বিশ্ব

ইসরায়েলি আগ্রাসনের খবরের মাঝে ইরানে টিভি হামলা

২০২৫ সালের ১৬ জুন, সোমবার ইরানের রাজধানী তেহরানে একটি উদ্বেগজনক ঘটনা ঘটল। সরাসরি সম্প্রচারের সময় ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এক ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়, যার দায় স্বীকার করেছে ইসরায়েল। এই হামলার সময়ই সংবাদপাঠিকা সাহার ইমামি ‘ইসরায়েলের আগ্রাসনের খবর’ উপস্থাপন করছিলেন। হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দে পুরো সেট ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়, এবং তিনি সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যান।

সরাসরি সম্প্রচারের মাঝেই হামলা: কী ঘটেছিল?

সরাসরি সম্প্রচারের সময় ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন আইআরআইবি’র (ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান ব্রডকাস্টিং) স্টুডিওতে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সাহার ইমামি সংবাদ পাঠাচ্ছেন, হঠাৎ এক ঝাঁক ধ্বংসাবশেষ তার মাথার ঠিক ওপর থেকে পড়তে শুরু করে। বিস্ফোরণের আওয়াজের সঙ্গে সঙ্গে তিনি চেয়ার ছেড়ে উঠে দ্রুত সেখান থেকে সরে যান।

এই হামলার কারণে সাময়িকভাবে সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়, তবে কিছু সময় পর পুনরায় কার্যক্রম শুরু হয়। হামলায় কোনো হতাহতের খবর না পাওয়া গেলেও ধ্বংসস্তুপ এবং ধোঁয়া–ধুলায় পুরো কক্ষ ঢেকে যায়।

হামলার প্রেক্ষাপট ও পটভূমি

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, যে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও রেডিও ‘অদৃশ্য হয়ে যাবে’। হামলার পর তিনি এ খবর নিশ্চিত করেন এবং বলেন, “এটি ইরানের হাইব্রিড যুদ্ধের অংশ।”

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের প্রধান পেমান জেবেলি হামলাটি নিন্দা করে বলেন, “আমাদের সংবাদমাধ্যম শত্রুদের কৌশলের গভীরে আঘাত করেছে, এজন্য এই হামলা চালানো হয়েছে।” মেহের নিউজ এজেন্সির বরাত দিয়ে তিনি জানান, ইরানের সংবাদকর্মীরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে তারা ইসরায়েলের হাইব্রিড যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন।

তেহরানের সাধারণ মানুষের ভীতিকর দিনগুলো

ইরানের রাজধানী তেহরানে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা ও যুদ্ধের ছায়া নেমে এসেছে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আতঙ্কে মানুষ প্রতিদিন অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন। “কখন ক্ষেপণাস্ত্র এসে পড়বে?”—এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মনে।

এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে হামলা ইরানের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তেহরানসহ বিভিন্ন এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হলেও, এই হামলা পরিস্কার করে দেয় সংঘাত এখন সাধারণ মানুষের ঘরে-ঘরে প্রবেশ করেছে।

ইসরায়েল-ইরানের উত্তেজনা: এক নজরে

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে বিবাদ বহু বছরের। দুই দেশের সম্পর্ক চলমান বিরোধপূর্ণ, যা মাঝে মাঝে সামরিক সংঘর্ষে পরিণত হয়। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তারের কারণে ইসরায়েলের উদ্বেগ বেড়ে গেছে।

বিশেষ করে গত কয়েক মাসে এই দ্বন্দ্ব আরো তীব্র হয়েছে। ইসরায়েল নিয়মিত ইরানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালাচ্ছে, আর ইরান তাদের উপকৃত জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দিয়ে পাল্টা জবাব দিচ্ছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ করণীয়

এই হামলার ব্যাপারে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের সংঘর্ষ থেকে পরোক্ষে পুরো মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিপন্ন হতে পারে।

বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা কমিয়ে কূটনৈতিক মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা। সামরিক সংঘর্ষে কোনো বিজয়ী হয় না, বরং সাধারণ মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ইসরায়েলের হামলার পেছনের কারণ ও ইরানের প্রতিক্রিয়া

  • ইসরায়েল হুমকি দিয়েছিল ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ধ্বংস করার জন্য।
  • তেহরানে সরাসরি সম্প্রচারের সময় আইআরআইবি টেলিভিশনে হামলা চালানো হয়।
  • সংবাদপাঠিকা সাহার ইমামি দৃঢ়তা ও সাহস দেখিয়ে নিরাপদে সরে যান।
  • হামলার পর ইরান আরও সংকটাপন্ন অবস্থায় পৌঁছেছে, সাধারণ মানুষের জীবন কঠিন হচ্ছে।
  • ইরান বলছে তারা এই ‘হাইব্রিড যুদ্ধ’-এ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
  • আন্তর্জাতিক মহল শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।

তেহরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ইসরায়েলের হামলা মধ্যপ্রাচ্যের চলমান উত্তেজনার নতুন অধ্যায়। সরাসরি সম্প্রচারের সময় এই হামলা সংবাদপ্রতিবাদের সাহসিকতার এক নজির হয়ে থাকবে। তবে এর মর্মবিন্দু হলো, এই সংঘাত থেকে বিরত থাকা এবং কূটনৈতিক পথ খোঁজা এখন সময়ের দাবি।

আমাদের আশা, দ্রুত শান্তি প্রতিষ্ঠা পাবে এই অস্থির অঞ্চলে, যাতে সাধারণ মানুষের জীবন স্বাভাবিক হয় এবং তারা নিরাপদে বাস করতে পারেন।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button