বিশ্ব

প্রেসক্লাবের সামনে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করল পুলিশ, সাউন্ড গ্রেনেড-জলকামান নিক্ষেপ

মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য অনুষ্ঠিত ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রার্থীরা সকলকে সনদ প্রদানের দাবি জানিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করে। এসময় পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপ করে। ঘটনাটি ঘটে রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে।

প্রায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় প্রেসক্লাব এলাকা অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা। তারা অভিযোগ করেন, ৮৩ হাজার পরীক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ২৩ হাজারকে ইচ্ছাকৃতভাবে ফেল করা হয়েছে। তারা তাদের ন্যায্য সনদ পাওয়ার অধিকার দাবি করে।

১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার পটভূমি এবং পরীক্ষার্থীদের দাবি

২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন মৌখিক পরীক্ষায় মোট ৮৩ হাজার প্রার্থী অংশগ্রহণ করেছিলেন। এর মধ্যে প্রায় ২৩ হাজার প্রার্থী উত্তীর্ণ হতে পারেননি। উত্তীর্ণ না হওয়া পরীক্ষার্থীরা জানান, তাঁদের বিরুদ্ধে অবিচার হয়েছে এবং অনেকেই স্বচ্ছ ও ন্যায্যতার অভাবে ফেল করে দেওয়া হয়েছে।

তাদের দাবি – তারা সকলেই মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও সনদ না পাওয়ায় চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। ফলে তারা তাদের স্বীকৃত সনদ প্রদানের জন্য আন্দোলনে নেমেছেন।

আন্দোলন চলাকালীন পুলিশি ব্যবস্থা ও পরিস্থিতি

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ রমনা জোনের এডিসি (সহকারী পুলিশ কমিশনার) জিসানুল হক জানান, সকাল সাড়ে ১০টায় বিক্ষোভকারীরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে উপস্থিত হন এবং যানজট সৃষ্টি করে। এক ঘণ্টারও বেশি সময় তারা সড়ক অবরোধ করে।

পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাধ্য হয়ে সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এডিসি জিসানুল হক আরও বলেন, “আমাদের কর্মীদের ওপর কোনো ধরনের লাঠিপেটা বা মারধর করা হয়নি।”

শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের কারণ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কাছে অনেক প্রার্থী দাবি করেন, তাদের মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল অনিয়ম ও পক্ষপাতমূলক হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, রাজনৈতিক প্রভাব কিংবা দূর্নীতি তাদের পরীক্ষা ফলাফলে প্রভাব ফেলেছে।

বিক্ষোভকারীরা সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন, তারা যেন তাদের মৌখিক পরীক্ষার সনদ প্রদানের মাধ্যমে চাকরি নিশ্চিতে সহায়তা করেন। পাশাপাশি তারা ন্যায্যতার ভিত্তিতে পুনঃমূল্যায়ন বা পুনঃপরীক্ষার আয়োজনের দাবি তুলেছেন।

শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার গুরুত্ব এবং দেশের শিক্ষা খাতে প্রভাব

শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার মাধ্যমে দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করা হয়। এটা একটি সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়া যেখানে প্রার্থীদের মৌখিক ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়।

যদিও প্রতি বছর হাজার হাজার প্রার্থী এই পরীক্ষায় অংশ নেন, তবুও ন্যায্যতার অভাবে অনেকেই বঞ্চিত হন। এতে শিক্ষার মান উন্নয়ন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। শিক্ষকদের মর্যাদা ও চাকরির নিরাপত্তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন থেকেই যায়।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

শিক্ষাবিদরা মনে করেন, শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে হবে। যাতে প্রতিটি প্রার্থী তার যোগ্যতার ভিত্তিতে সুযোগ পায়। বিশেষ করে মৌখিক পরীক্ষায় নানা প্রভাবশালী ও অনিয়মের অভিযোগ উঠলে তা শিক্ষাব্যবস্থার জন্য ক্ষতিকর।

একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ বলেন, “শিক্ষক হলেন জাতির মেরুদণ্ড। তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনোভাবেই অবিচার বা অনিয়ম থাকা চলবে না। প্রার্থীদের প্রতি অন্যায় করলে এর প্রতিক্রিয়া শিক্ষার্থীদের উপরে পড়ে।”

সামাজিক মাধ্যমে উত্তাপ এবং জনমত

ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমে এই বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। অনেক ব্যবহারকারী শিক্ষক প্রার্থীদের পক্ষ নিয়ে তাদের ন্যায্য দাবির সমর্থনে পোষ্ট দিয়েছেন। কেউ কেউ পুলিশের কঠোর অবস্থানের সমালোচনা করেছেন।

একটি ট্রেন্ডিং হ্যাশট্যাগ #TeachersRightNow বাংলাদেশের টুইটার ও ফেসবুকে শীর্ষ ট্রেন্ডে উঠেছে। এতে দাবি জানানো হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের প্রতি দয়া ও ন্যায়িক বিচার করতে হবে।

সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া

এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি পাওয়া যায়নি। তবে জানা গেছে, তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে পারে। পাশাপাশি পরীক্ষা পরিচালনায় কোনো অনিয়ম থাকলে তা দৃষ্টিগোচর করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

সরকার শিক্ষার্থীদের আইনি অধিকার ও চাকরির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলেছে। তারা আশা করে, প্রতিবাদের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে।

বিশ্লেষণ: শিক্ষাব্যবস্থায় প্রভাব ও ভবিষ্যৎ করণীয়

১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার বিতর্ক শিক্ষা খাতে নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। এই সংকট দ্রুত সমাধান না হলে তা দেশের শিক্ষার মানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত শিক্ষকদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করা, যাতে শিক্ষার্থীরা অবিচারে বঞ্চিত না হয়। মৌখিক পরীক্ষা এবং ফলাফল যাচাই প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী এবং নিরপেক্ষ হওয়া প্রয়োজন।

এছাড়া শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু পরামর্শ ও আইনি সহায়তা দেওয়া দরকার যাতে তারা তাদের অধিকার আদায় করতে পারে।

শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার ফলাফলের অধিকার রক্ষা ও সনদ প্রদানের দাবিতে ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার্থীদের বিক্ষোভ এবং পুলিশি পদক্ষেপ দেশজুড়ে শিখর নিয়ে এসেছে। এই ইস্যুতে শিক্ষাব্যবস্থা ও নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সময়ের দাবি।

সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ প্রত্যাশিত যাতে দেশের লক্ষাধিক শিক্ষার্থী ন্যায়সঙ্গত চাকরির সুযোগ পায় এবং দেশের শিক্ষা উন্নয়ন অব্যাহত থাকে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button