ফুটবল

জুড নয়, ল্যাম্পার্ডকেও মনে করালেন বেলিংহাম

ফুটবল দুনিয়ায় যখন নতুন প্রতিভারা নিজেদের স্বতন্ত্র পরিচয় গড়ে তুলছে, তখন বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের জোব বেলিংহাম সেই ধারা থেকে আলাদা হয়ে উঠেছেন। বড় ভাই জুড বেলিংহামের সঙ্গে তুলনা থাকবেই, কিন্তু জোব নিজেই প্রমাণ করেছেন যে তিনি কেবল বড় ভাইয়ের ছায়া নয়, বরং নিজের একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যত তৈরি করতে যাচ্ছেন। সম্প্রতি ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে ডর্টমুন্ডের হয়ে অভিষেক ম্যাচে গোল করে ফুটবল প্রেমীদের মন জয় করেছেন ১৯ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার।

জুড বেলিংহামের পথেই হাঁটছেন ছোট ভাই জোব

প্রায় চার বছর নয় মাস আগে, ২০১৯ সালে জুড বেলিংহাম প্রথমবার ডর্টমুন্ডের প্রথম একাদশে খেলতে নেমে গোল করেছিলেন। সেই ম্যাচে প্রতিপক্ষ ছিল ডুইসবুর্গ, আর ম্যাচের ফলাফল ৫-০ ছিল ডর্টমুন্ডের পক্ষে। ঠিক সেই পথেই এবার জোব বেলিংহাম হাঁটলেন। ১৯ বছরের এই ফুটবলার ২০২৫ সালের জুনে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্লাব মামেলোদি সানডাউনসের বিপক্ষে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে প্রথম একাদশে সুযোগ পেয়ে গোল করেন। যদিও জুডের তুলনায় গোল পেতে তিনি ১৫ মিনিট বেশি সময় নিয়েছেন, তবে তাঁর আত্মবিশ্বাস এবং খেলার ধারা নজরকাড়া।

গোল উদযাপনে ভাইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা

জোবের গোল উদযাপনে তিনি ছোট ভাই হিসেবে বড় ভাই জুড বেলিংহামকে স্মরণ করেন, যা ফুটবল প্রেমীদের মনে গেঁথে যায় পরিবারের আন্তরিকতার চিত্র। ডর্টমুন্ডের হয়ে খেলতে শুরু করার পর থেকেই জুডের নৈপুণ্য এবং খেলায় আত্মবিশ্বাসের কারণে অনেকের কাছে জুড একটি আদর্শ। জোব তার পারফরম্যান্স দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে, তিনি শুধু তুলনায় থাকবেন না, বরং নিজেদের পরিচয় গড়ে তুলবেন।

ম্যাচ বিশ্লেষণ: জোব বেলিংহামের গোল এবং ডর্টমুন্ডের জয়

ম্যাচের শুরুতে সানডাউনস ১১ মিনিটে প্রথম গোল করে এগিয়ে যায়। কিন্তু এরপর ডর্টমুন্ডের মাঝমাঠের যুব তারকা জোব বেলিংহাম দ্রুত গোল করে দলের মনোবল বাড়ান। ম্যাচের প্রথমার্ধ ৩-১ ব্যবধানে শেষ হয় ডর্টমুন্ডের পক্ষে। দ্বিতীয়ার্ধে আরও একটি গোল যুক্ত করে ৪-১ স্কোর তৈরি করে দল। যদিও শেষ দিকে সানডাউনস তিনটি গোল করতে সক্ষম হয়, শেষ পর্যন্ত ৪-৩ ব্যবধানে জয় নিশ্চিত করে ডর্টমুন্ড।

জোব গোলের পরে ম্যাচ শেষে ডিএজেডএনকে বলেছেন, “এই গোল আমার জন্য দারুণ বোনাস ছিল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমরা জিতেছি। আমার এবং দলের আরও শেখার এবং উন্নতির সুযোগ রয়েছে, তবে আমি আমার পারফরম্যান্স নিয়ে সন্তুষ্ট।”

ছোটবেলা থেকে গোল করার অনুশীলন, ভবিষ্যতের বড় ফুটবলার

জোব বেলিংহাম জানিয়েছেন, তার এই গোল আসলে দীর্ঘদিন ধরে তার অনুশীলনের ফল। ছোটবেলা থেকেই তিনি বক্সে সঠিক সময়ে ঢুকতে শিখেছেন। সান্ডারল্যান্ডে থাকা অবস্থায় অনুশীলন শুরু হয়েছিল, যা আজ তার এই সাফল্যের মূল কারণ।

ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের খেলার ছাপ জোব বেলিংহামের ফুটবলে

শুধু বড় ভাই জুড নয়, জোবের খেলায় অনেকেই দেখতে পাচ্ছেন প্রাক্তন ইংরেজ কিংবদন্তি ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের খেলার ছাপ। চেলসির সাবেক মিডফিল্ডার জন ওবি মিকেল বলেছেন, “জোব আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছেন ল্যাম্পার্ডকে। ল্যাম্পার্ড প্রতি মৌসুমে প্রায় ২০টি গোল করতেন কারণ তিনি সব সময় সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় থাকতেন। জোবও ঠিক তেমনই খেলেন। ওর খেলা খুব সরাসরি, বল পেলে সামনে তাকায় এবং দৌড়ায়। আমি নিশ্চিত ও ডর্টমুন্ডের হয়ে অনেক গোল করবে।”

অন্যান্য ফুটবল ব্যক্তিত্বদের প্রশংসা

ইতালিয়ান তারকা এবং ইন্টার মিলানের প্রাক্তন ফরোয়ার্ড ক্রিস্টিয়ান ভিয়েরিওও জোবের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, “জোব অনেক গোল করবে, কারণ ও সব সময় গোলমুখে এগিয়ে যায়। ওর মাঠে চলাফেরা একেবারে বড় ভাইয়ের মতোই।”

দুই ভাইয়ের ক্লাব বিশ্বকাপে মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা

একটা সময় আসতে পারে যখন বড় ভাই জুড এবং ছোট ভাই জোব মাঠে মুখোমুখি হবেন। যদি ডর্টমুন্ড এবং রিয়াল মাদ্রিদ উভয়ই নিজেদের গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে এবং শেষ ষোলোতে জিততে পারে, তবে কোয়ার্টার ফাইনালে এই দুই ভাইয়ের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি ফুটবল বিশ্বের জন্য এক উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্ত হবে।

সার্বিক বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

জুড বেলিংহামের ছোট ভাই জোব বেলিংহাম যেন ফুটবল জগতের নতুন আলো হয়ে উঠছেন। তাঁর খেলা শুধুমাত্র পরিবারের নামকে সম্মানিত করছে না, বরং নিজেও একটি আলাদা পরিচয় তৈরি করছে। ডর্টমুন্ডের হয়ে এভাবে শুরু করায় জোবের ভবিষ্যৎ ফুটবলে উজ্জ্বল। বড় ভাইয়ের মতো লিগ, আন্তর্জাতিক এবং ক্লাব বিশ্বকাপে সাফল্যের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন এই তরুণ মিডফিল্ডার।

জোবের খেলার ধরন, গোল করার দক্ষতা এবং মাঠে দৌড়ঝাঁপ তাকে ল্যাম্পার্ডের মতো কিংবদন্তির সঙ্গে তুলনা করার সুযোগ করে দিয়েছে। শুধু এই মুহূর্তেই নয়, দীর্ঘমেয়াদেও জোব বেলিংহামের নাম উচ্চারণ করবে বিশ্ব ফুটবল জগত।

ডর্টমুন্ডের যুবতর ফুটবলারদের জন্য জোব বেলিংহাম এক প্রেরণা। তার এই উদাহরণ দেখিয়ে যাচ্ছে কিভাবে ধৈর্য, কঠোর পরিশ্রম এবং আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে বড় খেলোয়াড় হওয়া যায়।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button