১২০ কোটি ফিরিয়ে দিলেন আমির, ‘সিতারে জমিন পার’ এবার হলে

বলিউডের শীর্ষ নির্মাতা ও অভিনেতা আমির খান তার নতুন সিনেমা ‘সিতারে জমিন পার’ নিয়ে এক অভিনব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগামী ২০ জুন মুক্তি পাচ্ছে এই সিনেমাটি, যা ২০০৭ সালের শ্রুতিমধুর ‘তারে জমিন পার’ সিনেমার সাফল্যের ধারাবাহিকতা। তবে এবার গল্পের কেন্দ্রে থাকছে রাগী কোচের চরিত্রে আমির খানের অভিনয়, যিনি একদল বিশেষভাবে সক্ষম শিশুকে প্রেরণা দিয়ে তাদের জীবন বদলে দেন।

‘সিতারে জমিন পার’ – নতুন কাহিনি, নতুন চ্যালেঞ্জ

‘তারে জমিন পার’ সিনেমায় ছিল এক বিশেষ শিশু অঙ্কনের প্রতি আবেগ ও সাফল্যের গল্প, যেখানে আমির খান ছিলেন একজন অঙ্কন শিক্ষক। এবার ‘সিতারে জমিন পার’ সিনেমায় তিনি একজন কঠোর, রাগী কোচের ভূমিকায়, যিনি বিশেষ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি একদল শিশুর জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনেন। সিনেমাটি শুধুমাত্র গল্পের জন্য নয়, মুক্তির পদ্ধতিতেও আলাদা হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আমির।

১২০ কোটি টাকার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে আমিরের ঝুঁকি

বর্তমান বিনোদন জগতে ওটিটি (ওভার দ্য টপ) প্ল্যাটফর্মগুলোর ব্যাপক জনপ্রিয়তা বেড়েছে। সাধারণত সিনেমাগুলো প্রথম প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়ার পর কয়েক মাস পর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে মুক্তি পায়, যেখানে প্রযোজক নির্দিষ্ট অর্থ পেয়ে থাকেন। কিন্তু এই পদ্ধতিতে, সিনেমার বিক্রি হলেও অনেক সময় পরিচালক বা অভিনেতাদের বাড়তি আয় হয় না।

আমির খান এই প্রচলিত পদ্ধতি ভেঙে নতুন একটা পথ ধরার চেষ্টা করছেন। নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম ভিডিও, ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো থেকে ‘সিতারে জমিন পার’ কিনতে ১২০ কোটি টাকার অফার পান তিনি। তবে এই সমস্ত অফার সব বিনয়ের সঙ্গে ফিরিয়ে দিয়েছেন। বলিউডের বাণিজ্য বিশ্লেষক কমল নেহতার বক্তব্য অনুযায়ী, আমাজন প্রাইম ভিডিও এই বড় অঙ্কের প্রস্তাব দিয়েছিল, যা ফিরিয়ে দেওয়ার মূল কারণ ছিল সিনেমার মুক্তি ও দর্শক পৌঁছানোর নতুন উপায় অনুসন্ধান।

সিনেমা হলে মুক্তি, পে-পার-ভিউতে ইউটিউব: এক নতুন প্রজন্মের পরিকল্পনা

আমির খান ‘সিতারে জমিন পার’ সিনেমাটিকে ওটিটিতে না রেখে সরাসরি সিনেমা হলে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। এর পরপরই সিনেমাটি ইউটিউবের মাধ্যমে পে-পার-ভিউ সিস্টেমে মুক্তি পাবেন। অর্থাৎ দর্শক চাইলে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিয়ে সিনেমাটি ঘরে বসেই উপভোগ করতে পারবেন। এই পদক্ষেপ বিনা মূল্যে সিনেমা অনলাইনে মুক্তি না দিয়ে নতুন আর্থিক মডেল তৈরির একটি সাহসী প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ঝুঁকি আর প্রত্যাশা: সিনেমা ব্যবসার নতুন দৃষ্টান্ত

এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে এক বিশাল ঝুঁকি। সিনেমার বাজেট এবং প্রচার-প্রসারনের জন্য বিনিয়োগ বড় হওয়ায় প্রি-সেল বা আগাম বিক্রিতে ভালো সাড়া না পেলে অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। তবে আমিরের বিশ্বাস, সিনেমার গুণমান এবং দর্শকের আস্থা একসঙ্গে কাজ করলে এই নতুন পদ্ধতি সফল হবে।

অমিতাভ বচ্চনও এই সিদ্ধান্তকে উৎসাহিত করেছেন। ইন্ডিয়া টুডেকেআমির খান বলেন, “আমি চাই দর্শক সিনেমা হলে গিয়ে আমার সিনেমা দেখুক। আমি সিনেমার প্রতি আমার বিশ্বাস রাখতে চাই, দর্শকের প্রতি আমার বিশ্বাস রাখতে চাই।”

ওটিটির পতন? সিনেমা হল ফিরিয়ে আনছে বলিউডের আশা

গত কয়েক বছরে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের উত্থান প্রেক্ষাগৃহের দর্শক কমিয়েছে। অনেকে আর টিকিট কেটে হলে যাওয়ার পরিবর্তে ঘরে বসে একই সিনেমা দেখে থাকেন। কিন্তু এই অভ্যাস বদলাতে চান আমির খান। সিনেমা হলকে আবার জীবন্ত করার প্রচেষ্টায় তার এই উদ্যোগকে অনেকেই স্বাগত জানাচ্ছেন।

সমসাময়িক প্রেক্ষাপট: বলিউডের নতুন মুক্তির মডেল

বিগত কয়েক বছরে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর প্রভাব বেড়ে গেলেও, সিনেমা হলের জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। আমির খানের এই নতুন পদক্ষেপ বলিউডে ‘মুভি রিলিজ স্ট্রাটেজি’ বদলের এক নতুন দৃষ্টান্ত হতে পারে। পে-পার-ভিউ সিস্টেম দিয়ে ইউটিউবে মুক্তি দেওয়া হলে সিনেমা আরও বেশি দর্শকের কাছে পৌঁছাতে পারে, একই সঙ্গে প্রযোজকদেরও লাভবান হতে পারে।

দর্শক কি পাবে?

দর্শকদের জন্য এটি নতুন অভিজ্ঞতা। তারা পছন্দের সিনেমা হলে গিয়ে দেখতে পারবেন অথবা বাড়িতেই নির্দিষ্ট খরচ করে সিনেমাটি উপভোগ করতে পারবেন। তবে যাদের ইন্টারনেট সুবিধা কম বা পে-পার-ভিউ পদ্ধতি কঠিন মনে হয়, তারা সিনেমা হলে গিয়ে সঙ্গতিপূর্ণ অভিজ্ঞতা নিতে পারবেন।

সামগ্রিক প্রভাব

• সিনেমা হলে দর্শক বাড়ানো হবে
• ওটিটির প্রচলিত বিক্রয় ব্যবস্থা বদলানো হবে
• নতুন অর্থনৈতিক মডেল গড়ে তোলা হবে
• সিনেমার মান ও দর্শকের বিশ্বাস বজায় রাখা হবে

‘সিতারে জমিন পার’ শুধু একটি সিনেমা নয়, এটি বলিউডের মুক্তির পদ্ধতিতে এক নতুন অধ্যায়। আমির খানের এই সাহসী পদক্ষেপ সিনেমা ব্যবসায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। ১২০ কোটি টাকার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে দর্শক ও সিনেমার জন্য যেটা তিনি বেছে নিয়েছেন, তা নিঃসন্দেহে চ্যালেঞ্জিং, কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য দৃষ্টান্তমূলক।

সিনেমা প্রেমীদের জন্য এখন অপেক্ষার পালা, ২০ জুন মুক্তি পাওয়া ‘সিতারে জমিন পার’ কেমন সাড়া দেয়, সেটাই নির্ধারণ করবে এই নতুন মডেলের সফলতা। আশা করা যায়, এই উদ্যোগ শুধু আমির খানের জন্য নয়, পুরো ভারতীয় সিনেমা জগতের জন্য এক নতুন উদ্দীপনা যোগাবে।