বিশ্ব

৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ইরানে মার্কিন হামলা চায় ইসরায়েল

ইরানকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। পারমাণবিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া এই সংকটে এবার যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করছে ইসরায়েল। টাইমস অব ইসরায়েলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দেশটির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ইরানে হামলার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে বলে তারা আশাবাদী।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইসরায়েলের প্রত্যাশা

ইসরায়েল সরকারের ওই কর্মকর্তা বলেন, “ইসরায়েল এখনো বিশ্বাস করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিরুদ্ধে সামরিক হামলায় অংশ নেবেন। আশা করা হচ্ছে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) অংশ নেবে। আমরা আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই তা জানতে পারব। তবে কেউ যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দিচ্ছে না; সিদ্ধান্তটা তাদের নিজেদের।”

এ বক্তব্যে স্পষ্ট যে, ইসরায়েল বিষয়টি নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের উপর কোনোরকম সরাসরি চাপ প্রয়োগ করছে না, বরং ওয়াশিংটনের নিজস্ব মূল্যায়ন ও সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে।

কূটনৈতিক টানাপোড়েনের মাঝেই যুদ্ধের আশঙ্কা

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ঘিরে বহুদিন ধরেই পশ্চিমা দেশগুলোর সন্দেহ রয়েছে যে, তেহরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে। যদিও ইরান বারবার দাবি করেছে তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যেই পরিচালিত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনার পটভূমিতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে, সামরিক পদক্ষেপের সম্ভাবনা জোরদার হচ্ছে।

বিশেষ করে ইসরায়েল আশঙ্কা করছে, ইরান অদূর ভবিষ্যতেই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা অর্জন করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে তারা চায়, যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বে একটি যৌথ হামলা হোক যাতে ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোকে নিরপেক্ষ করা সম্ভব হয়।

প্রতিরক্ষামন্ত্রীর হুমকি ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

সম্প্রতি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে বলেন, “যদি ইরান আমাদের বিরুদ্ধে হুমকি দেয়, তাহলে খামেনিকে টার্গেট করা হবে।” এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কড়া প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসরায়েলি সরকারি ওই কর্মকর্তা জানান, “প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তাকে (কাৎজ) যা বলতে বলেন, তিনি সেটাই বলেন। ব্যক্তিগতভাবে তিনি কোনও কিছু বলেন না।” এটি থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নীতিনির্ধারণ ও উচ্চপর্যায়ের বক্তব্যের পেছনে মূলত প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর দিকনির্দেশনাই কাজ করে।

হামলার সম্ভাব্য ফলাফল ও বৈশ্বিক উদ্বেগ

যদি আসন্ন ৪৮ ঘণ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ইরানে সামরিক অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তা কেবল ইরান নয়, সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারে। এমনকি তা তৃতীয় পক্ষ বা সমর্থক মিলিশিয়াদের মাধ্যমে ইসরায়েল কিংবা উপসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোর ওপর পাল্টা হামলার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক সমীকরণ এমনিতেই নাজুক। ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা, গাজা পরিস্থিতি, লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের সক্রিয়তা এই অঞ্চলে ইতোমধ্যেই অস্থিরতা বাড়িয়ে তুলেছে। তার ওপর ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি মার্কিন হামলা মানেই একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের ঝুঁকি, যা বিশ্ব তেলবাজার ও অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে।

যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান

হোয়াইট হাউস এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ইরানে হামলার বিষয়ে কোনো বিবৃতি দেয়নি। তবে কূটনৈতিক মহলে ধারণা করা হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা টিম পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং রাজনৈতিক ও সামরিক বিকল্পগুলোর মূল্যায়ন করছে। মার্কিন প্রশাসন সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছে যে, তারা “সব ধরনের বিকল্প উন্মুক্ত রেখেছে”।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্প প্রশাসন এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারে যা নির্বাচনী বছরে তাকে দৃঢ় ও কার্যকর নেতা হিসেবে তুলে ধরবে, বিশেষ করে যেহেতু প্রেসিডেন্ট নির্বাচন খুব বেশি দূরে নয়। তবে যুদ্ধের ঝুঁকির কারণে জনমতও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

সমাপ্তি ভাবনা

ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনার এই নতুন অধ্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা কেবল মধ্যপ্রাচ্যের নয়, বিশ্ব রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণেও বড় ভূমিকা রাখতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র সামরিক পদক্ষেপ নেয় কি না—এটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, তেমনি সমান গুরুত্বপূর্ণ হলো এ ধরনের পদক্ষেপের ফলাফল কী হবে। আগামী দিনগুলোতে এই সংকট কূটনৈতিকভাবে সমাধান হবে, নাকি রক্তক্ষয়ী সংঘাতে পরিণত হবে—তা নির্ভর করছে মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের সিদ্ধান্তের উপর।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button