অর্থনীতি

যুক্তরাজ্যের এনসিএর সম্পদ জব্দ, ধন্যবাদ জানালেন গভর্নর

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইমস এজেন্সি (এনসিএ) কর্তৃক বেক্সিমকো গোষ্ঠীর শায়ান ও শাহরিয়ার রহমান এবং সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর কোটি কোটি পাউন্ডের সম্পদ জব্দ করার ঘটনায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। এ সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে গভর্নর জানান, এই উদ্যোগ বাংলাদেশের জন্য বড় পাওয়া এবং তিনি আশাবাদী, এ ধরণের পদক্ষেপ অন্য দেশের কর্তৃপক্ষকেও অনুপ্রাণিত করবে।

শায়ান রহমান ও শাহরিয়ার রহমান, যাদের সম্পদ জব্দ করা হয়েছে, তারা ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ঘনিষ্ঠ পরিবারের সদস্য। সাইফুজ্জামান চৌধুরী একজন সাবেক মন্ত্রী হিসেবে পরিচিত। তাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন আর্থিক দুর্নীতি ও সম্পদ পাচারের অভিযোগ রয়েছে।

গভর্নরের লন্ডন সফর ও এনসিএ’র সঙ্গে বৈঠক

গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ১০ থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত লন্ডন সফর করেন। এই সফরে তিনি দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেনের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের এনসিএ পরিদর্শন করেন। সেখানে তারা ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্টি-করাপশন কো-অর্ডিনেশন সেন্টার (আইএসিসি)-এর প্রধান এবং অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

গভর্নর জানান, বাংলাদেশের অ্যাসেট রিকভারি টাস্কফোর্স ও আইএসিসির মধ্যে সমন্বয় অত্যন্ত ইতিবাচক। এর ফলে দেশের অর্থ পাচার রোধ এবং অবৈধ সম্পদ উদ্ধারে বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে।

জয়েন্ট ইনভেস্টিগেশন টিম ও সম্পদ পুনরুদ্ধার

গভর্নর বিশেষ করে ১১টি অগ্রাধিকারভিত্তিক অর্থ পুনরুদ্ধার মামলায় কাজ করা জয়েন্ট ইনভেস্টিগেশন টিমকে (জেআইটি) কারিগরি সহায়তা প্রদানের জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি জানান, যুক্তরাজ্যের এনসিএ ২৬০ কোটি পাউন্ডের সম্পদ জব্দ করেছে, যা বাংলাদেশের জন্য এক বড় সাফল্য।

আইনি লিটিগেশন ফান্ড ও রাউন্ড টেবিল বৈঠক

গভর্নর লন্ডনে ডিএলএ পাইপার নামক আন্তর্জাতিক আইন সংস্থা আয়োজিত অ্যাসেট রিকভারি রাউন্ড টেবিলের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এ বৈঠকে লন্ডনের শীর্ষ লিটিগেশন ফান্ডার ও তদন্ত সংস্থাগুলো অংশ নেন। তারা ২০২৫ সালের মধ্যে ৩০টি মামলা পরিচালনার জন্য ১০ কোটি ডলারের লিটিগেশন তহবিল গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন।

বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য স্বতন্ত্র ব্যাংকের সঙ্গে দ্রুত এনডিএ (গোপনীয়তা চুক্তি) স্বাক্ষর করে খেলাপি ঋণ সম্পর্কিত তথ্য বিনিময় এবং সম্পদ পুনরুদ্ধারে আইনি পদক্ষেপ ত্বরান্বিত করার ওপর গুরুত্ব দেন।

বিশেষ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সম্পদ পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া শক্তিশালীকরণ

গভর্নর আহসান এইচ মনসুর যুক্তরাজ্য ও সিঙ্গাপুরের মতো দেশের আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বাংলাদেশেও একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠান গঠনের প্রস্তাব দেন। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সম্পদ উদ্ধার প্রক্রিয়াকে পেশাদার, স্বচ্ছ ও স্থিতিশীল করা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন। এতে রাজনৈতিক পরিবর্তন হলেও সম্পদের নিরাপত্তা বজায় থাকবে।

বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বৈঠক ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা

গভর্নর ব্ল্যাকরকের মতো বিশ্বের বৃহত্তম সম্পদ ব্যবস্থাপক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানান। তিনি বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ব্যাংকিং খাত এবং পুঁজিবাজারের সম্ভাবনা তুলে ধরেন।

এছাড়াও, লন্ডনের লর্ড মেয়র এবং বিভিন্ন আর্থিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের আর্থিক খাতের সঙ্গে লন্ডন সিটির বিনিয়োগ ও সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করেন। গভর্নর লর্ড মেয়রকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান, যা দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

প্রবাসী আয় ও মানি এক্সচেঞ্জ হাউসের ভূমিকা

গভর্নর লন্ডনে বেশ কয়েকটি মানি এক্সচেঞ্জ হাউসের সঙ্গে বৈঠক করে প্রবাসী আয় দেশে দ্রুত ও নিরাপদে পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ আলোচনা করেন। তিনি প্রবাসীদের জন্য রেমিটেন্স প্রক্রিয়া সহজতর করার ওপর গুরুত্ব দেন এবং দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী আয় প্রবাহ অব্যাহত রাখতে চান।

সংক্ষিপ্তসার ও ভবিষ্যৎ প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও সম্পদ পুনরুদ্ধারে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এখন অতীব জরুরি। যুক্তরাজ্যের এনসিএর পদক্ষেপ দেশের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। এই পদক্ষেপ শুধু সম্পদ জব্দের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং বিশ্বব্যাপী অপরাধ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোরদার পদক্ষেপ নেওয়ার পথ সুগম করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের নেতৃত্বে দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় দুর্নীতি ও অর্থ পাচার প্রতিরোধে আরও কার্যকর ভূমিকা নিতে সক্ষম হবে। এটি দেশের অর্থনীতির টেকসই উন্নয়নে বড় অবদান রাখবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button