বিশ্ব

ওআইসি সম্মেলনে এরদোয়ান ইরান কঠিন সময় পার করবে

ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)-এর ৫১তম পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ইরানের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছেন। গতকাল শনিবার ইস্তানবুলে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে তিনি বলেন, “হাজার বছরের ঐক্য ও সহনশীলতার শক্তিতে ইরান এই সংকটময় সময় সাফল্যের সঙ্গে পার করতে সক্ষম হবে।” তিনি একই সঙ্গে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারকে আঞ্চলিক শান্তির সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে উল্লেখ করেন।

ওআইসিতে বিশেষ বৈঠক ও ইরানের কূটনৈতিক মহড়া

ইরানের অনুরোধে ওআইসির সব সদস্যদেশের অংশগ্রহণে একটি বিশেষ বৈঠক আয়োজন করা হয়। এই বৈঠক চলমান ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বৈঠকটি ওআইসির ৫১তম পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের অধিবেশনের অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ৪০টি দেশের প্রতিনিধি অংশ নেন, যেখানে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচিও যোগ দেন। তিনি বৈঠকে ইসরায়েলের ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর হামলার বিষয়টিকে প্রধান আলোচ্য বিষয় হিসেবে উল্লেখ করেন।

মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা ও ওআইসির কূটনৈতিক ভূমিকা

মধ্যপ্রাচ্যের এই সংকটময় সময়ে ওআইসির সম্মেলনের লক্ষ্য ছিল সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য সৃষ্টির মাধ্যমে চলমান সংঘাতের বিরুদ্ধে সমন্বিত প্রতিক্রিয়া তৈরি করা। বৈঠকে সদস্যদেশগুলো ইসরায়েলের হামলা মোকাবিলা এবং বিস্তৃত আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছে।

তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের বৈঠক ছিল অত্যন্ত কঠোর ও সুনির্দিষ্ট। তাসনিম নিউজের বরাতে বলা হয়েছে, বৈঠকে অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা বিশেষ কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও ভাবছেন।

ইরান-ইউরোপ সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা

ওআইসির বৈঠকের একদিন আগে, গত শুক্রবার, জেনেভায় যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বৈঠক করেন। তবে ওই বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি। ইরান স্পষ্ট জানায়, ইসরায়েলি হামলা বন্ধ হলেই কেবল তারা কূটনীতির পথ গ্রহণ করবে। আরাগচি জেনেভা বৈঠকের শেষে বলেন, “আক্রমণ বন্ধ হলেই ইরান আবারও কূটনৈতিক আলোচনার বিষয়টি বিবেচনা করতে প্রস্তুত। তবে ইরানের প্রতিরক্ষাগত সক্ষমতা কোনোভাবেই আলোচনার বিষয় নয়।”

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া ও পরমাণু আলোচনা

ওআইসির সম্মেলন শুরুর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপীয় কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে অবমূল্যায়ন করেন। তিনি বলেন, “আমরা ইরানের সঙ্গে কথা বলছি, দেখছি কী হয়। তবে আমার মতে, জেনেভায় হওয়া আলোচনাগুলো সফল হয়নি।” এরদোয়ানও মন্তব্য করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন পরমাণু আলোচনার ঠিক আগে ইরানের ওপর ইসরায়েলের হামলা ছিল পরিকল্পিত।

বিশ্লেষণ: মধ্যপ্রাচ্যের সংকট ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের প্রভাব অতীব গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন ধরেই এই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চলমান। সাম্প্রতিক হামলার ফলে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনৈতিক পরিবেশ ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। বিশেষ করে ওআইসি সম্মেলনের মাধ্যমে মুসলিম দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কৌশল নির্ধারণ করছে।

ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং অন্যান্য সেনা কর্মকর্তা বারবার জানিয়েছেন, ইরান কোনো অবস্থাতেই আক্রমণাত্মক নয়, তবে নিজের নিরাপত্তা রক্ষায় সম্পূর্ণ সক্ষম। এরদোয়ানের বক্তব্যও সেই বাস্তবতা তুলে ধরে যে, ঐতিহ্যবাহী ঐক্য ও সহনশীলতার ওপর ভিত্তি করে ইরান কঠিন সময় কাটিয়ে উঠতে পারবে।

ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ ও সম্ভাবনা

ওআইসির এই সম্মেলন থেকে প্রত্যাশিত যে, সদস্যদেশগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে চলমান সংকট মোকাবিলায় কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করবে। বিশেষ করে ইরানের পাশে দাঁড়িয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাদের অবস্থান দৃঢ় করবে। তুরস্কের নেতৃত্বে ওআইসি একটি শক্তিশালী কূটনৈতিক ফ্রন্ট গঠন করতে পারে, যা মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।

এই বৈঠক আন্তর্জাতিক কূটনীতির নতুন দিক নির্দেশ করে, যেখানে মুসলিম বিশ্ব একসাথে সম্মিলিতভাবে নিজেদের স্বার্থ ও নিরাপত্তার জন্য কাজ করবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button