মার্কিন পণ্যের জন্য বাজার আরও উন্মুক্ত করতে প্রস্তুত ভিয়েতনাম

ভিয়েতনাম ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারণের লক্ষ্য নিয়ে ওয়াশিংটন ডিসিতে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসেন ভিয়েতনামের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী গুয়েন হং দিয়েন এবং মার্কিন সিনেটর রজার মার্শাল। বৈঠকে গুয়েন হং স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, মার্কিন পণ্যের জন্য ভিয়েতনাম তার বাজার আরও উন্মুক্ত করতে প্রস্তুত, সেই সঙ্গে কিছু খাতে অতিরিক্ত প্রণোদনা দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে।
এই বৈঠকটি এমন এক সময় অনুষ্ঠিত হলো যখন বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিরতার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো নিজেদের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করার উদ্যোগ নিচ্ছে। ভিয়েতনামের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বিত কৌশলগত অংশীদারত্বকে আরও সুদৃঢ় করতে ইচ্ছুক এবং পারস্পরিক স্বার্থে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সহযোগিতা সম্প্রসারণে আগ্রহী।
নৈতিকতা ও ভারসাম্যের ভিত্তিতে আলোচনা
গুয়েন হং জানান, তিনি ভিয়েতনামের পার্টির সাধারণ সম্পাদক তো লাম ও প্রধানমন্ত্রী ফাম মিন চিনের বার্তা সিনেটর মার্শালের কাছে হস্তান্তর করেছেন। বার্তায় উল্লেখ করা হয় যে, ভিয়েতনাম কৌশলগত অংশীদারত্বকে আরও জোরদার করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং উভয় দেশের জনগণের কল্যাণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে যৌথ প্রচেষ্টা চালাতে প্রস্তুত।
বাণিজ্য নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে ভিয়েতনাম তার নীতিগত অবস্থানে অটল রয়েছে। হং স্পষ্ট করেন, আলোচনা হবে একে অপরের সার্বভৌমত্ব ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের ভিত্তিতে। এতে উভয় দেশের মধ্যে স্বার্থের ভারসাম্য রক্ষা, স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি পালনের বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে।
সিনেটর মার্শালের ইতিবাচক সাড়া
মার্কিন সিনেটর রজার মার্শাল, যিনি রিপাবলিকান পার্টির অন্যতম প্রভাবশালী নেতা ও কানসাস অঙ্গরাজ্য থেকে নির্বাচিত, ভিয়েতনামের আন্তরিকতার প্রশংসা করেন। তিনি জানান, আলোচনার বিষয়টি দ্রুত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের কাছে তুলে ধরা হবে। মার্শাল আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, আলোচনা থেকে এমন একটি কাঠামো বেরিয়ে আসবে যা উভয় দেশের জন্যই ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, কানসাস অঙ্গরাজ্য কৃষি, মহাকাশ প্রযুক্তি এবং জীবপ্রযুক্তি খাতে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শক্তিশালী কেন্দ্র। এই খাতে ভিয়েতনামের সঙ্গে অংশীদারিত্ব যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিগত ও উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে। গুয়েন হং এই সম্ভাবনাগুলোকে সামনে রেখে মার্শালের সঙ্গে গভীর আলোচনা করেন।
বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে কৌশলগত বৈঠক
বৈঠকের দিনেই ভিয়েতনামের বাণিজ্যমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বিশ্ববিখ্যাত কোম্পানি, নাইকি ও ওয়ালমার্টের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন। এই দুটি কোম্পানিই ভিয়েতনামে বহু বছর ধরে ব্যাপক ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে এবং দেশটির অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
নাইকি’র সঙ্গে বৈঠকে গুয়েন হং প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীলতা ও দীর্ঘস্থায়ী উপস্থিতির প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে নাইকির বিশ্বব্যাপী উৎপাদিত জুতার প্রায় অর্ধেকই ভিয়েতনামে তৈরি হয়, যা সরাসরি ৪ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করছে। এই ধরনের বিনিয়োগ দেশের শ্রম বাজার এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করছে।
ওয়ালমার্টের সঙ্গে বৈঠকে ভিয়েতনামের পণ্যের প্রচারে কোম্পানিটির ভূমিকা তুলে ধরেন হং। তিনি বলেন, ওয়ালমার্ট বিশ্ববাজারে ভিয়েতনামের উচ্চমূল্যের ও পরিবেশবান্ধব পণ্য তুলে ধরার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। তিনি প্রস্তাব দেন, ওয়ালমার্ট যেন ভিয়েতনামে একটি কৌশলগত সোর্সিং হাব গড়ে তোলে, যাতে ভবিষ্যতে আরও বেশি পণ্য সরবরাহ করা যায়।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও আঞ্চলিক প্রভাব
ভিয়েতনামের এ ধরনের পদক্ষেপ কেবল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে সীমাবদ্ধ নয়, বরং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতায়ও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম উদীয়মান অর্থনীতি হিসেবে ভিয়েতনাম তার অবস্থান সুদৃঢ় করতে চাইছে। আমদানি-রপ্তানি বাজারে নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণে দেশটি ক্রমাগত সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিয়েতনামের এই উদারনীতি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করবে, যা বিদেশি কোম্পানিগুলোর জন্য আকর্ষণীয় হবে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য ও প্রতিযোগিতামূলক সরবরাহ চেইনের অংশীদার হতে পারে ভিয়েতনাম।
উপসংহার
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক অংশীদারত্ব জোরদারে ভিয়েতনামের সদিচ্ছা এবং বাস্তব পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করবে। এর ফলে মার্কিন পণ্য ও প্রযুক্তি ভিয়েতনামে আরও সহজে প্রবেশ করতে পারবে এবং ভিয়েতনামের রপ্তানিযোগ্য পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে আরও বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাবে। এই দ্বিমুখী সম্পর্ক শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নেই নয়, বরং কূটনৈতিক সম্পর্কেও নতুন মাত্রা যোগ করবে।