ইরানে বোমা ফেলে মার্কিন ঘাঁটিতে ফিরল একটি বি-২ বোমারু বিমান

২৩ জুন ২০২৫, ইরানে মার্কিন সামরিক বাহিনী এক নজিরবিহীন বিমান হামলা চালিয়েছে, যেটি ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’ নামে পরিচিত। এ অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমানগুলো সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। সফল অভিযান শেষে মার্কিন সেনাবাহিনীর এসব বিমান নিরাপদে যুক্তরাষ্ট্রের মিজৌরি রাজ্যের ঘাঁটিতে ফিরে এসেছে।
গত রোববার সন্ধ্যায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করে জানান, বি-২ বোমারু বিমানের পাইলটরা নিরাপদে দেশে ফিরেছেন। তিনি লিখেছেন, “দারুণ দক্ষ ও সাহসী বি-২ পাইলটরা সফলভাবে মিশন শেষ করে এখন মিজৌরিতে অবতরণ করেছেন। তাদের অসাধারণ কাজের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।”
‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’ এর বিশাল সেনাসামরিক পরিকল্পনা
এই অপারেশনে মোট সাতটি বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান অংশ নেয়, যেগুলোকে ঘিরে ছিল এক বৃহৎ বিমানবাহিনী। মোট উড়োজাহাজের সংখ্যা ছিল ১২৫টিরও বেশি। এখানে শুধু বোমারু বিমানই নয়, বরং জ্বালানি ভরার ট্যাংকার, নজরদারি বিমানো ও বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধবিমানও ছিল।
প্রতিটি বি-২ বিমান দুটি করে অত্যাধুনিক বাংকার-বিধ্বংসী বোমা বহন করে, যার প্রতিটির ওজন প্রায় ৩০ হাজার পাউন্ড। এই বোমাগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা যে, তা ইরানের ভূগর্ভস্থ ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনার মতো শক্তিশালী ও গোপন সুরক্ষিত স্থাপনা ধ্বংস করতে সক্ষম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরণের বোমা ছাড়া ফর্দো’র মত পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করা প্রায় অসম্ভব।
ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা: ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান
গত শনিবার রাতের অভিযান শেষে মার্কিন সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, ইরানের ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনায় তারা হামলা চালিয়েছে। বিশেষ করে ফর্দো স্থাপনাটি ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ করা হয়েছে বলে তারা জানিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “এই হামলা ছিল অত্যন্ত সফল। ইরান যদি শান্তিপূর্ণ আলোচনায় না আসে, তাহলে ভবিষ্যতে আরও কঠোর হামলা হবে।” তিনি এও সতর্ক করেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক প্রোগ্রামকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করার পথে যে কোনো সময় আরও পদক্ষেপ নিতে পারে।
ইরানের প্রতিক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি
ইরান এই হামলাকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। তেহরান থেকে বলা হয়েছে, এই হামলা ‘ক্ষমার অযোগ্য’ এবং এর বিরুদ্ধে তারা কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাবে। ইরানের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় ‘কোনো মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি’ হয়নি কারণ আগেই নিরাপত্তার কারণে ওই স্থাপনাটি খালি করা হয়েছিল।
তেহরান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছে এবং দাবি করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই আগ্রাসন পুরো মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি।
মার্কিন বোমারু বিমানের প্রযুক্তি ও কৌশল
বি-২ স্টেলথ বোমারু বিমান যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সর্বাধুনিক বিমান। এটি স্টেলথ প্রযুক্তির মাধ্যমে শত্রুর রাডার নজর এড়াতে সক্ষম। দীর্ঘ দূরত্বে অগ্রসর হতে পারে এবং গোপনে হামলা চালাতে পারে।
এর দুইটি প্রাথমিক লক্ষ্য—অত্যন্ত সুরক্ষিত শত্রুর কেন্দ্রস্থল ও ভূগর্ভস্থ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও পারমাণবিক অবকাঠামো ধ্বংস করা।
এই প্রযুক্তির কারণে ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’ অভিযানটি এতটা সফল হয়েছে বলে সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
ইরান-মার্কিন সম্পর্কের বর্তমান পরিস্থিতি
২০১৮ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসে এবং নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর পর থেকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক চরম অবনতির মধ্যে রয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যে এই ধরনের সামরিক সংঘর্ষ পূর্ববর্তী কয়েকবার ঘটলেও, এইবারের হামলা ছিল আকারে ও প্রযুক্তিতে সবচেয়ে শক্তিশালী এবং তাৎপর্যপূর্ণ।
বিশ্লেষকদের মতে, এটি দুই দেশের মধ্যকার দ্বন্দ্ব আরও দীর্ঘস্থায়ী এবং জটিল করে তুলতে পারে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
এই বিমান হামলার পর জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অনেক দেশ শান্তি স্থাপনে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথ থেকে ফিরে না আসে, তাহলে কঠোর পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে।
বিশ্ব সম্প্রদায় এখন gespannt যে, ভবিষ্যতে ইরান-মার্কিন সংঘাত কোন দিকে গড়াবে এবং মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন পরিবর্তিত হবে।
‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’ নামে পরিচিত এই মার্কিন বিমান হামলা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই উদ্যোগ ভূ-রাজনৈতিক দুনিয়ায় নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। তেহরান থেকে কঠোর প্রতিবাদের পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ আলোচনার জন্যও আহ্বান জানানো হয়েছে।
এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ শান্তির জন্য একটি বড় সংকট হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশ্বের নজর এখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে রয়েছে।