ক্রিকেট

দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি জুটি মুশফিক–নাজমুলের, এমনকিছু আগে দেখেনি বাংলাদেশ

ক্রিকেটের ১৪৮ বছরের টেস্ট ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায় লিখলেন বাংলাদেশের দুই ক্রিকেট তারকা মুশফিকুর রহিম ও নাজমুল হোসেন। গল টেস্টে তারা দুই ইনিংসেই চতুর্থ উইকেটে জোড়া সেঞ্চুরি জুটি গড়ে দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়ে এক অনন্য স্ফূর্তি যোগ করেছেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটে এমন নজির আগে দেখা যায়নি।

গল টেস্টে মুশফিক-নাজমুলের জোড়া সেঞ্চুরি

গল টেস্টের প্রথম ইনিংসে মুশফিকুর রহিম ও নাজমুল হোসেন ২৬৪ রানের বিশাল জুটি গড়েন। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসেও তাদের জুটি থাকে ১০৯ রান, যা একত্রে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এক বিরল কীর্তি হিসেবে লিপিবদ্ধ হলো। এই দুই ইনিংসের জোড়া সেঞ্চুরি জুটি বাংলাদেশকে নতুন এক মাত্রায় নিয়ে গেছে।

বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন নিজেও টেস্ট ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ নামের তালিকায় জায়গা করে নিলেন। ১৪৮ বছরের টেস্ট ক্রিকেটে মাত্র ১৫ জন ক্রিকেটার এমন কীর্তি গড়েছেন যারা একাধিকবার জোড়া সেঞ্চুরি করেছেন। নাজমুল সেই নির্বাচিত তালিকায় ঢুকেছেন দ্বিতীয়বার জোড়া সেঞ্চুরি করার মাধ্যমে।

বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে সেঞ্চুরি জুটির ইতিহাস

বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে মোট ১০৬টি সেঞ্চুরি জুটি গড়া হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু ম্যাচে তিনটি বা তারও বেশি সেঞ্চুরি জুটি দেখা গেছে। তবে, কোনো এক ম্যাচে দুইবার সেঞ্চুরি জুটি গড়ার নজির ছিল না, যতক্ষণ না গল টেস্টে মুশফিক ও নাজমুলের এই অসাধারণ পারফরম্যান্স।

এই ম্যাচে বাংলাদেশের তিনটি সেঞ্চুরি জুটি ছিল — মুশফিক-নাজমুলের দুটি এবং প্রথম ইনিংসে মুশফিক-লিটনের একটি। এই সাফল্য থেকে বোঝা যায় বাংলাদেশের ব্যাটিং শক্তি ক্রমেই বাড়ছে এবং তারা বিশ্ব পর্যায়ে বড় বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত।

বিশ্বের বিখ্যাত জোড়া সেঞ্চুরি জুটির সঙ্গে তুলনা

টেস্ট ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানদের জোড়া সেঞ্চুরির ঘটনা মোট ৯৬টি। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক (৫১টি) জুটিতে এসেছে। এই ধরণের কীর্তি শুরু হয়েছিল ১৯২৪ সালে, যখন সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জ্যাক হবস ও হার্বার্ট সাটক্লিফ প্রথম ইনিংসে ১৫৭ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ১১০ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়ে।

ইতিহাসে মাত্র দুইটি জুটি রয়েছে যারা একাধিকবার জোড়া সেঞ্চুরি গড়েছেন। প্রথমটি লেন হাটন ও সিরিল ওয়াশব্রুক, যাদের কীর্তি ১৯৪৭ সালে অ্যাডিলেডে এবং ১৯৪৮ সালে হেডিংলিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ছিল। দ্বিতীয় জুটি দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডি ভিলিয়ার্স ও জ্যাক ক্যালিসের, যারা ২০০৮ ও ২০১০ সালে অসাধারণ পারফরম্যান্স প্রদর্শন করেছিলেন।

নাজমুল-মুশফিক জুটির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

মুশফিকুর রহিম ও নাজমুল হোসেনের জোড়া সেঞ্চুরির কীর্তি বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তারা কি লেন হাটন-ওয়াশব্রুক কিংবা এবি ডি ভিলিয়ার্স-ক্যালিসদের মতো ক্রিকেট ইতিহাসে দীর্ঘস্থায়ী নাম লিখাতে পারবেন? সেটাই এখন ক্রিকেট বিশ্ব ও বাংলাদেশ ক্রিকেটপ্রেমীদের আগ্রহের কেন্দ্রে।

তাদের পারফরম্যান্সে জাতীয় দলের শক্তি বেড়েছে, যা আগামী টেস্ট সিরিজ ও বিশ্বকাপের জন্য আশাব্যঞ্জক। নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটাররাও এদের থেকে প্রেরণা নিয়ে নিজেদের উন্নত করার সুযোগ পাবে।

বাংলাদেশের ক্রিকেটে এই অর্জনের গুরুত্ব

বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোচ্ছে। গল টেস্টে মুশফিক-নাজমুলের এই কীর্তি দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম সেরা সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের জন্য এটি গর্বের বিষয় এবং ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নির্মাণে মাইলফলক।

মুশফিকুর রহিম ও নাজমুল হোসেনের জোড়া সেঞ্চুরি জুটি শুধু একটি ম্যাচের অর্জন নয়, এটি বাংলাদেশের ক্রিকেটের স্বপ্নের প্রতিফলন। তাদের অবিস্মরণীয় পারফরম্যান্স দেশের ক্রিকেটকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে, যা দীর্ঘদিন স্মরণীয় থাকবে।

এই জুটি থেকে পাওয়া প্রেরণায় বাংলাদেশের ক্রিকেট আরো শক্তিশালী হবে এবং ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মহারথীদের তালিকায় নিজেদের জায়গা করে নেবে বলে আশা করা যায়।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button