাদের সামরিক প্রযুক্তি উন্নয়নে অবিচল রয়েছে। বিশেষ করে হাইপারসনিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ইরান অত্যন্ত দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে, যা বিশ্ব মহলের নজর কাড়ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও ইরান কিভাবে এই ধরনের অত্যাধুনিক মিসাইল তৈরি করল তা নিয়ে তীব্র গবেষণা চলছে। ইরান নিজেদের স্বনির্ভরতা বৃদ্ধি এবং বিদেশি প্রযুক্তির বিকল্প পথ খুঁজে পেতে সক্ষম হয়েছে। এতে করে তাদের সামরিক সক্ষমতা এক নতুন মাত্রা পেয়েছে।

খাইবার শেকান মিসাইলের সম্ভাব্য প্রভাব ও ভবিষ্যত যুদ্ধক্ষেত্রে ভূমিকা

১. মধ্যপ্রাচ্যের শক্তির ভারসাম্য পরিবর্তন: ইরানের এই আধুনিক মিসাইল প্রযুক্তি প্রতিবেশী দেশগুলো এবং ইসরায়েলের জন্য নতুন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
২. বিশ্ব সামরিক প্রতিযোগিতায় পরিবর্তন: হাইপারসনিক মিসাইল তৈরি ও সফল ব্যবহারে ইরান বিশ্বব্যাপী সামরিক শক্তি প্রদর্শন করছে, যা অন্য দেশগুলোর প্রতিরক্ষা নীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে।
৩. ভবিষ্যতের সামরিক কৌশল: উচ্চ গতিসম্পন্ন ও নির্ভুল ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধের গতি এবং গতিপথ পরিবর্তনের কৌশল সম্পূর্ণরূপে পাল্টে দিতে পারে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও পরবর্তী পরিস্থিতি

ইসরায়েলসহ পশ্চিমা দেশগুলো ইরানের এই নতুন প্রযুক্তির ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা আরও নাজুক হয়ে উঠতে পারে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা পরিস্থিতি মনিটর করছে এবং সম্ভাব্য উত্তেজনা বৃদ্ধি রোধে চেষ্টা চালাচ্ছে।

তবে, ইরানের পক্ষ থেকে স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে তারা তাদের সামরিক উন্নয়ন থামানোর ইচ্ছা রাখে না এবং ভবিষ্যতেও নিজেদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।

সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা ও সমাপনী কথা

ইরানের প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা ৪র্থ প্রজন্মের খাইবার শেকান হাইপারসনিক মিসাইল আন্তর্জাতিক সামরিক প্রযুক্তির একটি নতুন অধ্যায় সূচিত করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য এটি একটি বড় সংকেত। প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে ইরানের সামরিক কৌশল বিশ্বের বহু দেশের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে।

  • ইরান ব্যবহার করল অত্যাধুনিক ৪র্থ প্রজন্মের হাইপারসনিক খাইবার শেকান মিসাইল।
  • ইসরায়েল হামলায় সফলভাবে আঘাত হানে, যা তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ফাঁকি দিতে সক্ষম।
  • মিসাইলটি ২০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বে যেতে পারে ও ১৫০০ কেজি ওয়ারহেড বহন করে।
  • ইরান পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নিজস্ব প্রযুক্তি উন্নয়নে সক্ষম হয়েছে।
  • মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক ভারসাম্য ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলবে এই উন্নয়ন।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button