নির্বাচনের তারিখ নিয়ে সমঝোতা ব্যবসায়ীদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে: তাসকীন আহমেদ

দেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে যখন রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা বিরাজ করছিল, ঠিক তখনই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠক দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ও ব্যবসা-বাণিজ্য পরিস্থিতি নিয়ে আশার সঞ্চার করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)-এর সভাপতি তাসকীন আহমেদ এক বিবৃতিতে বলেন, নির্বাচনের তারিখ নিয়ে সমঝোতা হলে তা দেশের ব্যবসায়ী শ্রেণির আত্মবিশ্বাস অনেকগুণ বাড়াবে।
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের প্রয়োজনীয়তা
তাসকীন আহমেদ বলেন, “আমরা সবসময়ই চাই রাজনীতি ও ব্যবসা আলাদা থাকুক। তবে বাস্তবতা হলো, রাজনৈতিক অস্থিরতা সরাসরি ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা স্থিতিশীলতা না পেলে বিনিয়োগে অনিচ্ছুক হয়ে পড়েন। অতএব, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য।”
তিনি আরও বলেন, “গত এক বছর ধরে দেশের অর্থনীতি এক কঠিন সময় অতিক্রম করেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের চাপ, আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্যহীনতা, মুদ্রাস্ফীতি ও বিনিয়োগে স্থবিরতা এসব সমস্যা অনেকাংশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আরও ঘনীভূত হয়েছে। নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিরোধী দলগুলোর টানাপোড়েন ব্যবসায়ীদের মনে সংশয় সৃষ্টি করেছিল। তবে আজকের লন্ডন বৈঠকের পর আমরা আশাবাদী হয়ে উঠেছি।”
ইউনূস-তারেক বৈঠক: আস্থার বার্তা
গতকাল লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক ঘিরে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। বৈঠকে আলোচনার অন্যতম বিষয় ছিল আগামী জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে তার আয়োজন।
তাসকীন আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, “যেহেতু নির্বাচন এখনও আট-নয় মাস দূরে, তাই এই সময়টাতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজকের বৈঠকে নির্বাচনের একটি সময়সূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে আমরা জেনেছি, এবং এর ফলে রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি ইতিবাচক বার্তা গেছে। ব্যবসায়ীরা এই ইঙ্গিতকে স্বাগত জানায়।”
নির্বাচনের সময়সূচি ও সরকারের ভূমিকা
ডিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, “নির্বাচন আয়োজন করা ও তার সময় নির্ধারণ করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। তবে গণতন্ত্রের চর্চা এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে একটি সম্মিলিত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো উচিত। এতে শুধু রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাই নয়, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও ত্বরান্বিত হবে।”
তাসকীন আহমেদ মনে করেন, সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে স্বচ্ছতা ও সমঝোতা থাকলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও আস্থা ফিরে পাবে। “একটি অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচনই পারে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে,” বলেন তিনি।
ব্যবসায়ীদের অভিজ্ঞতা ও প্রত্যাশা
প্রতিবছর বাজেট পেশের আগে ব্যবসায়ী নেতারা রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে থাকেন। তবে ২০২৫ সালের বাজেট ঘোষণার পরপরই রাজনৈতিক অঙ্গনে এই বৈঠকের সংবাদ ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে। অনেকে বলছেন, আগাম নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা এবং তা নিয়ে রাজনৈতিক ঐক্য স্থাপিত হলে বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরবে, বিনিয়োগ বাড়বে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) একজন সিনিয়র সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের প্রতিযোগিতা অনেক কঠিন হয়ে গেছে। এর মধ্যেই যদি রাজনৈতিক সংকট থাকে, তাহলে আমাদের পণ্য রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় প্রয়োজন।”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাও দেশের নির্বাচন নিয়ে নজর রাখছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) সহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।
তাসকীন আহমেদ বলেন, “আমরা ব্যবসায়ী সমাজ বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সদিচ্ছা থাকলে সবকিছু সম্ভব। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন আয়োজন হলে দেশের অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াবে। আমরা এ সম্ভাবনার পথ দেখছি এবং সেজন্যই সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।”
উপসংহার
সার্বিকভাবে বলা যায়, নির্বাচনকে ঘিরে সমঝোতার বার্তা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ পরিস্থিতিতে এক ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী নেতারা। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলমান উত্তেজনার মাঝে লন্ডনে অনুষ্ঠিত এই আলোচনাকে তারা একটি আশাব্যঞ্জক ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন। ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা, এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের অর্থনীতি ফিরে পাবে কাঙ্ক্ষিত গতি ও স্থিতিশীলতা।