ছুটি শেষে ব্যাংক ও শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হচ্ছে কাল

ঈদুল আজহার দীর্ঘ ছুটির পর আগামীকাল রোববার (১৫ জুন) থেকে দেশের ব্যাংকিং কার্যক্রম ও শেয়ারবাজারের লেনদেন আবারও শুরু হচ্ছে। একটানা ১০ দিনের ছুটির পর এদিন সকাল থেকেই আবার সচল হবে দেশের আর্থিক খাত। এর ফলে দীর্ঘদিনের স্থবিরতা কাটিয়ে ব্যাংক, বাণিজ্য ও পুঁজিবাজারে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরকারি ছুটি, সাপ্তাহিক ছুটি ও ঈদ উপলক্ষে ৫ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত দেশের ব্যাংক ও শেয়ারবাজারসহ অধিকাংশ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এত দীর্ঘ সময়ব্যাপী একটানা বন্ধের ফলে সাধারণ গ্রাহক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে দেখা দিয়েছিল নানা ভোগান্তি, বিশেষ করে নগদ অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে।
এটিএম ও অনলাইন লেনদেনে সীমাবদ্ধতা
ব্যাংক বন্ধ থাকলেও এ সময়ে অনলাইন ব্যাংকিং এবং এটিএমের মাধ্যমে লেনদেন চালু ছিল। তবে সেই সেবায় ছিল নানা সীমাবদ্ধতা। অধিকাংশ ব্যাংক নিজেদের গ্রাহকদের সেবা দিতে সক্ষম হলেও অন্যান্য ব্যাংকের কার্ডধারীদের জন্য সীমিত সেবা চালু রেখেছিল। ফলে অনেক গ্রাহকই প্রয়োজনীয় অর্থ উত্তোলন করতে পারেননি।
বিশেষ করে ঈদের সময়ে নগদ অর্থের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। গ্রাহকদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, প্রয়োজনের সময় এটিএম বুথে অর্থ না থাকায় তাদেরকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। অনেক বুথে সার্ভার সমস্যার কারণেও লেনদেন ব্যাহত হয়েছে।
শেয়ারবাজারে ১০ দিনের নীরবতা
ব্যাংকিং খাতের পাশাপাশি শেয়ারবাজারেও ঈদের ছুটির কারণে একটানা ১০ দিন কোনো লেনদেন হয়নি। করোনাভাইরাস মহামারির পর এটিই সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য লেনদেন বন্ধ থাকার নজির।
তবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এ নিয়ে তেমন কোনো অসন্তোষ দেখা যায়নি। পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিন ধরে চলমান দরপতনের কারণে অনেকেই ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন। এই সময়টিতে লেনদেন বন্ধ থাকায় তাদের দৈনন্দিন ক্ষতির হার রোধ হয়েছে বলে অনেকেই মত প্রকাশ করেছেন।
বাণিজ্যে স্থবিরতা
ব্যাংক বন্ধ থাকার প্রভাব পড়েছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যেও। বিশেষ করে আমদানি-রপ্তানি নির্ভর ব্যবসায়িক কার্যক্রমে দেখা গেছে স্থবিরতা। চট্টগ্রাম বন্দরে সীমিত পরিসরে কার্যক্রম চালু থাকলেও অন্যান্য অফিস, কাস্টমস ও ব্যাংক বন্ধ থাকায় পণ্য খালাস হয়নি কাঙ্ক্ষিত হারে। ফলে বন্দরে কনটেইনার জমে গেছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ছুটির মধ্যে প্রয়োজনীয় ন্যূনতম জনবল রেখে বন্দরের কার্যক্রম সচল রাখা হয়েছিল। কিন্তু ব্যাংক বন্ধ থাকায় অর্থ লেনদেন ও কাগজপত্রের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি, ফলে আমদানি পণ্য খালাস অনেকাংশেই ব্যাহত হয়েছে।
আগামীকাল থেকে স্বাভাবিক কার্যক্রম
ব্যাংক ও পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর বরাতে জানা গেছে, আগামীকাল রবিবার থেকে সব কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হবে। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ব্যাংকিং লেনদেন চালু থাকবে।
অন্যদিকে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সূত্রে জানা গেছে, শেয়ারবাজারে সকাল ১০টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত একটানা লেনদেন চলবে।
বিনিয়োগকারীরা ইতোমধ্যে বাজারে সক্রিয় হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে অনেকেই এখনও সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গি অবলম্বন করছেন। বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সরকারের নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছেন তারা।
আর্থিক খাতের চ্যালেঞ্জ
এই দীর্ঘ ছুটির সময়কাল অনেক ব্যবসায়ীর জন্য আর্থিকভাবে চ্যালেঞ্জিং ছিল। এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) নিষ্পত্তি, আমদানি পণ্য ছাড়, বেতন-ভাতা পরিশোধ, ব্যবসায়িক চুক্তি ও ব্যাংক গ্যারান্টি সংক্রান্ত কার্যক্রম সবকিছুই স্থবির হয়ে পড়েছিল।
বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা (এসএমই) এই ছুটির প্রভাব বেশি অনুভব করেছেন। কারণ তাদের নগদ প্রবাহ সীমিত এবং তারা ব্যাংকিং সেবার ওপর সরাসরি নির্ভরশীল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, এমন দীর্ঘ ছুটি ব্যাংকিং ব্যবস্থায় একটি ধরনের চাপ সৃষ্টি করে। তবে এবার আগে থেকেই ছুটির প্রস্তুতি থাকায় বড় ধরনের কোনো সংকট দেখা যায়নি।
পরবর্তী দিকনির্দেশনা
ব্যাংক খাতকে আরও গ্রাহকবান্ধব করতে এবং ছুটির সময়েও নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করতে আগামীতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে এটিএম সেবা সম্প্রসারণ, আন্তঃব্যাংক লেনদেনে সহজতা এবং অনলাইন ব্যাংকিংয়ে আরও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার অন্যতম।
শেয়ারবাজার নিয়েও রয়েছে নানা আলোচনা। বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে দীর্ঘমেয়াদি নীতিনির্ধারণী উদ্যোগ জরুরি বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও বাজার বিশ্লেষকেরা।
উপসংহার
ঈদের ছুটি শেষে দেশের আর্থিক খাত আবারও স্বাভাবিক ধারায় ফিরছে। ব্যাংক ও শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরুর মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল হবে বলে আশা করা যায়। তবে দীর্ঘ ছুটির সময় তৈরি হওয়া কিছু সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে সরকার, ব্যাংকিং খাত ও বিনিয়োগকারীদের।