২৪ ঘণ্টায় ৯ দফা মিসাইল হামলা চালিয়েছে ইরান

বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম উত্তপ্ত ক্ষেত্র মধ্যপ্রাচ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে সংঘর্ষ বেড়েছে। ইসরায়েলের বিভিন্ন এলাকায় একযোগে ৯ দফা মিসাইল হামলা চালিয়েছে ইরান। বুধবার (১৮ জুন ২০২৫) ভোর থেকে শুরু হওয়া এই হামলায় অন্তত ৫৫ টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে তেলআবিব ও হাইফা শহরগুলোকে লক্ষ্য করে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়।
ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড করপস (আইআরজিসি) হামলার দায় স্বীকার করেছে এবং তাদের মুখপাত্র বলেছে, “আমরা ইসরায়েলের সামরিক ও গোয়েন্দা কেন্দ্রগুলোকে কঠোর বার্তা দিতে চাই।” এই বার্তায় মোসাদের একটি গোপন কার্যালয়ও লক্ষ্যবস্তু ছিল।
হামলার পেছনের কারণ ও উত্তেজনার ইতিহাস
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার সংঘর্ষ নতুন কিছু নয়। ইরান সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের সমর্থিত বিভিন্ন গোষ্ঠীর মাধ্যমে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা চালিয়ে আসছে। বিশেষ করে সিরিয়া ও লেবাননে ইরান তাদের প্রভাব বিস্তার করে আসছে, যা ইসরায়েল গভীর উদ্বেগের কারণ।
২০২৫ সালে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়েছে যখন ইসরায়েল তেহরানের বিরুদ্ধে বেশ কিছু গোপন অভিযান চালিয়েছে বলে দাবি করা হয়। এর জবাবে ইরান নিয়মিত মিসাইল হামলা চালাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের ভূমি থেকে ইসরায়েলের প্রতি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ বেড়ে যাওয়ায় সংঘর্ষ আরও গুরুতর রূপ নিয়েছে।
ইসরায়েলের জবাবি পদক্ষেপ ও তেহরানের অবস্থা
ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) ইরানের প্রায় ২০০টি মিসাইল লঞ্চিং সাইট ধ্বংসের দাবি করেছে। গত দুই দিনে তারা তেহরানের বিভিন্ন এলাকায় বিমান হামলা চালিয়েছে এবং ‘অপরাধী সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলোতে’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
ইসরায়েলের সামরিক কমান্ডাররা জানিয়েছেন, “আমরা আমাদের দেশের সুরক্ষায় কঠোর প্রতিক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছি। কেউ আমাদের ক্ষতি করতে পারবে না।” তবে এই উত্তেজনার কারণে তেহরানের বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মানুষকে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
নিরাপত্তা ও সামরিক উত্তেজনার পাশাপাশি মানবাধিকার সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আইএইচআরসি (ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিটি) জানাচ্ছে, চলমান সংঘর্ষে কমপক্ষে ৫৮৫ ইরানি নাগরিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বেগ প্রকাশ করে দুই পক্ষকেই শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, “মধ্যপ্রাচ্যের এই উত্তেজনা বিশ্বে স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি। এ সমস্যা কূটনৈতিক মাধ্যমে সমাধান হওয়া উচিত।”
মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যত: সংকট থেকে সমাধানের পথ
মধ্যপ্রাচ্যের এই সাম্প্রতিক সংঘাত আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তেলের দাম হুতি বাড়ছে, বিশ্বজুড়ে জ্বালানির সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই এই ধরনের হামলা ও উত্তেজনা অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় চাপ বৃদ্ধি করছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার মুল কারণ হলো পারমাণবিক শক্তি নিয়ন্ত্রণ ও সামরিক আধিপত্য বিস্তার। দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘমেয়াদী কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অপরিহার্য।
সংক্ষেপে: ইসরায়েলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, উত্তেজনা বৃদ্ধি
- গত ২৪ ঘণ্টায় ইরানের ৯ দফা মিসাইল হামলায় ইসরায়েলের বিভিন্ন শহর ক্ষতিগ্রস্ত
- তেলআবিব ও হাইফা শহরে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ
- ইসরায়েল ইরানের ২০০ টি মিসাইল লঞ্চ সাইট ধ্বংসের দাবি
- চলমান সংঘর্ষে কমপক্ষে ৫৮৫ ইরানি নিহত, বহু আহত
- আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় শান্তি আহ্বান জানিয়ে উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা