বিনোদন

মৌসুমী, বাপ্পারাজ, তিশাসহ নামী অভিনেতাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ

বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মৌসুমী, বাপ্পারাজ (রেজাউল করিম), তিশা, নুসরাত ফারিয়া, সাবিলা নূর, শবনম পারভীন, ও বিশিষ্ট শিল্পী আহমেদ শরীফসহ মোট ২৫ জনের ব্যাংক হিসাব জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জব্দ করেছে। কর অঞ্চল-১২ কর্তৃক সময়মতো কর পরিশোধ না করায় এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এই সংবাদটি প্রকাশিত হয় ২২ জুন ২০২৫ তারিখে।

নামি তারকাদের ব্যাংক হিসাব কেন জব্দ হলো?

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ১৫ জুন ২০২৫ তারিখে একটি প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে জানায়, মোট ২৫ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। এই তালিকায় বাংলা চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের জনপ্রিয় কয়েকজন অভিনেতা-অভিনেত্রীর নাম রয়েছে। কর অঞ্চলের সূত্রে জানা গেছে, কর বকেয়া এবং সময়মতো কর পরিশোধে অনীহা বা বিলম্বের কারণে এই ব্যাংক হিসাব জব্দের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

জব্দের প্রেক্ষাপট ও কর আইন

বাংলাদেশে কর আইন কঠোর। কর ফাঁকি দিলে বা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কর না দিলে, এনবিআর তাদের ব্যাংক হিসাব, সম্পদ ও অন্যান্য অর্থনৈতিক উৎস জব্দ করার অধিকার রাখে। এর উদ্দেশ্য হলো কর আদায়ের মাধ্যমে সরকারী রাজস্ব নিশ্চিত করা এবং অন্যদের জন্য একটি আদর্শ স্থাপন করা।

কর অঞ্চল-১২ এ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সময়মতো কর পরিশোধ না করায় এই তারকাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। তবে কর পরিশোধ করলে আবার ব্যাংক হিসাব ফিরিয়ে নেওয়া হবে।

কারা রয়েছেন তালিকায়?

  • মৌসুমী: বাংলা চলচ্চিত্রের শীর্ষস্থানীয় নায়িকা, বর্তমানে আমেরিকায় অবস্থান করছেন।
  • রেজাউল করিম (বাপ্পারাজ): জনপ্রিয় গায়ক ও অভিনেতা।
  • নুসরাত ফারিয়া: মডেল ও অভিনেত্রী।
  • সাবিলা নূর: মডেল ও অভিনেত্রী।
  • নুসরাত ইমরোজ তিশা: দেশের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী।
  • শবনম পারভীন: বাঙালি চলচ্চিত্রের প্রখ্যাত অভিনেত্রী।
  • আহমেদ শরীফ: সঙ্গীতশিল্পী ও গায়ক।

এদের পাশাপাশি আরও অন্যান্য অভিনেতা-অভিনেত্রী ও শিল্পী রয়েছেন এই তালিকায়, যাদের নাম এনবিআর এখনো প্রকাশ করেনি।

তারকাদের প্রতিক্রিয়া ও তাদের অবস্থান

এখন পর্যন্ত মৌসুমী বিদেশে থাকার কারণে এই বিষয়ে কোন প্রতিক্রিয়া দেননি। বাকি নামজাদাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। তারা কেন সময়মতো কর পরিশোধ করেননি বা জব্দের বিষয়ে তাদের বক্তব্য জানা যায়নি।

কর পরিশোধের গুরুত্ব ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা

বাংলাদেশের বিনোদনশিল্প ধীরে ধীরে পেশাদার রূপ নিচ্ছে। এর সঙ্গে সঙ্গে শিল্পীদের করদায়িত্ব পালন করাও জরুরি হয়ে পড়েছে। কর পরিশোধের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব এবং সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পায়। এই প্রেক্ষিতে, শিল্পীদের করদায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হওয়া খুবই প্রয়োজন।

এনবিআর জানিয়েছে, কর পরিশোধ করা হলে ব্যাংক হিসাব থেকে জব্দ মুক্তি দেওয়া হবে। তাই সংশ্লিষ্ট তারকাদের উচিত দ্রুত কর পরিশোধ করে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ লাভ করা।

ব্যাংক হিসাব জব্দের পরিণতি কী?

ব্যাংক হিসাব জব্দ মানে ওই হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন, লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়। কোনো লেনদেন করাও কঠিন হয়ে পড়ে। এতে তারকারা আর্থিক সংকটে পড়তে পারেন। ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনায়ও অসুবিধা হতে পারে।

বাংলাদেশে অনেক সময় বড় বড় শিল্পপতি বা বিনোদন তারকাদের করদায়িত্ব নিয়ে বিতর্ক হয়। তবে কর পরিশোধে বিলম্ব হলে এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়।

কিভাবে কর পরিশোধ করলে ঝামেলা মুক্তি পাওয়া যাবে?

কর আইন অনুসারে, প্রত্যেক করদাতার বাধ্যবাধকতা কর সময়মতো জমা দেওয়া। যদি কর জমা না হয়, তাহলে এনবিআর প্রথমে সতর্ক করে, তারপর কঠোর ব্যবস্থা নেয়। ব্যাংক হিসাব জব্দ একটি কঠিন ব্যবস্থা, যেটা কর আদায়ের জন্য নেয়া হয়।

শিল্পীদের উচিত তাদের আয়, আয়ের উৎস এবং কর সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য যথাযথভাবে রেকর্ড রাখা এবং সময়মতো কর পরিশোধ করা।

সামগ্রিক পরিস্থিতি: কর ও বিনোদন জগত

বাংলাদেশের বিনোদন জগতের অনেক তারকা আয়ের বড় উৎস হলেও করের প্রতি দৃষ্টি কম দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। সরকার করের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন প্রকল্প চালায়। শিল্পীদের কর পরিশোধে সচেতন হলে সামগ্রিক বিনোদন খাতের উন্নতি সম্ভব।

এনবিআর-এর এই পদক্ষেপ শিল্পীদের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে। এটি প্রমাণ করে যে কেউই কর ফাঁকি দিতে পারবে না।

মৌসুমী, বাপ্পারাজ, তিশাসহ অন্যান্য তারকার ব্যাংক হিসাব জব্দের খবর দেশের বিনোদন জগতের জন্য বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর পরিশোধের গুরুত্ব ও সময়মতো কর পরিশোধ না করলে কি ধরনের আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয় তা এই ঘটনা স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে।

এবার সময় এসেছে দেশের প্রতিটি শিল্পী, তারকা ও করদাতার করদায়িত্ব পালনে সচেতন হওয়ার। এতে দেশের আর্থিক উন্নয়ন হবে এবং শিল্পীদের সম্মানও বৃদ্ধি পাবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button