
বেলজিয়ান ফুটবল তারকা কেভিন ডি ব্রুইনা ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দাপুটে ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটির সঙ্গে দশ বছরের সফল যাত্রা শেষ করে ইতালিয়ান সিরি আ’র ক্লাব নাপোলিতে যোগ দিয়েছেন। এই স্থানান্তর ফুটবল বিশ্বে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে, কারণ ডি ব্রুইনাকে প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নাপোলির সভাপতি অরেলিও দে লরেন্তিস বৃহস্পতিবার (১২ জুন) নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই চুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। দুই বছরের জন্য নাপোলির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন ডি ব্রুইনা, এবং চুক্তিতে এক বছরের মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগও রাখা হয়েছে।
এই স্থানান্তরের মাধ্যমে ডি ব্রুইনা তার জাতীয় দলের সতীর্থ রোমেলু লুকাকুর সঙ্গে নাপোলিতে একত্রিত হচ্ছেন। এই দুই বেলজিয়ান তারকার সমন্বয় নাপোলির মিডফিল্ড ও আক্রমণভাগকে আরও শক্তিশালী করবে বলে ফুটবল বিশ্লেষকরা মনে করছেন। নাপোলি, যারা ডিয়েগো ম্যারাডোনার সময় থেকেই ফুটবল বিশ্বে একটি বিশেষ স্থান ধরে রেখেছে, এই স্থানান্তরের মাধ্যমে তাদের দলে একজন বিশ্বমানের খেলোয়াড়কে যুক্ত করল।
ম্যানচেস্টার সিটিতে ডি ব্রুইনার উজ্জ্বল অধ্যায়
২০১৫ সালে জার্মান ক্লাব ভলফসবুর্গ থেকে ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগ দেন কেভিন ডি ব্রুইনা। এরপর থেকে তিনি ক্লাবটির সাফল্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠেন। ম্যানসিটির হয়ে তিনি ১৯টি শিরোপা জিতেছেন, যার মধ্যে রয়েছে ছয়টি প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা এবং একটি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা। এছাড়াও, তিনি দুইবার প্রিমিয়ার লিগের মৌসুম সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন, যা তার অসাধারণ প্রতিভা ও ধারাবাহিকতার প্রমাণ।
ডি ব্রুইনার খেলার শৈলী তাকে ফুটবল বিশ্বে একটি অনন্য স্থান এনে দিয়েছে। তার দূরপাল্লার পাস, গোলের সুযোগ তৈরি করার ক্ষমতা এবং মাঠের মাঝখানে খেলা নিয়ন্ত্রণের দক্ষতা তাকে একজন অপরিহার্য খেলোয়াড়ে পরিণত করেছে। ম্যানচেস্টার সিটির কোচ পেপ গার্দিওলার অধীনে তিনি তার ক্যারিয়ারের শীর্ষে পৌঁছেছেন। তবে, চলতি মাসে তার সঙ্গে ম্যানসিটির চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় তিনি ফ্রি এজেন্ট হিসেবে নতুন গন্তব্যের সন্ধানে ছিলেন।
নাপোলিতে নতুন শুরু
নাপোলির সঙ্গে ডি ব্রুইনার চুক্তি ফুটবল বিশ্বে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। সিরি আ’র বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা তাদের দলকে আরও শক্তিশালী করতে এই তারকা মিডফিল্ডারকে দলে ভেড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নাপোলির কোচিং স্টাফ এবং সমর্থকরা ডি ব্রুইনার অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতার উপর ব্যাপক আস্থা রাখছেন। তার সঙ্গে রোমেলু লুকাকুর উপস্থিতি নাপোলির আক্রমণভাগকে আরও মারাত্মক করে তুলবে।
নাপোলির সভাপতি অরেলিও দে লরেন্তিস এই স্থানান্তরকে একটি “বৈপ্লবিক পদক্ষেপ” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “কেভিন ডি ব্রুইনার মতো একজন খেলোয়াড় আমাদের দলে যোগ দিয়েছেন, এটি আমাদের ক্লাবের জন্য একটি গৌরবের মুহূর্ত। তার অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা আমাদের দলকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।”
অন্যান্য প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান
উল্লেখ্য, ডি ব্রুইনাকে যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) ক্লাব শিকাগো ফায়ার একটি প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে, তিনি সেই প্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে ইউরোপেই থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নাপোলির প্রস্তাব তার কাছে বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়েছে, বিশেষ করে ক্লাবটির ঐতিহ্য এবং সাম্প্রতিক সাফল্যের কারণে। সিরি আ’তে নাপোলির সাম্প্রতিক আধিপত্য এবং ডিয়েগো ম্যারাডোনার মতো কিংবদন্তির সঙ্গে ক্লাবটির সম্পর্ক ডি ব্রুইনার সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ফুটবল বিশ্বে প্রভাব
ডি ব্রুইনার এই স্থানান্তর ফুটবল বিশ্বে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রিমিয়ার লিগ থেকে সিরি আ’তে তার এই পরিবর্তন অনেক সমর্থকের জন্য অপ্রত্যাশিত হলেও, এটি নাপোলির জন্য একটি বড় অর্জন। তার অভিজ্ঞতা এবং খেলার ধরন সিরি আ’র প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে নাপোলিকে আরও শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে।
এছাড়াও, ডি ব্রুইনা এবং লুকাকুর মতো দুই বেলজিয়ান তারকার একত্রিত হওয়া নাপোলির খেলার কৌশলকে আরও বৈচিত্র্যময় করে তুলবে। এই দুই খেলোয়াড়ের সমন্বয় কীভাবে মাঠে প্রতিফলিত হয়, তা দেখার জন্য ফুটবলপ্রেমীরা মুখিয়ে রয়েছেন।
সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া
ম্যানচেস্টার সিটির সমর্থকরা ডি ব্রুইনার বিদায়ে হতাশা প্রকাশ করলেও, তার অবদানের জন্য তারা কৃতজ্ঞ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক সমর্থক তাকে শুভকামনা জানিয়েছেন এবং তার নতুন যাত্রার জন্য উৎসাহ প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে, নাপোলির সমর্থকরা ডি ব্রুইনার আগমনে উচ্ছ্বসিত। তারা মনে করছেন, এই স্থানান্তর নাপোলির সাফল্যের ধারাকে আরও জোরদার করবে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
নাপোলির হয়ে ডি ব্রুইনার প্রথম মৌসুমে তার পারফরম্যান্স কীভাবে হয়, তা ফুটবল বিশ্বের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে। তার অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা নাপোলির তরুণ খেলোয়াড়দের জন্যও একটি শিক্ষণীয় উদাহরণ হতে পারে। এছাড়াও, সিরি আ’র প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে তার খেলার ধরন কীভাবে মানিয়ে নেয়, তা দেখার বিষয়।
ডি ব্রুইনার এই স্থানান্তর ফুটবল বিশ্বে একটি নতুন গল্পের সূচনা করেছে। তার নতুন অধ্যায়ে কী অপেক্ষা করছে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে, একটি বিষয় নিশ্চিত—কেভিন ডি ব্রুইনার মতো একজন খেলোয়াড় যে কোনো দলের জন্য একটি সম্পদ।