বিশ্ব

ইরানে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন চায় না ইসরায়েল গিদিয়ন সারের স্পষ্ট বক্তব্য

ইসরায়েল সরকার ইরানের শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন করতে চায় না—এমন স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিয়ন সার। সম্প্রতি সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ইসরায়েলের কোনও পরিকল্পনাই নেই ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন করার। ইরানের বর্তমান সরকারকে উৎখাত করা ইসরায়েলের নীতিতে অন্তর্ভুক্ত নয়।

গিদিয়ন সারের বক্তব্যের পেছনের কারণ

গত কয়েক মাসে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বারবার উঠে এসেছে ইরানি শাসক ও ধর্মীয় নেতাদের বিরুদ্ধে সামরিক হস্তক্ষেপের খবর। বিশেষ করে আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়টি নানা আলোচনায় এসেছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে এই ধরনের পরিকল্পনা উপস্থাপনের খবরও প্রকাশ পেয়েছে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজে এই ধরনের আক্রমণের পরিকল্পনাকে খারিজ করেছেন।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিয়ন সার এ প্রসঙ্গে বলেন, “আমাদের লক্ষ্য ইরানের শাসনব্যবস্থা বা ধর্মীয় নেতৃত্ব পরিবর্তন করা নয়। আমরা ইরানের সামরিক আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চাই। নিরাপত্তা আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার।”

মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা এবং ইসরায়েলের অবস্থান

মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের ভৌগলিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বৈচিত্র্যকে বোঝা গেলে এই ধরনের সংকটের কারণ এবং প্রভাব সহজে ধরা পড়ে। ইরান ও ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক শত্রুতা এবং আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার নিয়ে চলমান সংঘাত বিশ্ব রাজনীতির একটি বড় ইস্যু।

ইরান সিরিয়া, লেবাননসহ অন্যান্য অঞ্চলে বিভিন্ন গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়ে ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। এ কারণেই ইসরায়েল সবসময় ইরানের সামরিক কর্মকাণ্ড নজরে রাখে এবং প্রয়োজনে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

গিদিয়ন সার বলেন, “আমাদের নিরাপত্তার জন্য আমরা নিজেদের রক্ষা করতে বাধ্য, তবে আমরা কোনো ধরনের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে ইরানের শাসন ব্যবস্থা বদলাতে চাই না। আমরা শান্তি এবং স্থায়িত্ব কামনা করি।”

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সম্পর্ক ও ভুমিকা

যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যে ঘনিষ্ঠ মিত্র। বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সময় যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে ইসরায়েলের পাশে থাকা দৃঢ় হয়েছিল। তবে, ট্রাম্পের সময়ের শেষে এমন কিছু পরিকল্পনা প্রকাশ পেলেও, তিনি তা বাস্তবায়নের অনুমোদন দেননি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের উদ্দেশ্য মূলত ইরানের পরমাণু অস্ত্র প্রোগ্রাম রুখে দেওয়া এবং আঞ্চলিক শান্তি বজায় রাখা। কিন্তু সরাসরি ইরানের শাসন ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপের চেষ্টা তাদের কূটনৈতিক নীতির বাইরে।

ইরানের প্রতিক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ইরান বারবার তাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষার কথা বলেছে এবং বাইরের কোনও দেশের হস্তক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করেছে। আন্তর্জাতিকভাবে বড় বড় দেশগুলো এই সংকটের মধ্যে কূটনৈতিক সমাধান খোঁজার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোতে মাঝে মাঝে মতভেদ থাকলেও, সামরিক সংঘর্ষের পরিবর্তে কূটনৈতিক আলোচনা এবং নিষ্পত্তির পথ খোঁজাই প্রাধান্য পাচ্ছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এ বিষয় নিয়ে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং সমাধান প্রস্তাব করছে।

সামগ্রিক বিশ্লেষণ: ইসরায়েল-ইরান সংঘাত ও ভবিষ্যৎ পথ

ইসরায়েল এবং ইরানের মধ্যকার সংঘাত বহু বছর ধরে চলেছে এবং এটি কেবলমাত্র আঞ্চলিক নয়, বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্যও গুরুতর হুমকি। গিদিয়ন সারের সাম্প্রতিক বক্তব্য থেকে বোঝা যায় যে, ইসরায়েল বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্তি এবং স্থিতিশীলতাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

যদিও ইসরায়েল ইরানের শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের পরিকল্পনা না করলেও, নিজেদের সুরক্ষার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া অব্যাহত রাখবে। অন্যদিকে, ইরানও নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কঠোর অবস্থান নেবে।

মধ্যপ্রাচ্যে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন বা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও সংলাপই একমাত্র বিকল্প। ভবিষ্যতে এই সংকট নিরসনে সঠিক কৌশল ও সহমত গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিয়ন সার স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ইসরায়েল ইরানের শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য কোনও হস্তক্ষেপ করবে না। শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তাদের মূল লক্ষ্য। মধ্যপ্রাচ্যের এই জটিল পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সমাজের সক্রিয় ভূমিকা একান্ত প্রয়োজন।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button