নির্মম আত্মঘাতী বোমা হামলায় দামেস্কের গির্জায় নিহত ২০, আহত শতাধিক

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের ডুওয়েইলা এলাকার মার এলিয়াস গির্জায় রোববার এক নির্মম আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ২০ জন নিহত এবং ৫২ জন গুরুতর আহত হয়েছে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। হামলাটি সিরিয়ার প্রার্থনালয়ে ঘটে, যখন গির্জায় ধর্মপ্রাণ মানুষজন প্রার্থনায় ব্যস্ত ছিলেন।
গির্জায় কী ঘটেছিল?
সিরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি অফিসিয়াল বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এক ব্যক্তি প্রার্থনালয়ে প্রবেশ করে প্রথমে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি চালাতে শুরু করে। এরপর তিনি নিজের শরীরে বেঁধে রাখা বিস্ফোরক ভেস্টটি ফাটিয়ে দেয়, যা প্রাণঘাতী ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি করে। এতে গির্জার ভেতর থেকে শুরু করে আশপাশের এলাকা পর্যন্ত ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
ঘটনাস্থলে থাকা একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, “একজন লোক হাতে বন্দুক নিয়ে গির্জায় ঢুকে গুলি চালানো শুরু করে। তাকে থামানোর চেষ্টা করার সময় সে নিজেকে উড়িয়ে দেয়।” পাশের দোকানের একজন কর্মীও জানান, গির্জার ভেতর আগুন লেগেছিল এবং কাঠের বেঞ্চের টুকরো গির্জার দরজার কাছে পড়ে যায়।
হামলাকারীর পরিচয় ও দায় স্বীকার
সরকারি সূত্র জানিয়েছে, হামলাকারী ব্যক্তি আইএস (ইসলামিক স্টেট) জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। তবে এখনও পর্যন্ত আইএস এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। সিরিয়ান সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ গির্জার ভেতরের ক্ষয়ক্ষতির ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে দেখা যায় রক্তাক্ত মেঝে, ভাঙা বেঞ্চ এবং ছিন্নভিন্ন কাচের টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও তদন্ত
হামলার পর গির্জার চারপাশে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে এবং দ্রুত তদন্ত শুরু করেছে। সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, যারা এই নৃশংস হামলা চালিয়েছে তাদের দ্রুত শনাক্ত ও গ্রেফতার করা হবে।
দামেস্কে আত্মঘাতী হামলার প্রথম ঘটনা
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর ডিসেম্বর মাসে সিরিয়ায় বিদ্রোহী গোষ্ঠী প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের ক্ষমতা থেকে উৎখাতের চেষ্টা চালিয়েছিল। তারপর থেকে দামেস্কে এটিই প্রথম বড় আত্মঘাতী হামলা। এই হামলা সিরিয়ার বেসামরিক জনগণের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
সিরিয়ার বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি
সিরিয়া দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক সংঘাত ও গৃহযুদ্ধের আগুনে ঝলসানো দেশ। দেশটির অনেক অংশ এখনও বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের অঙ্গীকারস্থল। সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক নিরাপত্তার কারণে অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল ছিল, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সেখানেও বোমা হামলার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইএস এবং অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো এখনো সিরিয়ার বিভিন্ন স্থানে সক্রিয়। তারা নিজেদের অস্তিত্ব ধরে রাখতে চাইলে এই ধরনের হামলা চালাতে পারে। সিরিয়ার সরকার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো শান্তি প্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
দামেস্কে গির্জায় এই নৃশংস হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বিশ্বজুড়ে অনেক দেশ এ ঘটনার নিন্দা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স এবং মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ সিরিয়ার জনগণের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছে এবং জঙ্গি সন্ত্রাস দমনের জন্য একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে।
ধর্মীয় সহনশীলতার প্রতি হুমকি
গির্জায় হামলা হওয়ার বিষয়টি সিরিয়ার নানান ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। সিরিয়া বহু বছর ধরেই বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর মিলনমেলা ছিল। এই হামলা ধর্মীয় সহনশীলতার ওপর একটি সরাসরি আঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে। ধর্মীয় নেতা ও মানবাধিকার কর্মীরা এই ধরনের সহিংসতা দ্রুত বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
সুরক্ষিত গির্জার জন্য করণীয়
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সিরিয়ার মতো সংকটপূর্ণ অঞ্চলে গির্জাসহ ধর্মীয় স্থাপনা ও জনসমাগমের স্থানগুলোর নিরাপত্তা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি। প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত সশস্ত্র নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন এবং গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানে উন্নতি করলে ভবিষ্যতে এমন হামলা প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
২০২৫ সালের ২৩ জুন সিরিয়ার দামেস্কের মার এলিয়াস গির্জায় এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ২০ জন নিহত ও ৫২ জন আহত হয়েছে। হামলাকারী ইসলামিক স্টেটের সাথে যুক্ত বলে অনুমান করা হলেও এখনো তারা দায় স্বীকার করেনি। গির্জার ভিতর এবং আশেপাশের এলাকা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দামেস্কে এটি প্রথম বড় আত্মঘাতী হামলা হওয়ায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এবং তদন্ত শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সিরিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে।