অর্থনীতি

চীন কেন আফ্রিকার ৫৩ দেশকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিতে চায়

আফ্রিকার ৫৩টি দেশের আমদানি পণ্যের ওপর বিদ্যমান শুল্ক তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে চীন সরকার। চীনের এই সিদ্ধান্ত প্রধানত তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকা দেশগুলোর জন্য প্রযোজ্য হবে। বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা বিষয়ক বৈঠকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রভাব বিস্তারের পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক আরোপের আশঙ্কা সামলাতে চীনের একটি কৌশলী পদক্ষেপ

চীনের আফ্রিকা নীতি: দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক

গত ১৫ বছর ধরে চীন আফ্রিকার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। ২০২৩ সালে আফ্রিকা থেকে চীনে রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ১৭০ বিলিয়ন ডলার, যা পূর্বের বছরগুলোর তুলনায় ব্যাপক বৃদ্ধি। চীন এই অঞ্চলের উন্নয়ন ও বাণিজ্যের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এই শুল্কমুক্ত সুবিধার মাধ্যমে চীন আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার চেষ্টা করছে।

২০১৯ সালে চীন ‘স্বল্পোন্নত দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত আফ্রিকার ৩৩টি দেশের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা ঘোষণা করেছিল। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, নাইজেরিয়া, মোরক্কোসহ আরও অনেক বড় অর্থনৈতিক অংশীদার।

শুল্কমুক্ত সুবিধার প্রভাব: বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে সুফল

চীনের এই শুল্কমুক্ত নীতির মাধ্যমে আফ্রিকার পণ্য চীনের বাজারে সহজে প্রবেশ করবে, যা স্থানীয় অর্থনীতি ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সহায়ক হবে। বিশেষ করে, আফ্রিকার কৃষি, খনিজ ও অন্যান্য কাঁচামালের রপ্তানি চীনে বৃদ্ধি পাবে। কঙ্গো ও গিনি থেকে প্রচুর পরিমাণে কাঁচামাল আমদানি করে চীন, যা তাদের শিল্পখাতের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

এই উদ্যোগ আফ্রিকার জন্য বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের নতুন দ্বার খুলবে এবং অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতির বিরুদ্ধে চীনের কূটনৈতিক চালাকি

অপরদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি আফ্রিকার কয়েকটি দেশের পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করেন। লেসোথোর পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর ৩০ শতাংশ এবং নাইজেরিয়ার ওপর ১৪ শতাংশ শুল্ক ধার্য হয়েছে। যদিও এই শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত রয়েছে, তবে এর ফলে আফ্রিকার পণ্যের মার্কিন বাজারে প্রবেশ সীমিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে চীনের শুল্কমুক্ত সুবিধা আফ্রিকার দেশগুলোর কাছে এক নতুন আশার আলো, যা মার্কিন শুল্ক নীতির বিরুদ্ধেও তাদের বাণিজ্যের বিকল্প পথ প্রদর্শন করবে।

এক চীন নীতি ও শুল্কমুক্ত সুবিধা: এসোয়াতিনি ছাড়া অন্যদের জন্য

চীনের এই সুবিধা নেওয়ার ক্ষেত্রে একটি শর্ত রয়েছে, সেটি হলো ‘এক চীন নীতি’ মানা। তাই এসোয়াতিনি দেশের পণ্য এই শুল্কমুক্ত সুবিধার বাইরে থাকবে, কারণ তারা তাইওয়ানকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। চীন এই নীতি কঠোরভাবে পালন করে এবং কূটনৈতিকভাবে শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে।

আফ্রিকা-চীন অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব: ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

বিশ্ববাজারে বাণিজ্য প্রতিযোগিতা তীব্র হওয়ায় চীন ও আফ্রিকার মধ্যকার সহযোগিতা নতুন মাত্রা পাচ্ছে। চীনের শুল্কমুক্ত নীতি আফ্রিকার দেশগুলোকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে নেবে। পাশাপাশি, চীন আফ্রিকার অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রযুক্তি বিনিয়োগ ও মানবসম্পদ উন্নয়নে আরও বড় বিনিয়োগ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

চীনের কৌশল ও আফ্রিকার সুযোগ

চীনের এই শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদান মূলত কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা আফ্রিকার অর্থনীতি ও বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনবে। যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপের মুখে চীনের এই উদ্যোগ আফ্রিকার দেশগুলোর জন্য একটি বিশাল সুফল এবং বিকল্প বাজার তৈরি করবে।

চীন-আফ্রিকা সম্পর্কের এই নতুন অধ্যায় আফ্রিকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button