বানিজ্য

মোংলা বন্দরে খালাস চলছে ভারত থেকে আসা ৩২ হাজার টন চাল

মোংলা বন্দরে ভারত থেকে আমদানি করা ৩২,৫৯৩ টন সরকারি চালের খালাস কাজ গতকাল সোমবার থেকে শুরু হয়েছে। এ খালাস কার্যক্রম মোংলা বন্দরের হাড়বাড়িয়া-১ এবং বেসক্রিক-৫ নামক পিয়ারের দুটি জাহাজ থেকে সম্পন্ন হচ্ছে। জাহাজ দুটি হলো এমভি হোয়াং এনহ-০৯ এবং এমভি ট্রাংক এন-০৮।

এই চালের চালানটি আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের আওতায় এসেছে এবং ১৪ জুন মোংলা বন্দরে পৌঁছেছে। এ পর্যন্ত মোংলা বন্দরের মাধ্যমে মোট ২৫টি চালবোঝাই জাহাজ এসে ২ লাখ ৪৭৭ টন চাল খালাস করা হয়েছে।

মোংলায় ভারত থেকে চাল আমদানির পরিসংখ্যান

ভারত থেকে মোংলা বন্দরে চাল আমদানির প্রথম চালান আসে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি। ভিয়েতনামের পতাকাবাহী এমভি পুথান-৩৬ নামের জাহাজে করে ওই চালানটি এসেছে, যার পরিমাণ ছিল ৫,৭০০ টন। এরপর থেকে নিয়মিত চাল আমদানি ও খালাসের কাজ চলছে।

মোংলা বন্দর এলাকায় খাদ্য নিরাপত্তা ও আমদানির তদারকির জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী খাদ্যনিয়ন্ত্রক আবদুস সোবাহান বলেন, “এই চালানটি ভারতের ২৫তম চালান, যা মোংলা বন্দরে এসে পৌঁছেছে। বর্তমানে দুইটি জাহাজে মোট ৩২,৫৯৩ টন চাল খালাসের জন্য অপেক্ষমান রয়েছে। চালের গুণগত মান নিশ্চিত করতে নমুনা সংগ্রহ ও ভৌত পরীক্ষা শেষে খালাস কার্যক্রম শুরু হয়েছে।”

ভবিষ্যতে মোংলা বন্দরে আরও চাল আসছে

আবদুস সোবাহান আরও জানান, আগামী ১৮ জুন মোংলা বন্দরে আসবে এমভি পাইওনিয়র নামের একটি জাহাজ, যার মাধ্যমে আরও ১১,৫০০ টন চাল আমদানির ২৬তম চালান পৌঁছাবে।

খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে মোট ৮ লাখ ৫০ হাজার টন চাল আমদানির চুক্তি সম্পাদিত হয়। এর মধ্যে ৪০ শতাংশ চাল মোংলা বন্দরে খালাস করা হবে, বাকিটা অর্থাৎ ৬০ শতাংশ চাল চট্টগ্রাম বন্দরে খালাসের জন্য আসবে।

মোংলা বন্দরের ভূমিকাঃ খাদ্য নিরাপত্তার একটি মূলকেন্দ্র

মোংলা বন্দর দেশের প্রধান বন্দরগুলোর মধ্যে একটি, যেখানে খাদ্যশস্য আমদানির একটি বড় অংশের খালাস করা হয়। বিশেষ করে ভারত থেকে চাল আমদানির ক্ষেত্রে মোংলা বন্দরের গুরুত্ব অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের বিভিন্ন খাদ্য গুদাম ও জেলা শহরে এই চাল সরবরাহের মাধ্যমে জনসাধারণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।

সরকারের খাদ্য নীতিতে ভারত থেকে চাল আমদানির উদ্যোগ মূলত খাদ্য সংকট মোকাবিলা ও বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করছে। করোনার পর বিশ্ব বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি এবং সরবরাহ সংকটের প্রেক্ষিতে ভারত থেকে সরাসরি চাল আমদানির চুক্তি দেশের খাদ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও মজবুত করেছে।

আন্তর্জাতিক দরপত্র ও চাল আমদানি প্রক্রিয়া

ভারত থেকে চাল আমদানি করার জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। এতে বিভিন্ন দেশ থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয় এবং সেরা দামের সঙ্গে মানসম্মত চাল আমদানির জন্য নির্বাচন করা হয়। এর ফলে দেশীয় বাজারে স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা বাড়ে।

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে মোট ৮৫০ হাজার টন চাল আমদানির জন্য দরপত্রের মাধ্যমে চুক্তি সম্পন্ন হয়, যা দেশের খাদ্য মজুদ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

চাল আমদানির প্রভাব ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

বর্তমানে ভারত থেকে চাল আমদানি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভারতীয় চালের গুণগত মান ও দাম দেশের বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় এই আমদানি খাত সম্প্রসারিত হচ্ছে।

সরকার আশা করছে, এ ধরনের আমদানি পরিকল্পনা দেশের খাদ্য সংকট দূর করে ভোক্তাদের জন্য চালের স্থিতিশীল ও সাশ্রয়ী দাম নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি মোংলা বন্দর ও চট্টগ্রাম বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নে আরও বিনিয়োগ করা হচ্ছে যাতে আমদানি ও খালাসের গতি আরও বাড়ানো যায়।

মোংলা বন্দরের অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব

মোংলা বন্দর বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বন্দর হিসেবে দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। চাল আমদানিসহ বিভিন্ন পণ্যের আমদানি-রপ্তানির জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার। বন্দরের আধুনিকীকরণ ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন গত কয়েক বছরে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে, যা আমদানির খালাস প্রক্রিয়াকে দ্রুত ও দক্ষ করেছে।

এর ফলে মোংলা বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম দেশের বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে, বিশেষত খাদ্যশস্য আমদানিতে। বর্তমানে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নানা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।

মোংলা বন্দরে চাল আমদানির পরবর্তী ধাপ

বর্তমানে চলমান চাল আমদানির খালাস কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর দ্রুত দেশের বিভিন্ন জেলা ও খাদ্য গুদামে চাল বিতরণ শুরু হবে। খাদ্য অধিদপ্তর ও বন্দর কর্তৃপক্ষ একযোগে কাজ করছে যাতে চালের সরবরাহে কোনও ধীরগতি বা বিঘ্ন না ঘটে।

আগামী মাসগুলোতে ভারতের সঙ্গে চাল আমদানির চুক্তি অনুযায়ী আরও চাল আসার সম্ভাবনা রয়েছে। মোংলা বন্দরের কার্যক্রম তদারকির মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

মোংলা বন্দরে ভারত থেকে আমদানি করা সরকারি চালের নিয়মিত খালাস কার্যক্রম দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় একটি বড় অবদান রাখছে। ভারতের সঙ্গে চলমান চুক্তির মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাশ্রয়ী দামে চাল সরবরাহ অব্যাহত থাকবে। মোংলা বন্দরের আধুনিক অবকাঠামো এবং কার্যকর ব্যবস্থাপনা দেশের খাদ্য আমদানিতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button