ঢাকায় অস্ট্রেলিয়া ভিসা চালু, প্রধান উপদেষ্টার কৃতজ্ঞতা

বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ার ভিসা কার্যক্রম পুনরায় চালু হওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস অস্ট্রেলিয়ান সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। মঙ্গলবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় নবনিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার সুসান রাইলের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এই কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ার ভিসা কার্যক্রম: অনলাইনে আবেদন সুবিধা
অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার সুসান রাইল জানান, এখন থেকে বাংলাদেশ থেকে ভিসার আবেদন অনলাইনে সহজে জমা দেওয়া যাবে। এর ফলে ভিসা প্রক্রিয়ায় অনেকটাই স্বচ্ছতা ও সহজলভ্যতা এসেছে। তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় ৬৫ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি বসবাস করছেন এবং সেখানে ১৪ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক বাণিজ্যের প্রসার
সাক্ষাৎকালে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও হাইকমিশনার রাইল দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতার ব্যাপারে আলোচনা করেন। রাইল জানান, দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের মূল্য ৫ বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলারে পৌঁছেছে যা গত পাঁচ বছরে গড়ে ১৬.২ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও প্রবাসীদের অবদানের কথাও তিনি বিশেষভাবে তুলে ধরেন।
অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ শিক্ষা ও বৃত্তি সহযোগিতা
অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস প্রোগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশে ৩,০০০-এরও বেশি প্রাক্তন শিক্ষার্থীর নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে, যারা বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস অস্ট্রেলিয়ান সরকারের কাছে আরও বেশি বৃত্তি ও শিক্ষাগত সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান।
সদিচ্ছা ও নির্বাচন সহায়তা: আগামীর বাংলাদেশের জন্য অস্ট্রেলিয়ার অবদান
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “বহু বছর পর প্রথমবারের মতো জনগণ, বিশেষ করে প্রথমবার ভোটার তরুণরা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবে।” নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু করতে অস্ট্রেলিয়া ইউএনডিপির মাধ্যমে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ২০ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার প্রদান করবে বলে হাইকমিশনার রাইল নিশ্চিত করেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার ও ‘জুলাই সনদ’
অধ্যাপক ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের চলমান সংস্কার কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে বলেন, “সংবিধান, বিচারব্যবস্থা ও প্রশাসন—এই তিনটি খাতে সংস্কার হচ্ছে যা একটি শক্তিশালী বাংলাদেশ গঠনের ভিত্তি।” তিনি আরও জানান, আগামী জুলাই মাসে ঐতিহাসিক অভ্যুত্থান স্মরণে ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা করা হবে, যা দেশের রাজনৈতিক উত্তরণকে নিশ্চিত করবে।
রোহিঙ্গা সংকট: মানবিক সহায়তা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়েও দুই পক্ষ আলোচনা করেন। অধ্যাপক ইউনূস এক মিলিয়ন রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য মানবিক সহায়তা বৃদ্ধির জন্য অস্ট্রেলিয়ার প্রতি আহ্বান জানান। 이에 রাইল জানান, ২০১৭ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়া মোট ৫৫৩.৬ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার মানবিক সহায়তা দিয়েছে, যার মধ্যে সাম্প্রতিক অতিরিক্ত ৯.৬ মিলিয়ন ডলার অন্তর্ভুক্ত। তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেন, মিয়ানমারে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের পাশে থেকে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করবে।
বাংলাদেশে নতুন দায়িত্ব নিয়ে হাইকমিশনার রাইলের প্রত্যাশা
বাংলাদেশে নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পর হাইকমিশনার রাইল বলেন, “বাংলাদেশের প্রাণবন্ত সংস্কৃতি ও গতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ আমি দীর্ঘদিন ধরে প্রশংসা করে আসছি। এখানে এসে আমি সত্যিই উচ্ছ্বসিত।” তিনি আশা প্রকাশ করেন যে দুই দেশের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও সহযোগিতা আরও দৃঢ় হবে।
সাক্ষাৎকারে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা
এ সময় এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিক উইং-এর মহাপরিচালক মোহাম্মদ নূরে আলম উপস্থিত ছিলেন।
সার্বিক বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বর্তমানে একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। ভিসা প্রক্রিয়ার অনলাইন সংস্কার ও সহজীকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশি নাগরিকদের অস্ট্রেলিয়ায় যাতায়াত সহজ হবে, যা শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও প্রবাসীদের জন্য বিশেষ উপকারী। অর্থনৈতিক বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি ও শিক্ষাক্ষেত্রে সহযোগিতা দুই দেশের জন্যই ইতিবাচক সংকেত বহন করে।
রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় অস্ট্রেলিয়ার মানবিক সহযোগিতা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন। মিয়ানমারের পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় দুই দেশের সহযোগিতা আরও বাড়বে বলে আশা করা যায়।
অবশ্যই, আগামী নির্বাচনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট পরিচালনায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার গুরুত্ব অপরিসীম। অস্ট্রেলিয়ার অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহায়তা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করবে।
অর্থাৎ, এই সাক্ষাৎ ও আলোচনাগুলো বাংলাদেশের উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।