বিশ্ব

ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন, ইরানকে দোষারোপ জি-৭ জোটের

২০২৫ সালের ১৭ জুন, ওয়াশিংটন — বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ সৃষ্টি করেছে মধ্যপ্রাচ্যের দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত। বিশেষত, ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলা এবং ইরানের জবাবি পদক্ষেপের কারণে এই অস্থিরতা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কানাডায় অনুষ্ঠিত ৫১তম জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে পশ্চিমা বিশ্বের শীর্ষ নেতা এবং উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর প্রতিনিধিরা ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার মূল উৎস হিসেবে অভিহিত করেছেন।

জি-৭ সম্মেলনের পটভূমি ও প্রধান সিদ্ধান্তসমূহ

১৬ জুন ২০২৫-এ কানাডার হোস্ট শহরে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, কানাডা এবং জাপানের শীর্ষ নেতারা অংশগ্রহণ করেন। চলমান মধ্যপ্রাচ্যের সংকট এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করাই ছিল সম্মেলনের মূল লক্ষ্য।

সম্মেলনের সমাপ্তিতে প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে তারা স্পষ্ট করে উল্লেখ করেছেন, ইসরায়েলের ‘আত্মরক্ষার’ অধিকার অব্যাহত থাকবে। অন্যদিকে, ইরানকে সন্ত্রাসবাদ এবং সহিংসতার উৎস হিসেবে দায়ী করে তার পারমাণবিক অস্ত্রাধিকার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। জি-৭ নেতারা ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা বিনষ্টের জন্য দায়ী করে, একই সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সকল পক্ষকে সংকট নিরসনে কাজ করার আহ্বান জানায়।

মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক উত্তেজনা: ইসরায়েল-ইরান সংঘর্ষ

গত ১৩ জুন, ইসরায়েল গোপনে ইরানের মধ্যস্থলীয় সামরিক অডিটোরিয়ামে হামলা চালিয়ে দেশটির কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করে। এই ঘটনার পরে উভয় দেশ আকাশপথে পাল্টাপাল্টি হামলা শুরু করে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় চলা দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ, যেখানে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে, মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এর পাশাপাশি ইরান-ইসরায়েলের এই সাম্প্রতিক সংঘর্ষ পুরো অঞ্চলটিকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

ট্রাম্পের আগেভাগে সম্মেলন ত্যাগ

এই উত্তেজনার মাঝেও ৫১তম জি-৭ সম্মেলনের আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অপ্রত্যাশিতভাবে সম্মেলন শেষ না করেই কানাডা ছেড়ে ওয়াশিংটনে ফিরে যান। ট্রাম্প স্পষ্ট করেননি কেন তিনি সম্মেলনের সময় থেকে আগেভাগে দেশে ফিরছেন, তবে যুদ্ধবিরতির সঙ্গে তাঁর ফেরা যুক্ত করার অনুমান তিনি সরাসরি অস্বীকার করেছেন।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ সংবাদ মাধ্যমে জানান, যুক্তরাষ্ট্র ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা শুরু করেছে, যা যদি সফল হয় তবে মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটি বড় ইতিবাচক সংকেত হবে। তবে ট্রাম্প পরে নিজেই মাখোঁর বক্তব্যের পরিপন্থী মত দেন, বলছেন তাঁর ওয়াশিংটনে ফেরার ‘গুপ্ত কারণ’ যুদ্ধবিরতির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।

গ্লোবাল কমিউনিটির প্রতিক্রিয়া

জি-৭’র এই যৌথ বিবৃতি আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলো স্পষ্ট সঙ্কেত দিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলের পাশে দাঁড়াবে এবং ইরানকে আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। তবে একই সঙ্গে তারা মধ্যপ্রাচ্যে সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সকল পক্ষকে সৎ ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র থেকে সরিয়ে আনা এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান গ্রহণ করার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা সম্ভব হতে পারে। তবে এই পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল এবং এতে সকল পক্ষের সমঝোতা ও দীর্ঘমেয়াদি কূটনৈতিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা

মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও। গ্যাসের দাম থেকে শুরু করে রেমিটেন্স, বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এই অঞ্চলের অস্থিরতার প্রভাব পড়ে। বিশেষত, মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করা বাংলাদেশি প্রবাসীরা উদ্বিগ্ন।

বাংলাদেশ সরকার দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য আন্তর্জাতিক উদ্যোগের অংশগ্রহণ করে আসছে। এসময় বাংলাদেশ আশা করে, গ্লোবাল শক্তিগুলো সংকট নিরসনে আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ এবং ফলপ্রসূ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

  • কানাডায় অনুষ্ঠিত ৫১তম জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন ঘোষণা।
  • ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার মূল উৎস হিসেবে দায়ী করা হয়।
  • ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার এবং ইরানের পারমাণবিক অস্ত্রাধিকার নিষেধাজ্ঞা জোরদার করা হয়।
  • মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানানো হয়।
  • যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্মেলন আগেভাগে ত্যাগ, যার কারণ অজানা থেকে যায়।
  • ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাখোঁ এবং ট্রাম্পের মধ্যে মতপার্থক্য, যেটি যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা নিয়ে জোরালো আলোচনা সৃষ্টি করেছে।
মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button