চট্টগ্রামে করোনার পুনরায় সক্রিয়তা, এক দিনে ৯ জন আক্রান্ত

চট্টগ্রাম: চলমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যে চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৯ জনের করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত হয়েছে। এই নিয়ে গত ৯ দিনে মোট ১৮ জন করোনা আক্রান্ত রোগী চিহ্নিত হলো, যা স্থানীয় জনজীবনে পুনরায় সতর্কতার ঝড় তুলে দিয়েছে।
নমুনা পরীক্ষা ও রোগীর সংখ্যা
চট্টগ্রামে করোনা পরীক্ষা কার্যক্রম জোরদার হলেও সরকারি হাসপাতালগুলোতে আরটিপিসিআর পরীক্ষা এখনও চালু হয়নি। তবে আধিকারিকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশার্স ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) এর পরীক্ষাগারগুলো থেকে আরটিপিসিআর পরীক্ষা শুরু হবে।
গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন রোগনির্ণয় কেন্দ্রে ১৫০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এদের মধ্যে ৯ জনের করোনা পজিটিভ আসে। শনাক্ত রোগীদের মধ্যে ৪ জন রয়েছেন এপিক হেলথকেয়ার হাসপাতালে, ২ জন পার্কভিউ হাসপাতালে, ২ জন এভারকেয়ার হাসপাতালে এবং ১ জন মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে।
সরকারি হাসপাতালের প্রস্তুতি ও রোগীদের অবস্থা
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে করোনা বিশেষায়িত ওয়ার্ডে বর্তমানে ৩ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. হামিদুল্লাহ মেহেদী জানান, বর্তমানে ওই রোগীদের অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে এবং নতুন কোনো রোগী ভর্তি হয়নি। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন জানান, সরকারী হাসপাতালগুলোতেও খুব দ্রুত আরটিপিসিআর পরীক্ষা চালু করা হবে, যা করোনা শনাক্তকরণকে আরও গতিশীল করবে।
করোনা পরিস্থিতি ও সতর্কতার প্রয়োজনীয়তা
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নতুন রূপ নিয়ে মাঝে মাঝে ফিরে আসার পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম শহরে এই পুনরায় সংক্রমণের ঘটনা সতর্কতার জন্য ইঙ্গিত দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা এখনও সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়নি এবং সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব নয় যদি না সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন। মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং নিয়মিত হাত ধোয়ার মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ কমানো সম্ভব।
সর্বশেষ পরিসংখ্যান ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি
গত বছরের তুলনায় এখনো করোনা সংক্রমণ অনেক কম থাকলেও এই নতুন সংক্রমণের তথ্যগুলো স্থানীয় প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করছে। স্বাস্থ্যবিষয়ক কর্মীরা জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ক্যাম্পেইন চালাচ্ছেন। সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে সবাইকে অনুরোধ জানানো হয়েছে, যে কোনো অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগাযোগ করার জন্য।
চট্টগ্রামে করোনা পরীক্ষার আধুনিকায়ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিআইটিআইডি-তে আরটিপিসিআর পরীক্ষা চালু হলে করোনা শনাক্তকরণে গতি আসবে। এতে দ্রুত আক্রান্তদের শনাক্ত করে তাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করা সহজ হবে। এছাড়া স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ বৃদ্ধি করাও পরিকল্পনার অংশ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকেও করোনার পুনরুত্থান রোধে নিয়মিত তদারকি ও অর্থায়ন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
করোনার উপসর্গ ও কীভাবে সুরক্ষিত থাকবেন
করোনা রোগের সাধারণ উপসর্গগুলো হল জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, গন্ধ ও স্বাদের অনুভূতি হারানো। এসব উপসর্গ দেখা দিলে অবিলম্বে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। নিয়মিত মাস্ক পরিধান, হাত ধোয়া, জনসমাগম এড়ানো, এবং টিকা গ্রহণের মাধ্যমে নিজেকে এবং পরিবারকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব।
বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের পরিস্থিতি
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এখনও করোনা ভাইরাসের নতুন স্ট্রেন নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। বিভিন্ন দেশে মাঝে মাঝে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রস্তুতি জোরদার করেছে। করোনা টিকার পাশাপাশি বুস্টার ডোজ দেওয়ার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
চট্টগ্রামে করোনার পুনরায় সক্রিয়তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এক দিনে ৯ জন নতুন আক্রান্ত হওয়ার খবর সতর্কতার খুঁটির মতো। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, দ্রুত পরীক্ষা করানো এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা নেওয়া এখন সময়ের দাবি। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলো করোনা শনাক্তকরণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। জনসাধারণের সচেতনতা ও স্বাস্থ্যকর্মীদের তৎপরতা করোনার পুনরাবৃত্তি রোধে অত্যন্ত জরুরি।