ক্রিকেট

ক্রিকেটের চিরদিনের আক্ষেপ ঘুচিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকা

লর্ডসের ঐতিহাসিক মাঠে আজ ভোরে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত অধ্যায়টি রচিত হলো। অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৩–২৫–এর শিরোপা জিতে নিয়েছে প্রোটিয়ারা।

টেস্টে ফিরে আসার ৩৩ বছর পর, বিশ্বকাপ-ভাগ্যদেবীর কাছ থেকে বহুবার মুখ ফিরিয়ে নেওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা অবশেষে ছুঁতে পারল ‘বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন’ তকমা।

হ্যামস্ট্রিং চোট, চাপ, ইতিহাস—সব জয় করে দক্ষিণ আফ্রিকা

প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৩৮ রানে অলআউট হয়ে পিছিয়ে পড়া দলটি দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায়। চতুর্থ ইনিংসে ২৮২ রানের লক্ষ্য তাড়া করা, তাও লর্ডসে—এটা টেস্ট ইতিহাসেই বিরল।

এইডেন মার্করাম খেলেছেন এক অনবদ্য ইনিংস—১৩৬ রান, যার ওপর দাঁড়িয়েই প্রোটিয়ারা গড়ে তোলে জয়ের ভিত। অধিনায়ক টেম্বা বাভুমার সঙ্গে তাঁর ১৪৭ রানের জুটি ছিল ম্যাচের মোড় ঘোরানো মুহূর্ত।

চাপের মুখে ভেঙে পড়া দক্ষিণ আফ্রিকার পুরোনো পরিচিতি মুছে গিয়ে এবার দেখা দিল এক সাহসী, ধারাবাহিক এবং নির্ভরযোগ্য দল।

প্রতিরোধ, প্রত্যাবর্তন ও প্রাপ্তির গল্প

বাভুমা দিনের শুরুতে হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট নিয়ে ফিরে গেলেও, দল ভেঙে পড়েনি। বরং, মার্করাম–মুল্ডার–ভেরেইনা সবাই মিলে এক অনন্য দলীয় লড়াইয়ে নাম লেখালেন ইতিহাসে।

১৯৯২ সালের সেই ব্রিজটাউন টেস্টে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার পর প্রথম ম্যাচে জয়ের সুবাস পেয়েও হেরে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। আজ সেই পুরোনো আক্ষেপকে জয় করে লেখা হলো নতুন অধ্যায়।

ইতিহাস গড়া কিছু তথ্য:

  • টেস্ট ইতিহাসে মাত্র তৃতীয়বার লর্ডসে চতুর্থ ইনিংসে ২৮২ বা তার বেশি রান করে জিতল কোনো দল
  • দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম বৈশ্বিক টেস্ট শিরোপা
  • বৈশ্বিক ক্রিকেট টুর্নামেন্টে প্রথমবার ‘বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন’ হওয়ার স্বাদ পেল দলটি
  • ছয় মাস পর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ফেরা মার্করামের সেঞ্চুরি ম্যাচ জয়ের বড় চালিকাশক্তি

ম্যাচের সংক্ষিপ্ত স্কোর:

অস্ট্রেলিয়া: ২১২ ও ২০৭
দক্ষিণ আফ্রিকা: ১৩৮ ও ২৮২/৫ (৮৩.৪ ওভারে)
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৫ উইকেটে জয়ী

উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্স:

  • মার্করাম ১৩৬
  • বাভুমা ৬৬
  • স্টার্ক ৩/৬৬

সাফল্যের কান্না আর লজ্জার মুক্তি

জয়সূচক রানটি যখন কাইল ভেরেইনা নেন, তখন লর্ডসের ড্রেসিংরুমে কেবল উল্লাসই নয়, অনেকের চোখে জল। ১৪টি নকআউট ম্যাচ হারা সেই দলের চোখে আজ শুধু জয়ের দীপ্তি।

এই জয় শুধু একটি ম্যাচ জয় নয়, এটি একটি জাতির, একটি দলীয় মনস্তত্ত্বের—‘আমরা পারি’—এই বার্তার বিজয়।

১৯৯৮ সালের ঢাকার আইসিসি নকআউট ট্রফি জয়ের পর বিশ্বমঞ্চে আর কোনো বৈশ্বিক ট্রফি ছিল না দক্ষিণ আফ্রিকার। আজ, ২০২৫ সালে, তারা সেই শূন্যতা পূরণ করল—বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়ন হয়ে।

চাপের মুখে চুরমার হওয়ার বদনাম ঘুচিয়ে, দুর্দান্ত দলগত প্রচেষ্টায়, দক্ষিণ আফ্রিকা আজ কেবল ট্রফি জেতেনি—তারা ইতিহাস লিখেছে।

অভিনন্দন প্রোটিয়ারা!

দক্ষিণ আফ্রিকা আজ শুধু বিশ্বচ্যাম্পিয়ন নয়—তারা প্রমাণ করেছে, “আশা যদি থাকে, ইতিহাস বদলানো সম্ভব।”

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button