ইসরায়েলের নতুন টার্গেট: পাকিস্তানের পারমাণবিক প্রকল্প

বিশ্ব রাজনীতির নয়া দৃষ্টিকোণ থেকে ইসরায়েলের ইরান হামলার পর পাকিস্তানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোকে নিশানা করার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। মেইর মাসরি স্পষ্টভাবে বলেন, ইরানের পরবর্তী লক্ষ্য হিসেবে পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু হতে পারে। ইসরায়েলের এ ধরনের পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতার জন্য এক ভীতিকর সংকেত।
এর আগে নানা সূত্র থেকে খবর পাওয়া গিয়েছিল যে, ইসরায়েল যদি ইরানকে পরমাণু হামলা চালায়, তবে পাকিস্তান পাল্টা প্রতিরক্ষা দিতে পারে। যদিও পাকিস্তান সরকার ও সামরিক নেতৃত্ব তা উড়িয়ে দিয়েছে। দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী স্পষ্ট করে দিয়েছেন, পাকিস্তানের পরমাণু শক্তি শুধুমাত্র দেশের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হবে, আক্রমণাত্মক উদ্দেশ্যে নয়।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর দাবি ও ইসরায়েলের হুমকি
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, “আমাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে দেশের নিরাপত্তার জন্য, আমরা কোনও আগ্রাসনমূলক কাজ করব না। কিন্তু যদি কেউ আক্রমণ করে, আমরা কঠোর প্রতিরোধ করব।”
এই মন্তব্যের মাত্র কিছু ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েলের সাবেক প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী মেইর মাসরি পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনা নিশানা করার পরিকল্পনার কথা জানান। তার ভাষায়, “ইরান থেকে শুরু করে পাকিস্তানের পারমাণবিক প্রকল্প পর্যন্ত, তেলআবিবের নিরাপত্তা ও অঞ্চলের ভারসাম্যের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাপ্রধানের বৈঠক
এই সংকটের সময় পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল অসীম মুনির মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউজে এক মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেন। বৈঠকের পর ট্রাম্প জেনারেল মুনিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পেরে ‘সম্মানিত’ বোধ প্রকাশ করেন।
গত মাসে ভারতের পেহেলগামে জঙ্গী হামলার পর দুই পার্শ্বের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র হয়েছিল। এর পর ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। জেনারেল মুনিরের ওই সংঘাত প্রশমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য ট্রাম্প তাঁকে ধন্যবাদ জানান।
শান্তির নোবেল পুরস্কারের প্রস্তাব
সাংবাদিকদের সামনে হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র আনা কেলি জানান, জেনারেল মুনির ট্রাম্পকে শান্তির নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন করার আহ্বান জানান, কারণ তিনি ভারত-পাকিস্তান পারমাণবিক যুদ্ধ ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। ট্রাম্পের এই ভূমিকাই তাঁকে হোয়াইট হাউজে আমন্ত্রণ জানানোর মূল কারণ ছিল।
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে পারমাণবিক শক্তির ভবিষ্যত ও প্রভাব
বিশ্বের পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলোকে নিয়ে বর্তমানে উত্তেজনার মাত্রা বাড়ছে। ইসরায়েলের ইরান অভিযান এবং পরবর্তীতে পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর প্রতি লক্ষ্যবস্তু হওয়ার তথ্য বিশ্বে শক্তির ভারসাম্য ও স্থিতিশীলতার জন্য আশঙ্কার সঙ্কেত বহন করছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য কূটনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ পন্থার বিকল্প নেই। সামরিক সংঘাত হলে তা শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, গোটা বিশ্বেই বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক চিত্র ও পারমাণবিক হুমকি
দক্ষিণ এশিয়া, যেখানে পাকিস্তান, ভারত এবং তাদের প্রতিবেশী দেশগুলো পারমাণবিক অস্ত্রশক্তিধর, সেখানে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি। সম্প্রতি পেহেলগামে হামলা ও তার পরবর্তী যুদ্ধবিরতির ঘটনা থেকে বোঝা যায়, এই অঞ্চলে উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে রাখা কতটা প্রয়োজনীয়।
বিশ্ব শক্তিগুলো যদি পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে, তাহলে এটি শুধু ঐ দেশের নয়, পুরো অঞ্চলের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এখনই হস্তক্ষেপ করে শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্ব দিতে হবে।
ভবিষ্যতের প্রস্তাবনা ও সমাধান পথ
বিশ্বের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া, যাদের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা অনেক বেশি, তাদের উচিত দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে পারমাণবিক হুমকি কমানো। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যেমন আইএইএ (IAEA) তাদের দায়িত্ব পালন আরও শক্তিশালী করতে হবে।
পাকিস্তান ও ইসরায়েলের মতো দেশগুলোর মধ্যে সামরিক উত্তেজনা বন্ধ করার জন্য স্থায়ী শান্তি আলোচনার আয়োজন জরুরি। পারমাণবিক স্থাপনা নিরাপত্তায় বিশেষ নজর রাখতে হবে যাতে সেগুলো ভাঙ্গচুরের শিকার না হয়।
বর্তমান বিশ্ব রাজনীতির জটিলতায় ইসরায়েল, পাকিস্তান ও ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে চলমান উত্তেজনা পরস্পরের মধ্যে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন আন্তঃরাষ্ট্রীয় সহযোগিতা ও সমঝোতা। সারা বিশ্বকে এখনই সচেতন হতে হবে এবং পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে আন্তরিক ভূমিকা রাখতে হবে।