শ্রীলঙ্কার মাটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শুরু হতে যাচ্ছে আগামী ১৭ জুন। এরইমধ্যে আসন্ন সিরিজকে সামনে রেখে নিজেদের চূড়ান্ত স্কোয়াড ঘোষণা করেছে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট (এসএলসি)। টেস্ট সিরিজে শ্রীলঙ্কার নেতৃত্বে থাকছেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার ধনঞ্জয়া ডি সিলভা।
এই সিরিজটি ২০২৫ সালের দ্বিপাক্ষিক সফর সূচির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সিরিজের প্রথম ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে দক্ষিণাঞ্চলের গল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে, আর দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট অনুষ্ঠিত হবে রাজধানী কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে।
সিরিজ সূচি ও প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য এটি ২০২৫ সালের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিদেশ সফর। সাম্প্রতিক সময়ে শ্রীলঙ্কার মাটিতে টেস্টে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স খুব একটা সন্তোষজনক না হলেও নতুন নেতৃত্ব, নতুন কম্বিনেশন এবং উন্নত প্রস্তুতির মাধ্যমে টাইগাররা এবার লড়াকু মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামবে—এমন প্রত্যাশা সবার।
দুই দলের মধ্যকার প্রথম টেস্টটি শুরু হবে ১৭ জুন গলে। ওই ম্যাচের সমাপ্তির কয়েকদিন বিরতির পর আগামী ২৫ জুন থেকে শুরু হবে দ্বিতীয় টেস্ট, কলম্বোতে।
শ্রীলঙ্কা দলের স্কোয়াড বিশ্লেষণ
শ্রীলঙ্কার ঘোষিত ১৮ সদস্যের এই স্কোয়াডে রয়েছে অভিজ্ঞতা ও তরুণ প্রতিভার মিশ্রণ। দলে রয়েছেন এমন সব খেলোয়াড়, যারা অতীতে বাংলাদেশ কিংবা অন্য প্রতিপক্ষের বিপক্ষে নিজেদের দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন। পাশাপাশি রয়েছে কিছু নতুন মুখ, যারা দলের ভবিষ্যৎ শক্তি হিসেবে ধরা হচ্ছে।
শ্রীলঙ্কা টেস্ট স্কোয়াড:
- পাথুম নিসাঙ্কা
- ওশাদা ফার্নান্দো
- লাহিরু উদারা
- দিনেশ চান্দিমাল
- অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস
- ধনঞ্জয়া ডি সিলভা (অধিনায়ক)
- কুশল মেন্ডিস
- কামিন্দু মেন্ডিস
- পসিন্দু সুরিয়াবান্দারা
- সোনাল দিনুশা
- পবন রথনায়েক
- প্রবাথ জয়সুরিয়া
- থারিন্দু রত্নায়েকে
- আকিলা ধানাঞ্জয়া
- মিলন রথনায়েক
- অসিথা ফার্নান্দো
- কাসুন রাজিথা
- ঈশিতা ভিজেসুন্দরা
অভিজ্ঞ ও তরুণদের ভারসাম্য
এই স্কোয়াডে সবচেয়ে নজরকাড়া বিষয় হলো অভিজ্ঞতা এবং তারুণ্যের ভারসাম্য।
অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ও দিনেশ চান্দিমালের মতো সিনিয়র ক্রিকেটারদের উপস্থিতি দলকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করবে। অন্যদিকে পাথুম নিসাঙ্কা, ওশাদা ফার্নান্দো ও কামিন্দু মেন্ডিসের মতো উদীয়মান তারকারা ধারাবাহিকভাবে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পাবেন।
অধিনায়ক ধনঞ্জয়া ডি সিলভা নিজেও ব্যাটে-বলে দলকে ভরসা দিয়ে থাকেন। তার নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কা টেস্ট দলে একটি স্থিতিশীল কাঠামো গড়ে তুলতে পেরেছে।
বোলিং ইউনিটে বৈচিত্র্য
দলের বোলিং বিভাগেও রয়েছে বৈচিত্র্য। স্পিন আক্রমণে আছেন প্রবাথ জয়সুরিয়া, থারিন্দু রত্নায়েকে ও আকিলা ধানাঞ্জয়া। বাংলাদেশের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার স্পিনাররা বরাবরই কার্যকর ভূমিকা রাখেন, বিশেষত ঘরের মাঠের সুবিধা কাজে লাগিয়ে।
পেস বিভাগে অসিথা ফার্নান্দো, কাসুন রাজিথা ও ঈশিতা ভিজেসুন্দরার নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে শক্তিশালী পেস ইউনিট। ব্যাটিং লাইনআপ ভেদ করতে এই তিনজনই বড় ভূমিকা রাখতে পারেন বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ দলের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
শ্রীলঙ্কার মাটিতে খেলতে নামা মানেই বাংলাদেশ দলের জন্য অতিরিক্ত চাপ। বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে স্পিন ও মন্থর উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নেয়াটা চ্যালেঞ্জের হবে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ দল যে উন্নতি করেছে, তাতে ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
এছাড়া দলের তারুণ্যনির্ভর বোলিং ইউনিট এবং অভিজ্ঞ ব্যাটাররা এই সফরে নিজেদের প্রমাণ করতে মরিয়া থাকবে।
কী বলছে পরিসংখ্যান?
পরিসংখ্যান বলছে, এখন পর্যন্ত দুই দল ২৪টি টেস্ট ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে। যেখানে শ্রীলঙ্কা জয় পেয়েছে ১৮ ম্যাচে এবং বাংলাদেশ জয় পেয়েছে মাত্র ১টিতে। বাকি ৫টি ম্যাচ ড্র হয়েছে। তবে গত দুই সিরিজে বাংলাদেশ যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে, তা এবার একটি জয় কিংবা ড্রয়ের আশাবাদী বার্তা দেয়।
র্শকদের আগ্রহ ও সম্প্রচার
এই সিরিজের প্রতি ভক্তদের আগ্রহ ব্যাপক। টেস্ট ক্রিকেটে আবারও পুরোনো উত্তাপ ফিরিয়ে আনবে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার এই দ্বৈরথ। দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ড এবং সম্প্রচারকারী সংস্থাগুলোও দর্শকদের জন্য একাধিক প্ল্যাটফর্মে সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করেছে।
ক্রিকেট বিশ্লেষকরাও বলছেন, এই সিরিজ দুই দলের ভবিষ্যত পারফরম্যান্স মূল্যায়নে বড় ভূমিকা রাখবে।
উপসংহার
বাংলাদেশের বিপক্ষে হোম সিরিজে শক্তিশালী স্কোয়াড গঠন করে আত্মবিশ্বাসী শ্রীলঙ্কা। অভিজ্ঞতার সঙ্গে তারুণ্যের মিশ্রণ, ঘরের মাঠের সুবিধা, স্পিন-বান্ধব কন্ডিশন—সব মিলিয়ে স্বাগতিকরা বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। তবে বাংলাদেশও চাইবে অতীত ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আরও পরিপক্ব টেস্ট দল হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করতে।
এই সিরিজ তাই শুধুমাত্র পরিসংখ্যান নয়, দুই দলের ভবিষ্যতের পথচলার দিকও নির্ধারণ করে দিতে পারে।
