বাংলাদেশ

চলন্ত বাসে তরুণীকে ধর্ষণ, গ্রেপ্তার বাসচালক।

সিলেট থেকে নবীগঞ্জ যাওয়ার পথে চলন্ত বাসে এক তরুণীকে পালাক্রমে ধর্ষণের এক শোচনীয় ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি ঘিরে নবীগঞ্জ এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে ঘটনাস্থল থেকে বাসচালককে গ্রেপ্তার করেছে। এ ছাড়া পলাতক বাসের হেলপারকে ধরতে তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

ভুক্তভোগী তরুণী নিজেই দুইজনের নাম উল্লেখ করে নবীগঞ্জ থানায় ধর্ষণের মামলা দায়ের করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেছেন, অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের জঘন্য অপরাধ করতে সাহস না পায়।

ঘটনার বিবরণ

নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. কামরুজ্জামান জানান, গ্রেপ্তারকৃত বাসচালক সাব্বির মিয়া (২৭) নবীগঞ্জ উপজেলার কুর্শি ইউনিয়নের এনাতাবাদ গ্রামের ফকির আলীর ছেলে। অপর অভিযুক্ত হেলপার লিটন মিয়া (২৬) সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার রশিদপুর গ্রামের নুরু মিয়ার ছেলে, যিনি এখনো পলাতক রয়েছেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী তরুণী বানিয়াচং উপজেলার বাসিন্দা হলেও বর্তমানে ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় বসবাস করেন। রোববার দুপুরে ঢাকার ফার্মগেট থেকে ‘বিলাস পরিবহন’ নামে একটি বাসে সিলেট আসেন তিনি। এরপর দাদার বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে ‘মা এন্টারপ্রাইজ’ নামক বাসে ওঠেন। শেরপুর এলাকায় বাসটি যখন যাত্রীশূন্য হয়, তখন বাসের হেলপার ও চালক তাঁকে একা পেয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সাড়া ও অভিযানের বর্ণনা

আউশকান্দি এলাকায় পৌঁছালে তরুণীর চিৎকারে স্থানীয় বাসিন্দারা সেনাবাহিনী ও পুলিশকে খবর দেন। রাত ১২টার দিকে নবীগঞ্জ-আউশকান্দি সড়কের ছালামতপুর এলাকায় স্থানীয়রা বাসচালককে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেন। তৎক্ষণাৎ তরুণীকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।

পুলিশ ও প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার (এসপি) এ এন এম সাজেদুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে জানান, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং নিন্দনীয়। ইতোমধ্যে বাসচালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পলাতক হেলপারকে ধরতে অভিযান চলছে। আমরা মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি।”

তিনি আরও জানান, ভুক্তভোগী তরুণী ঢাকায় একটি কলেজে পড়াশোনা করেন এবং গার্মেন্টস খাতে চাকরিও করেন। মানসিক অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় বিস্তারিত তথ্য জানাতে পারছেন না।

সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও প্রত্যাশা

নবীগঞ্জের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও সাধারণ মানুষ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এমন দৃষ্টান্তমূলক অপরাধ যেন আর কেউ না ঘটাতে পারে, সেজন্য কঠোর আইন প্রয়োগ প্রয়োজন। তারা অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানের দাবি জানিয়েছেন।

চলন্ত বাসে ধর্ষণ: বাংলাদেশের সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশে নারীর নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়। বিশেষ করে যাতায়াতের ক্ষেত্রে অনেক সময় নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। চলন্ত বাসে বা গণপরিবহনে নারীদের ওপর সন্ত্রাসী, ধর্ষণ ও হয়রানির ঘটনা বেশ উদ্বেগজনক।

সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই ধরণের অপরাধ দমনে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। গণপরিবহনে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, পুলিশি টহল জোরদার, নারী নিরাপত্তা কমিটি গঠন ইত্যাদি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে কার্যকর বাস্তবায়ন ও অপরাধীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করাই হলো মূল চ্যালেঞ্জ

নারীর নিরাপত্তায় করণীয়

  • সচেতনতা বৃদ্ধি: নারীরা তাদের নিজস্ব নিরাপত্তার জন্য সচেতন হওয়া প্রয়োজন, যেমন অচেনা মানুষের সঙ্গে কথোপকথন ও যাতায়াতের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা।
  • পরিবহন সেক্টরের দায়িত্ব: বাস চালক, হেলপার ও পরিবহন মালিকরা নারী যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিতে হবে।
  • আইনের কঠোর প্রয়োগ: ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতার অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে যেন কেউ এ ধরনের অপরাধ করতে সাহস না পায়।
  • সুরক্ষা প্রযুক্তি ব্যবহার: বাসে সিসিটিভি ক্যামেরা, জরুরি বাটন ও নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করা জরুরি।

অন্যান্য দেশের উদ্ভাবনী উদ্যোগ

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গণপরিবহন ব্যবস্থায় নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নানা আধুনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। যেমন:

  • ভারতে মেট্রো ও বাসে বিশেষ ‘মহিলা কামরা’ চালু করা হয়েছে।
  • দক্ষিণ কোরিয়াজাপানে বাসে সিসিটিভি ক্যামেরার পাশাপাশি জরুরি সাহায্য বাটন রয়েছে।
  • ইউরোপের অনেক দেশে রাতে চলাচলের জন্য নিরাপত্তা গাইড ও সহায়ক কর্মী নিযুক্ত করা হয়।

বাংলাদেশেও এ ধরনের উদ্যোগ দ্রুত গ্রহণ করা প্রয়োজন।;ল্কক

নবীগঞ্জে চলন্ত বাসে এক তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় সমাজের সকল স্তর থেকে নিন্দা ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি উঠেছে। এ ধরনের ঘটনা আমাদের নারীর নিরাপত্তা সংকটকে পুনরায় সামনে নিয়ে এসেছে। এটি শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব নয়, পুরো সমাজকেই নারীর নিরাপত্তায় একযোগে কাজ করতে হবে। সরকারকে অবশ্যই কঠোর আইন প্রণয়ন এবং প্রয়োগ করতে হবে, যাতে ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সব ধরণের সহিংসতা নির্মূল হয়।

আমাদের আশা, নবীগঞ্জে ঘটানো এই দৃষ্টান্তমূলক অপরাধের যথাযথ বিচার ও শাস্তি দ্রুত কার্যকর হবে এবং দেশের প্রত্যেক নারী নিরাপদে চলাফেরা করতে পারবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button