সংঘাতের পর আবার মুখোমুখি হচ্ছে ভারত-পাকিস্তান, কবে কোথায়

ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেট ম্যাচ মানেই বিশ্বের কোটি কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর কাছে এক অনন্য উৎসবের মুহূর্ত। দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ও সামরিক সংঘাতের ছায়া থাকলেও ক্রিকেটের ময়দানে এই দুই পরাশক্তির মুখোমুখি লড়াই সব সময়ই থাকে চরম উত্তেজনাপূর্ণ। গত বছর পাকিস্তানে ভারতীয় দলের সফর না করায় এবং পাকিস্তানি দলের ভারতে না যাওয়া নিয়ে দ্বিপক্ষের সম্পর্কের অনিশ্চয়তার মধ্যেও এখন নতুন করে ২০২৫ সালের নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপে দুই দলের মুখোমুখি হওয়ার খবর এসেছে, যা ক্রিকেট মহলে স্বস্তির সুর বয়ে আনছে।
রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যেও ক্রিকেটের সংযোগ বজায়
গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ভারতের ক্রিকেট দল পাকিস্তানে সফর করবে না এবং পাকিস্তানের দল ভারতে সফর করবে না—এই সিদ্ধান্তটি দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ডের মধ্যে একটি সমঝোতার মাধ্যমে গৃহীত হয়। সেই সমঝোতার কারণ ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি। কিন্তু ২০২৫ সালের মে মাসে দুই দেশের মধ্যে সংঘটিত পাল্টাপাল্টি সামরিক হামলার ফলে ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে কি না সে নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল।
তবে, রাজনৈতিক উত্তেজনার মেঘ কেটে গেছে। আগামী ৫ অক্টোবর শ্রীলঙ্কার কলম্বো শহরের প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য ৮ দলের নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারত ও পাকিস্তান মুখোমুখি হবে নিয়মিত ফরম্যাটে।
২০২৫ নারী বিশ্বকাপের ফরম্যাট ও আয়োজন
২০২৫ সালের নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপ ৩০ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে ২ নভেম্বর ফাইনাল ম্যাচের মাধ্যমে শেষ হবে। মূল আয়োজক দেশ ভারত হলেও এইবার পাকিস্তানের সঙ্গে খেলার জন্য পাকিস্তান দল শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ করবে। পুরো টুর্নামেন্টের সব পাকিস্তান ম্যাচই অনুষ্ঠিত হবে শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন ভেন্যুতে।
বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে বেঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে, যেখানে ভারতের প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। লিগ পর্বে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের মুখোমুখি লড়াই হবে ৫ অক্টোবর, কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে।
সংঘর্ষের পর স্থগিত ক্রিকেট: ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট
২০২৫ সালের এই নারী বিশ্বকাপের ম্যাচটি বিশেষভাবে নজর কাড়বে কারণ গত বছরের এপ্রিলে পেহেলগামে এক বন্দুকধারীর হামলায় ২৬ জন নিহতের পর ভারত ও পাকিস্তান সামরিক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এরপর ভারত-পাকিস্তানের আইপিএল ও পিএসএল ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ভারতীয় মিডিয়ায় পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো ফর্মাল ক্রিকেট ম্যাচ না খেলার দাবি উঠতে থাকে। এশিয়া কাপ ও পুরুষদের বিশ্বকাপেও দুই দলের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
তবে নারী বিশ্বকাপের লিগ পর্বের নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি দলকে অপর দলের সঙ্গে খেলতেই হয়। ফলে দুই দলের মুখোমুখিতা অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়ায়।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভারত-পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক
২০১৯ সালের পর থেকে দুই দেশের ক্রিকেটের মধ্যে এই ধরণের রাজনৈতিক বাধাবিপত্তি কম নয়। ২০২৫-২৭ সালের আইসিসি টুর্নামেন্টগুলোতে ভারত-পাকিস্তান দুদেশের দল একে অপরের দেশে সফর করবে না, এমন একটি সমঝোতা হয়েছে। ২০২৪ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে পাকিস্তানে না গিয়ে ভারত সব ম্যাচ খেলেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে।
এবার ১৩তম নারী বিশ্বকাপেও একই নীতির প্রয়োগ ঘটছে, যেখানে পাকিস্তান দল ভারতে না গিয়েই শ্রীলঙ্কায় সব ম্যাচ খেলবে।
অন্যান্য দল ও টুর্নামেন্টের বিস্তারিত
এই বিশ্বকাপে মোট ৮টি দল অংশ নিচ্ছে — বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশের জন্যও এটি একটি বড় সুযোগ, কারণ তারা ২ অক্টোবর কলম্বোতে পাকিস্তানের সঙ্গে খেলবে। আর ভারতের সঙ্গে তারা খেলবে ২৬ অক্টোবর বেঙ্গালুরুতে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ২০ অক্টোবর কলম্বোতে।
২০২২ সালে সর্বশেষ আয়োজিত নারী বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এবারের টুর্নামেন্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তেমনই তীব্র হবে বলে আশা করা যায়।
ভবিষ্যৎ কি বলছে?
যদিও রাজনৈতিক সম্পর্ক এখনো স্থিতিশীল নয়, তবে ক্রিকেটের মাধ্যমে দুই দেশের মানুষের মধ্যে সংযোগ ও বন্ধুত্বের এক নতুন সেতুবন্ধন গড়ে উঠতে পারে। নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপের মতো আন্তর্জাতিক আসরে ভারত-পাকিস্তানের সম্মিলিত অংশগ্রহণ ক্রীড়া কূটনীতির জন্য একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত হতে পারে।
বিশ্বজুড়ে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই থাকে দারুণ উত্তেজনা, যার প্রভাব পড়বে বিশ্বক্রিকেটের জনপ্রিয়তা এবং নারীদের ক্রিকেটের বিকাশেও। আশা করা যায়, ভবিষ্যতেও দুই দেশের ক্রিকেট দলের মধ্যে খেলাধুলার বন্ধুত্ব বজায় থাকবে এবং ধীরে ধীরে অন্য ফরম্যাটেও দ্বিপাক্ষিক ম্যাচ আয়োজিত হবে।
সংক্ষেপে
- ২০২৫ নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারত ও পাকিস্তান মুখোমুখি হবে
- রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দুই দেশ একে অপরের দেশে সফর করবে না
- পাকিস্তান সব ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কায়, ভারত ভারতেই
- বিশ্বকাপ শুরু হবে ৩০ সেপ্টেম্বর, ফাইনাল ২ নভেম্বর
- নারী ক্রিকেটে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন মাত্রা পাবে
আপনি কি ভাবছেন এই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দ্বৈরথ ভবিষ্যতে কেমন হবে? আপনার মন্তব্য জানান, আমাদের সঙ্গেই থাকুন সিগনালবিডিতে আরও আপডেটের জন্য।