বাংলাদেশ

ইরানে ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মুসলিম ঐক্যের ডাক

ইরানে ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে গত শুক্রবার (২০ জুন) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) একটি বিক্ষোভ সমাবেশ ও র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়। দিনব্যাপী এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য ছিল মুসলিম বিশ্বে ঐক্যের মূর্তি গড়ে তোলা এবং ইসরায়েলি হামলার কঠোর নিন্দা জানানো। সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা একজোট হয়ে ইরানের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন এবং বিশ্ব মুসলিম জাতিকে বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

বিক্ষোভের সূচনা ও র‌্যালির পথে

শুক্রবারের বিক্ষোভের সূচনা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে। বাদ জুমা সময় থেকে শুরু হওয়া র‌্যালিটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশ ঘুরে টিএসসির সামনে অবস্থিত রাজু ভাস্কর্যের সমীপে শেষ হয়। র‌্যালিতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তাদের ভাষণ

র‌্যালির শেষে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আয়োজকরা বলেন, “মুসলিম জাতির মধ্যে যা বিভেদ রয়েছে, তা ভুলে একযোগে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করা আমাদের প্রথম এবং প্রধান কর্তব্য।” তারা আরও বলেন, “মুসলিম বিশ্বের ওপর যে নিপীড়ন ও সহিংসতা চালানো হচ্ছে, তা কখনই সহ্য করা যাবে না। প্রত্যেককে নীরবতা ভেঙে জোরালো কণ্ঠে প্রতিবাদ জানাতে হবে।”

আয়োজকরা বিশেষভাবে মুসলিম দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যেন তারা ইরানের পাশে দাঁড়ায় এবং সাম্প্রতিক ঘটনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও বিশ্বজনতার সামনে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে।

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার সাম্প্রতিক উত্তেজনা

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ইরানের হামলায় তারা অন্তত ২৪ জন নিহত হয়েছে। অন্যদিকে, বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, বিশেষ করে ওয়াশিংটন ভিত্তিক ‘হিউম্যান রাইটস অ্যাকটিভিস্টস’ এর তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের হামলায় ইরানে এখন পর্যন্ত ৬০০ এরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং ১,৩২০ জনেরও বেশি ব্যক্তি আহত হয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই উত্তেজনা মধ্যপ্রাচ্যের জটিল রাজনীতির একটি অংশ এবং এটি শুধু দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি মুসলিম বিশ্বের এক বৃহৎ সংকটের ইঙ্গিত।

মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার জন্য মুসলিম ঐক্যের গুরুত্ব

মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, দীর্ঘদিন ধরেই মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন দেশ ও গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ ও বিভেদ বিদ্যমান। এই পরিস্থিতিতে মুসলিম বিশ্ব ঐক্যবদ্ধ না হলে বিদেশি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সঠিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা কঠিন হবে। সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়েল সংঘাত এই বাস্তবতাকে আরও তীব্র করেছে।

তাদের মতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র-যুব সমাজের এই প্রতিবাদী মনোভাব প্রশংসনীয়। কারণ তারা হচ্ছে ভবিষ্যতের নেতৃত্ব, যারা একদিন এই সংকট মোকাবেলা করবে।

বিশ্ব মুসলিম দেশগুলোকে কী ভূমিকা নিতে হবে?

বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশ ইতিমধ্যেই ইরানের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু কথায় নয়, কূটনৈতিক, মানবিক ও রাজনৈতিক স্তরে একযোগে কাজ করাই হবে শান্তি ও স্থিতিশীলতার একমাত্র পথ।

বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন:

  • মুসলিম দেশগুলোকে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে একটি ঐকমত্যপূর্ণ অবস্থান গ্রহণ করতে হবে।
  • আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে মুসলিম দেশের কল্যাণ ও সুরক্ষার জন্য আরো কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে।
  • জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়কে পরিস্থিতির স্থিতিশীলতার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।

ঢাবির শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিভঙ্গি

ঢাবির একজন শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা শুধু প্রতিবাদ করেই থেমে যাব না, আমাদের উচিত সামাজিক মাধ্যম, আলোচনা ও বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে এই ইস্যুতে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।”

অন্য একজন বলেন, “মুসলিম জাতির ঐক্যই আমাদের শক্তি। আমরা চাই সকল মুসলিম দেশের মানুষ একসাথে দাঁড়াক এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে কণ্ঠ তুলে।”

বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ

বাংলাদেশের মতো শান্তিপ্রিয় দেশ থেকে এই প্রতিবাদী পদক্ষেপ বিশ্ববাসীর নজর কাড়ছে। এটি মুসলিম বিশ্বের একটি সংহত বার্তা যে তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার এবং নিরীহ মানুষের রক্ষা করতে প্রস্তুত।

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের এই মুহূর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও সমাজের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে আশা করা হচ্ছে, মুসলিম বিশ্বের বৃহত্তর একতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আরও সজাগতা বৃদ্ধি পাবে। ইতিহাস সাক্ষী থাকবে, এমন সময়ে তরুণ প্রজন্মের এই ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ মুসলিম জাতির মুক্তির পথ সুগম করবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button