সরোকা হাসপাতাল নয়, ইসরায়েলের সেনা ও গোয়েন্দা স্থাপনা ছিল হামলার লক্ষ্য

ইসরায়েলি বিমান বাহিনী সম্প্রতি ইরানের নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্রের ওপর বিমান হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই কেন্দ্রটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির গোপন উপাদান ও সরঞ্জাম রাখার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ দাবি করেছে, তাদের লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলের সামরিক ও গোয়েন্দা স্থাপনা, সরোকা হাসপাতাল নয়।
ইসরায়েলি হামলার পেছনের কারণ ও নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্রের গুরুত্ব
নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্র তেহরান থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এবং এটি ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রমের প্রধান কেন্দ্র। এখানে গভীর বাংকারযুক্ত দুটি সমৃদ্ধকরণ ইউনিটে প্রায় ৭০টির মতো সেন্ট্রিফিউজ রয়েছে, যা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
আইডিএফ-এর দাবি, এই স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান ও যন্ত্রাংশ রাখা হয়েছে এবং তারা এটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হিসেবে দেখছে। বিশেষ করে, তারা বলছে, এখানে এমন প্রকল্প চালানো হচ্ছে যা ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচিকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও আইএইএ’র বক্তব্য
ইসরায়েলের এই হামলার খবর প্রথম প্রকাশিত হয়নি। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) এর প্রধান সম্প্রতি বিবিসিকে জানিয়েছেন, গত সপ্তাহে নাতাঞ্জে হামলার ফলে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রের সেন্ট্রিফিউজগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যদিও পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি।
ইরান নিজেকে শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি দাবি করে আসছে, তবে এই হামলার পর তাদের পক্ষ থেকে আইএইএ’র ৩৫ সদস্যের পর্ষদকে জোরালো প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।
সরোকা হাসপাতাল হামলার ভুল ব্যাখ্যা ও প্রকৃত লক্ষ্য
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ বলছে, সরোকা হাসপাতালকে লক্ষ্য করেই হামলা চালানো হয়েছে এমন তথ্য বিভ্রান্তিকর। তাদের দাবি, হামলার প্রকৃত লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলের সেনা ও গোয়েন্দা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এটি ইসরায়েল-ইরানের চলমান সংঘর্ষের অংশ এবং সাধারণ নাগরিকদের ওপর আঘাত হানার উদ্দেশ্য ছিল না।
ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা: সাম্প্রতিক ঘটনা ও ভবিষ্যৎ পরিপ্রেক্ষিত
সম্প্রতি ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ইরানের আরাকে ভারী পানির পারমাণবিক চুল্লিতে হামলা, ইসরায়েলের ড্রোন ধ্বংস এবং ইরানে ইসরায়েলি হামলায় ব্যাপক হতাহতের খবর বিশ্বময় শোরগোল ফেলে দিয়েছে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে এই সংকট মোকাবেলার জন্য, যেখানে উভয় পক্ষ অংশ নেবে। এছাড়া হোয়াইট হাউসের সামনে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের উদ্বেগ ও প্রতিবাদও প্রকাশ পেয়েছে।
আইডিএফ ও ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি: এক নজরে
- আইডিএফ দাবি: নাতাঞ্জে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম ও উপাদান রাখা হয়, যা যুদ্ধ সরঞ্জাম তৈরির জন্য ব্যবহার হয়।
- ইরানের দাবি: তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ, অস্ত্র তৈরির উদ্দেশ্য নেই।
- আইএইএ রিপোর্ট: ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ধ্বংস হয়নি, হামলার তদন্ত চলছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও শান্তি প্রচেষ্টার আহ্বান
বিশ্ব সম্প্রদায় ইরান-ইসরায়েল সংঘাত রোধে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য চাপ তৈরি করছে। নিরাপত্তা পরিষদের আলোচনা ও বিভিন্ন মধ্যস্থতাকারী দেশের প্রচেষ্টা উত্তেজনা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচিকে লক্ষ্য করেই পরিচালিত হয়েছে। এই হামলা সরোকা হাসপাতালের বিরুদ্ধে নয়, বরং ইসরায়েলের সামরিক ও গোয়েন্দা স্থাপনা লক্ষ্য ছিল, যা আইআরএনএ স্পষ্ট করেছে। ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার কারণে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে এবং জাতিসংঘসহ বিশ্ব দরবারে এই সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।